কনুইয়ে ব্যথার চিকিৎসা কী?
কনুই ব্যথা বা টেনিস এলবো অনেকেরই হয়। এর আধুনিক চিকিৎসা এ দেশেই সম্ভব। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৭৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. কৃষ্ণ প্রিয় দাস। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : টেনিস এলবোর চিকিৎসা কী?
উত্তর : আমরা যেকোনো রোগের দুই ধরনের চিকিৎসা দিই। একটি হলো প্রতিরোধক, আরেকটি হলো প্রতিষেধক। প্রতিরোধ করতে পারলে আগে থেকেই ভালো। তবে একবার হয়ে গেলে কেন হচ্ছে, সেটা নির্ণয় করব। হয়তো বা যে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়, তার ব্যাডমিন্টনটি বড় হতে পারে। একে সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া বেশি ভারী যন্ত্রপাতি নিয়েও খেলাধুলা করলে এ সমস্যা হয়ে থাকে।
এ ছাড়া এর কিছু চিকিৎসা আছে, যেমন—আমরা কিছুদিন বিশ্রাম দিয়ে থাকি। এর পর এখানে একটি ব্রেস দিই, যাকে বলে টেনিস এলবো ব্রেস। এখানে কাপড়ের একটি ব্যান্ডের মতো। যে জায়গায় ব্যথা হয়, সেখানে নিচে কাভার করে রাখে। তখন পেশিটা একটু বিশ্রাম পায়।
তিন নম্বরে আমরা ব্যথার ওষুধ দিই। চার নম্বরে ওয়ার্ম থেরাপি বা ফিজিওথেরাপি দিই।
পাঁচ নম্বরে এখানে লোকাল স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্টেরয়েড ইনজেকশনের আগেই ৯৫ ভাগ লোক ভালো হয়ে যায়। যাদের ভালো না হয়, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সার্জারির প্রয়োজন পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন পড়ে।
প্রশ্ন : কোন কোন ক্ষেত্রে পড়ে?
উত্তর : সাধারণত যদি দেখা যায় যে অন্যান্য চিকিৎসা নেওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে ভালো হচ্ছে না, তার দৈনন্দিন জীবনযাপন, খেলার জীবনযাপন যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে ছয় মাস বা এক বছর কনজারভেটিভ চিকিৎসা দেওয়ার পর সার্জারির জন্য বলি।
প্রশ্ন : সার্জারি কীভাবে করে থাকেন?
উত্তর : দুই ধরনের সার্জারি করা হয়। একটি হলো ওপেন মেথড, যেটা কি না কেটে করা হয়। আরেকটি রয়েছে আর্থোস্কোপিক মেশিনের সাহায্যে। মূলত দুই সার্জারির ক্ষেত্রে ফলাফল খুব বেশি আলাদা নয়। তবে আর্থোস্কোপিক সার্জারির ক্ষেত্রে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই আমরা সাধারণ সার্জারি পদ্ধতিতেই আসতে বলি।
প্রশ্ন : ফিজিওথেরাপি এখানে কী ধরনের ভূমিকা পালন করে?
উত্তর : ফিজিওথেরাপির মধ্যে শর্ট ওয়েভ ডায়াথারমিটার বেশ ভালো কাজ করে। আমরা জানি, যেখানেই ভাঙে সেখানেই গড়ে। আমার উদ্দেশ্য ইন্সট্রুমেন্টাল মাইক্রোট্রমা সৃষ্টি করা। এখান থেকে রক্ত চলাচল বেড়ে আবার নিরাময় হয়ে যায়। এ ছাড়া আলট্রাসাউন্ড থেরাপি দেওয়া হয়। কিছু ব্যায়াম দেখানো হয়। যেই পেশিতে সমস্যা হয়, এটি শক্ত করার জন্য আমরা কিছু ব্যায়াম দিয়ে থাকি।
প্রশ্ন : কত দিন ধরে এই চিকিৎসা চলতে থাকে?
উত্তর : যদি প্রাথমিক অবস্থায় শুরু করা যায়, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ঠিক হয়। যেহেতু বারবার এটি হতে পারে, তাই ওই পেশার পরিবর্তন না হলে আবারও এটি হতে পারে।
প্রশ্ন : যারা ব্যায়ামের মধ্যে থাকে, তাদেরও যখন এই সমস্যা হয়, তাদেরও কি এই পরামর্শ থাকে?
উত্তর : তাদের ক্ষেত্রে আমরা দুই থেকে তিন সপ্তাহ বিশ্রাম দিই। ফিজিওথেরাপি তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ দিই। কারণ, একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়কে যদি বলি মোটেও খেলা করা যাবে না, সে কোনোরকমেই এটা মেনে নেবে না। সাময়িকভাবে হয়তো এই পেশিটা দুর্বল হয়ে যায়, তবে প্রদাহের চিকিৎসা করার পর, পেশিকে স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে তার শক্তিটা ফেরানোর চেষ্টা করি। এতে দেখা যায়, সমস্যা থেকে প্রতিকার পেয়ে সে তার কাজে ফিরতে পারে।