বন্ধ্যত্বের কারণ ও চিকিৎসা
বন্ধ্যত্ব অনেক দম্পতির ক্ষেত্রেই হতে দেখা যায়। তবে এর বেশ ভালো চিকিৎসা এখন এ দেশে করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৭৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফারজানা রহমান ডালিয়া। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ও অবস বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : বন্ধ্যত্ব বলতে কী বুঝি।
উত্তর : বন্ধ্যত্ব বলতে আমরা বুঝি যখন একজন দম্পতি বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে, নিয়মিত সহবাস করছে, তবে গর্ভধারণ করতে পারছে না, তখনই একে আমরা বলি যে বন্ধ্যত্ব।
প্রশ্ন : কারা বন্ধ্যত্বের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন?
উত্তর : আসলে দেখা যায় স্বামী স্ত্রী একসঙ্গেই থাকছেন, নিয়মিত প্রটেকশন (সুরক্ষা) ছাড়াই সহবাস করছেন, তবে গর্ভধারণ করতে পারছেন না, তখনই দেখা যায় তাঁরা বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান। আমরা তখনই খুঁজে বের করতে পারি কারা এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বলা যায় যে যাঁরা অনেক ধরনের রোগে ভুগে থাকেন, তার মধ্যে একটি হলো সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেট ডিজিজ- এই রোগটির যদি ভালো করে চিকিৎসা না হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে কিন্তু এই বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভুগতে পারেন। পুরুষ বা নারীদের একটু ভাগ করে নিতে হয়। নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথমেই অনেকের ভালো করে ডিম ফুটে না। মাসিকটি হয়তো নিয়মিত হচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে আমরা অনেককে বলি পলিসিসটিক ওভারিয়ান ডিজিজ হয়েছে অনেকের।
অনেক সময় ওজন বেশি হলেও দেখা যায় গর্ভধারণ হচ্ছে না। অনেকের হরমোনাল সমস্যা থাকতে পারে বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেরই বন্ধ্যত্বটা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কিছু সমস্যা আমরা আজকাল বেশি পাই, দেখা যায় ইনড্রোমেট্রোসিস। ইন্ড্রোমেট্রোসিস যদি হয়ে থাকে, চকলেট সিস্ট বলি, সে ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্ব হতে পারে।
প্রশ্ন : কী এগুলো। আপনি যে বলছেন এগুলো যদি আমাদের চিকিৎসকদের বুঝিয়ে বলেন।
উত্তর : এন্ড্রোমেট্রোসিস বা চকলেট সিস্ট যেটি, দেখা যায় আমাদের ইউট্রাসের ভেতরে যে লেয়ারটি রয়েছে, মাসিকের সময় হলে তো দেখা যায় রক্তপাতটি বাইরে দিয়ে হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এন্ড্রোমেট্রোসিস হলে ভেতরে ভেতরে টিউবের মধ্য দিয়ে রক্তপাত গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চকলেট সিস্ট করতে পারে। সেই রক্তপাতটি যদি ভেতরে হয়, ভেতরেই থেকে যায়, অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে টিউব ও জরায়ুর একটি সম্পর্ক, এর মধ্যে সুন্দর একটি সম্পর্ক থাকলেই বাচ্চাটা হবে। সেই ক্ষেত্রে দেখা যায় অ্যান্ড্রোমেট্রোসিসের কারণে বন্ধ্যত্ব হতে পারে। এগুলো তো গেল। এ ছাড়া অনেক সময় দেখা যায় জরায়ুতে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। জরায়ুর ভেতরে অনেক সময় জন্মগতভাবে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। সেই কারণগুলোও নারীদের হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: কী কারণে বন্ধ্যত্ব হয়েছে সেটি বোঝার উপায় কী?
উত্তর : বোঝা যাওয়ার আগে আমি একটু বলতে চাই, সাধারণত দেখা যায় বন্ধ্যত্ব হলে কিন্তু নারীদের দোষারোপ করা হয়। তবে এখন দেখা যায় বন্ধ্যত্বের জন্য যদি ৪০ ভাগ পুরুষদের দায়ী করা হলে, ৫০ ভাগ নারীরা। আর দেখা যায় যে ১০ ভাগ কোনো কারণ ছাড়া হয়ে থাকে।
পুরুষদের কিন্তু অনেক কারণ রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে প্রথমে আমাদের একটি পরীক্ষা করে নিতে হয়, পুরুষদের পরীক্ষাটা করে নিলেই সবচেয়ে ভালো। পুরুষদের পরীক্ষাটা খুব সহজ, একেবারেই সাশ্রয়ী মূল্যে করা যায়। আর নারীদের অনেকগুলো পরীক্ষা করতে হয়। পুরুষদের যদি বীর্য পরীক্ষা করতে বলে থাকি, এটা করলেই আমরা বুঝতে পারব পুরুষদের আর কোনো সমস্যা নেই। পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা অবশ্যই দিতে হবে। এরপর আসি নারীদের ক্ষেত্রে। নারীদের ক্ষেত্রে আমরা সহজ কিছু পরীক্ষা দিয়ে থাকি, প্রথমেই বলেছি যে হরমোনের সমস্যার জন্য হতে পারে। সে জন্য আমরা থাইরয়েড হরমোনের জন্য পরীক্ষা দিয়ে থাকতে পারি। আবার দেখা যায় যে দ্বিতীয় দিনে মাসিক অনিয়মিত হচ্ছে কেন, এ জন্য হরমোনাল কিছু পরীক্ষা দিয়ে থাকি। এ ছাড়া অনেক সময় এসটিডির কারণে হতে পারে। সেগুলো পরীক্ষা করে থাকি। আর একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে থাকি।
প্রশ্ন : পরীক্ষা করার পর কীভাবে আপনারা দম্পতিদের ব্যবস্থাপনা করেন?
উত্তর : দম্পতিদের ক্ষেত্রে যদি আমরা দেখি যে পুরুষদের ভালো ফলাফল এসেছে, কোনো সমস্যা নেই তার শুক্রাণুতে। সেই ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় নারীটির সঠিক সময়ে ডিমটি ফুটছে না, সেই ক্ষেত্রে আমরা ওষুধে চলে যাই। ওষুধ দিয়ে আমরা প্রথমে চেষ্টা করি। ওষুধে দেখা যায় খুবই ভালো কাজ করে।
প্রশ্ন : কতদিনের মধ্যে আপনারা বুঝতে পারেন যে ওষুধে কাজ হয়েছে? এর ফলাফল নিয়ে কখন আসে?
উত্তর : অনেকের কিন্তু একটি চক্র গেলেই দেখা যায় যে ফলাফল পেয়ে যায়। যদি দেখা যায় ছয়টি চক্রের মধ্যে যদি কোনোভাবে না হয়, সেই ক্ষেত্রে আমরা আরো কিছু পরীক্ষা দিয়ে থাকি। সেই পরীক্ষাগুলো হচ্ছে যে, নারীটির টিউবটা ঠিক আছে কি না। অনেক সময় টিউব বন্ধ থাকলে ওষুধে কাজ করে না। টিউব যদি আমরা খোলা পাই, চলে যাই আইওয়াই বলে আরেকটি পর্যায় আছে সেটাতে।
প্রশ্ন : টিউবটা যদি দেখেন বন্ধ রয়েছে, সেটি খোলার কী ব্যবস্থা রয়েছে।
উত্তর : একটি এক্সরে রয়েছে সেখানে যদি আমরা দেখি টিউবটি বন্ধ, সে ক্ষেত্রে ল্যাপারেস্কোপি করে থাকি। অনেক সময় দেখা যায় যাদের ভাগ্য ভালো থাকে তাদের পরীক্ষা করার সময়ই টিউবটি খুলে যায়। যদি হালকা ধরনের বন্ধ থাকে। যদি টিউবটি বন্ধ থাকে, সেই ক্ষেত্রে আসলে আর কিছু করার নেই। তখন টেস্ট টিউব বেবির জন্য পরামর্শ দিই।
প্রশ্ন : আর কোন কোন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আপনাদের রয়েছে?
উত্তর : যাদের টিউবটি খোলা রয়েছে তবে কোন কারণে বাচ্চা হচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে হয়তো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। মায়ের হয়তো জরায়ুমুখে কোনো সমস্যা রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে আমরা আইওয়াই যেটা করি, স্বামীর যে বীর্যটি রয়েছে, সেটি প্রক্রিয়া করে মায়ের যে জরায়ু রয়েছে, সেখানে প্রতিস্থাপন করে দিই। এই পর্যায়টিতেও আমরা চার থেকে ছয়টি চক্র করতে পারি। দেখা যায় ভালোই ফলাফল পাওয়া যায়। এর পরও যদি সেটা না হয়, তখন আমরা টেস্ট টিউবে চলে যাই।