জন্মগত হৃদরোগ কী?

জন্মগত হৃদরোগ অনেকেরই হয়ে থাকে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৭৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নূর আলম। বর্তমানে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কিছু হৃদরোগ মানুষ জন্মগতভাবেই বহন করতে পারে। সেগুলো কী কী?
উত্তর : সাধারণত বাচ্চা মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় যে হৃদরোগগুলো হয়, যেমন ধরুন হৃদযন্ত্রের মধ্যে বা হার্টের মধ্যে যে পর্দা রয়েছে, সেই পর্দায় ছিদ্র হতে পারে। আমরা একটিকে বলি ভিএসডি। আর ভাল্ভের কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে। অথবা হার্টের যে পেশি থাকে, সেগুলো জন্মগতভাবে মোটা হতে পারে। এ ছাড়া হার্টের বাইরে যে রক্তনালি সেখানেও জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে। এই ত্রুটিগুলোকেই হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি বলা হয়।
প্রশ্ন : কোন রোগগুলোর ক্ষেত্রে ছোটবেলায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দরকার হয়? কোনটা ধীরে করা যায়? আর কোনগুলো ধরা পড়ে না?
উত্তর : হৃদরোগজনিত যে জন্মগত ত্রুটিগুলো, গর্ভাবস্থায় যদি ত্রুটিটা মারাত্মক থাকে, হৃৎপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে, দেখা গেল একটি বা দুটি প্রকোষ্ঠ তৈরিই হলো না। সেই বাচ্চাগুলো সাধারণত জন্মের সময় বা তার আগেই খারাপ হয়ে যায়। জন্মের পরপরই মারা যায়। যেমন দেখা যায় যে রক্তনালি যে প্রকোষ্ঠে উঠবে, সে প্রকোষ্ঠ থেকে না উঠে উল্টোভাবে উঠেছে। এই বাচ্চারাও তার আগে বা জন্ম থেকেই খারাপ হয়ে যায়। কিছু রয়েছে যে তার মাত্রাটা অত তীব্র নয়। যেমন আমি একটু আগে বললাম পর্দার মধ্যে ছিদ্র থাকতে পারে, এএসডি যাকে বলি। ভ্যান্টিকুলার সেকটাল ডিফেক্ট। প্রকোষ্ঠের মধ্যে যে পর্দা রয়েছে এর মধ্যে যে ছিদ্র থাকে সেটিতে সমস্যা হয়। শিশু জন্মের পর বা শিশু কিছুদিন বেড়ে ওঠার পরপর হয়। অথবা দেখা যায় রোগটি নীরব থাকে বা তার প্রভাব অনেক সময় দেখা যায় না। বড় অবস্থায় ধরা পড়ে। হৃদযন্ত্রের ত্রুটি অনুযায়ী বিষয়টি ধরা হয়।
প্রশ্ন : এই যে বড় হলে অনেকটা ধরা পড়ে, সেটি ধরা পড়ে কীভাবে?
উত্তর : হঠাৎ করেও ধরা পড়তে পারে। লক্ষণও একসময় প্রকাশ পেতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে যেমন ধরেন অল্পতেই একটু হাঁপিয়ে যাবে। শ্বাসকষ্ট হতে পারে বা স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো তেমন কিছু হচ্ছে না। একটু পরিশ্রমের কাজ করতে গেলে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অথবা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা পালপিটিশন হতে পারে। অথবা কোনো কোনো সময়, রোগী হার্ট ফেইলিউর নিয়েও আসতে পারে। অথবা তীব্রতা যদি সেরকম হয় বড়দেরও অনেক সময় দেখা যায় কালো হয়ে যায়। জিহ্বা কালো হয়ে যায়, নখগুলো কালো হয়ে যায়। সেই লক্ষণ নিয়েও রোগীরা আসতে পারে।
প্রশ্ন: একজন মানুষের হয়তো জন্মগতভাবেই ত্রুটি ছিল, সেটি আগে বোঝা গেল না, বড় হওয়ার পর বোঝা গেল কেন?
উত্তর : সেটা নির্ভর করে তার ত্রুটির মাত্রা কেমন ছিল তার ওপর। ধরুন যেটি বললাম, পর্দার মধ্যে ছিদ্র। দেখা গিয়েছে সে হয়তো অন্য কোনো কারণে চিকিৎসকের কাছে যায়নি। ছিদ্র হলেও অন্য কোনো রোগ নিয়ে যদি চিকিৎসকের কাছে যায়, চিকিৎসক স্টেথোস্কোপ ঠেকালেই বুঝতে পারবেন। হয়তো বা সে অন্য কোনো রোগের কারণেও চিকিৎসকের কাছে যায়, ছিদ্রটা ছোট ছিল বলে তার প্রকাশটি হয়নি। যত দিন যাচ্ছে, ছোট ছিদ্র হলেও আস্তে আস্তে বয়স বাড়তে বাড়তে সমস্যা হতে পারে। একপর্যায়ে দেখা গিয়েছে তার সমস্যা হচ্ছে। এই অবস্থা হলে দেখা যায় ছোটবেলায় তার কোনো সমস্যা হয়নি, তবে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আর সমস্যা হচ্ছে। সে পরিশ্রমের কাজ করতে পারছে না। তখন সে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে, তখন শনাক্ত করতে পারছে।