জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা কী?
জন্মগত হৃদরোগের অনেক ভালো চিকিৎসা এখন আমাদের দেশেই রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৭৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নূর আলম। বর্তমানে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা কী?
উত্তর : চিকিৎসার তো কয়েকটি ভাগ রয়েছে। ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা। আর একটি রয়েছে যে অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা। এর মাঝামাঝি আধুনিক একটি যে চিকিৎসা প্রচলিত আছে, ডিভাইস ক্লোজারের মাধ্যমে। যেটা বললাম যে হৃৎপিণ্ডের পর্দার মধ্যে যদি ছিদ্র থাকে, ছিদ্রটি যদি ডিভাইসের মাধ্যমে বন্ধ করা যায়, কিছু প্যারামিটার রয়েছে, ছিদ্র যদি খুব বেশি বড় না হয় বা ছিদ্রের চারিদিকে যদি প্রাচীর থাকে, তাহলে ডিভাইস ক্লোজার করে, বন্ধ করা যায় বুক না কেটে। আবার দেখা যায় যে, সেগুলো ডিভাইস ক্লোজার বা বুক না কেটে অস্ত্রোপচার করার মতো অবস্থা নেই, সেই সব রোগীকে অস্ত্রোপচার করলে রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন : ডিভাইস ক্লোজার বিষয়টি কি আমাদের দেশে হচ্ছে?
উত্তর : রোগীকে ভর্তি করার তো অবশ্যই দরকার হয়। তবে রোগীকে অজ্ঞান করার দরকার হয় না। এটা একটা এনজিওগ্রামের মতোই একটি প্রসিডিওর। এনজিওগ্রাম করার সময় যেমন আমরা ছোট একটি পাংচার করে, রক্তনালিতে ছিদ্র করে, লোকাল এনেসথেসিয়ার মাধ্যমে রোগীকে অজ্ঞান না করে, আমরা যেমন এনজিওগ্রাম করি, ঠিক সেই রকমই এনজিওগ্রামের মতো রক্তনালির মধ্যে, সাধারণত পায়ের কাছের রক্তনালির মধ্যে একটি ছিদ্র করে ওখান দিয়ে একটি ডিভাইস নিয়ে ছিদ্র বরাবর শনাক্ত করে বসিয়ে দিলে এটা বন্ধ হয়ে গেল। এতে রোগীকে অজ্ঞান করতে হয় না। হয়তো রোগীকে তিন-চারদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। এটুকুই আরকি।
প্রশ্ন : হয়তো কারো ত্রুটি আছে। তবে সে কোনো সমস্যা বোধ করছে না। তাহলে কী করবেন। সে ক্ষেত্রে কী চিকিৎসা করবেন? না কি করবেন না?
উত্তর : আসলে এ বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বইপত্র ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এটাই বলেন যে, যদি ছিদ্র থাকে, যদিও তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তারপরও ছিদ্রটা বন্ধ করা উচিত। কারণ, অন্যান্য অনেক সমস্যার আশঙ্কা থেকে যায় ওই ছিদ্রের কারণে। স্ট্রোক থেকে শুরু করে, অন্যান্য অনেক সমস্যা হতে পারে। সে জন্য হচ্ছে না বলে চুপচাপ বসে থাকা উচিত হবে না। ছিদ্র বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
প্রশ্ন : জন্মগত হৃদরোগের ত্রুটি না হতে মায়েদের জন্য আপনার উপদেশ কী?
উত্তর : আমরা জানি যে গর্ভাবস্থায় মায়ের কিছু সংক্রমণের কারণে এ রকম হতে পারে। যেগুলো আমরা সহজে দূর করতে পারি। এগুলোকে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। আর কিছু জিনগত কারণ আছে। সব সময় তো সেটা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। সেটা আমাদের হাতে নেই। তবে যেটাই হোক না কেন এখন কিন্তু অ্যান্টিনেটাল চেকআপ যেটা, সেটাতে কিন্তু আল্ট্রাসনো করে গর্ভাবস্থায় শিশুর হৃদযন্ত্রের কোনো ত্রুটি আছে কি না, সেটা কিন্তু শনাক্ত করা যায়। এখন সেই শনাক্ত কারণের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা তো দেখেছি বিদেশে ওই সময় চিকিৎসা করে ওই সময় শনাক্ত করার ব্যবস্থা আছে। এখনো আমাদের সেভাবে চালু হয়নি, তবে শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। যদি গর্ভাবস্থায় শিশুর জন্মগত হৃদরোগের শনাক্ত করা যায়, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও হয়তো নেওয়া যাবে।