ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ কী?

ফ্যাটি লিভার মানে চর্বিযুক্ত লিভার। ফ্যাটি লিভার থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যা হতে পারে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৮৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফাওয়াজ হোসাইন শুভ। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটলি বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ফ্যাটি লিভারের শুরুর দিকে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অন্য কোনো রোগের কারণে যখন আলট্রাসনোগ্রাম দেওয়া হয়, তখন দেখা গেল লিভারে ফ্যাট জমেছে। তখ্ন আপনাদের কাছে আসে। যদি অন্য রোগের পাশাপাশি লক্ষণ প্রকাশ না পায়, তাহলে সাধারণত তো একটি পর্যায়ে লক্ষণ দেখা দেবে- সেটি কেমন?
উত্তর : ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে যখন জটিল সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে, তখন তার বিভিন্ন রকমের লিভারের সমস্যা থাকে। যেমন : লিভার অ্যানজাইমগুলোর মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে। সিরাম বিলুরিবিন অর্থাৎ জন্ডিস দেখা দিতে পারে। এই রোগী যদি সিরোটিক হয়ে থাকে, তাহলে লিভার সিরোসিসের যে জটিলতাগুলো আছে, সেগুলো হতে পারে। খুব জটিলতা হলে পেটে পানি চলে আসতে পারে। জন্ডিসের আকার ধারণ করতে পারে। এই সমস্যাগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগী পাচ্ছি।
দেখুন, আমাদের দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়ে গেছে। যদি কারো লিভার এনজাইম বেশি থাকে, সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় সে একজন লিভার বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছে। তখনই কিন্তু আমরা এর কারণগুলো দেখছি যে কেন লিভারের এনজাইমগুলো বাড়ছে। সে অনুসারে আমরা পরে পদক্ষেপ নিচ্ছি। অর্থাৎ লিভারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমরা সব দিক থেকে চেষ্টা করে থাকি।
প্রশ্ন : ফ্যাটি লিভার হলে এটি কমিয়ে রাখার জন্য জীবনযাপনের ধরনের পরিবর্তন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : দেখুন, যদি নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার নন অ্যালকোহলিক স্টেয়ারটোসিস হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে জীবনযাপনের ধরনের পরিবর্তন একটি বড় বিষয়। জীবনযাপনের ধরনের পরিবর্তন সে ক্ষেত্রে দরকার। এই ক্ষেত্রে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকি। কিছু কিছু শর্করা জাতীয় খাবার, চর্বিজাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করি। দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টা তাকে ব্যায়াম করতে বলি। যাদের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়, তাদের এক ঘণ্টা হাঁটতে বলি। এরপর স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, অ্যালকোহল বা অন্য কোনো নেশা যদি থাকে, সেখান থেকে সরে আসতে বলি। অনেকের দেখা যায় হরমোনের কিছু ভারসাম্যহীনতা থাকে। সেই ভারসাম্যহীনতা নিয়েও আমরা কাজ করে থাকি। জীবনযাপনের ধরনের পরিবর্তন এবং অসুখ হওয়ার কারণ-এই দুটোকে আমরা ধারাবাহিকভাবে ফোকাস করে কাজ করে থাকি। কেননা আমি আবারও বলছি ফ্যাটি লিভার বিষয়টিকে কিন্তু অনেকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। কারণ, এখন সময় একে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার। কারণ, এটি যদি গুরুত্বের সঙ্গে না নেওয়া হয়, তাহলে পরে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
প্রশ্ন : যেহেতু ফ্যাটি লিভারের কোনো লক্ষণ হয় না, তাই নিয়মিত চেকআপের জন্য কি কোনো পরামর্শ আছে?
উত্তর : আসলে সবাই খুব সচেতন হয়ে গেছে। সবাই নিজেদের ব্লাড সুগার, লিপিড প্রোফাইল, লিভার ফাংশন এবং আলট্রাসনোগ্রাম ছয় মাসে, এক বছরে নিয়মিত করাচ্ছে। ২৫ বছর বয়সের পর থেকে কিন্তু আমাদের এটি নিয়মিত করা দরকার। বেশি ওজন কিন্তু এর একটি বড় কারণ। মুটিয়ে যাওয়া শিশু, মুটিয়ে যাওয়া লোক তাদের এই চেকআপগুলো অবশ্যই করা দরকার। লিপিড প্রোফাইল সবারই নির্দিষ্ট সময় পরপর চেক করা দরকার। লিপিড প্রোফাইলে যদি অস্বাভাবিকতা থাকে, তাহলে ফ্যাটি লিভার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এটা কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আর এই নিয়মিত ফ্যাটি লিভারে যদি কারো ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে, তখনই যদি একজন লিভার বিশেষজ্ঞের কাছে আসে, তখন আমরা লিভারের সহজাত সমস্ত পরীক্ষা করি। এখন যেটি সবচেয়ে বেশি আসছে, আমরা ফাইব্রোস্ক্যান করে থাকি। ফাইব্রোস্ক্যান করে ফাইব্রোসিসের পরিমাণটি বের করি। আগে যেমন আমরা লিভার বায়োপসি করতাম, তবে এখন অনেকে পছন্দ করে না বলে ফাইব্রোস্ক্যান বলি। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে ফাইব্রোসিসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লিভারের যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে ফাইব্রোস্ক্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখন কিন্তু অন্যান্য অঙ্গের তুলনায়, লিভার নিয়ে দুশ্চিন্তা মানুষ বেশি করছে।