কোমর ব্যথার কারণ

কোমর ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৯১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. জাভেদ রশীদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : লো ব্যাক পেইন বা কোমর ব্যথাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
উত্তর : লো ব্যাক পেইন বলতে আমরা পিঠের নিচের অংশের ব্যথাকে কোমর ব্যথা বা মাজা ব্যথা বলি। লো ব্যাক পেইন সাধারণভাবে শরীরের নির্দিষ্ট অংশের ব্যথা। তবে এই ব্যথাটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথার কারণগুলো কী?
উত্তর : কোমর ব্যথার অসংখ্য কারণ রয়েছে। যে এলাকায় ব্যথা, সেখানের কারণেই ব্যথা হয়। আবার অন্য জায়গা থেকেও লো ব্যাক পেইন হতে পারে। যেমন উরু সন্ধির যদি কোনো ব্যথা থাকে, সেটাও পিঠের নিচে আমরা অনুভব করতে পারি। আমার হাঁটুতে যদি কোনো সমস্যা থাকে সেটিও কোমরে ব্যথা তৈরি করতে পারে। পিত্তথলিতে যদি কোনো ব্যথা থাকে, তাহলেও আমার কোমর ব্যথা হতে পারে।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথা কাদের বেশি হয়?
উত্তর : কোমর ব্যথা আসলে যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যিনি কোনো দিন কোমর ব্যথায় ভোগেননি। তবে সাধারণত সবচেয়ে বেশি যে কোমর ব্যথা দেখা দেয় সেটা মেকানিক্যাল। আপনি হয়তো দীর্ঘক্ষণ ঝুঁকে কাজ করছেন বা বাঁকাভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে আছেন, তারপর আপনি ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এই ধরনের ব্যথাই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এ ছাড়া দুটো বিশেষ বয়সে কিছু সমস্যার জন্য কোমর ব্যথা হয়। এটা সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মানুষের বেশি হয়। আরেক ধরনের ব্যথা হয়, যেটা পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের বেশি ব্যথা হয়। যেমন বয়স্ক মানুষরা অনেকেই অভিযোগ করেন, যে খানিকক্ষণ হাঁটার পর বা দাঁড়িয়ে থাকার পর পায়ের গোছায় ব্যথা করে। সেটি একটি ভিন্ন ধরনের ব্যথা। তবে সবগুলো কিন্তু লো ব্যাক পেইন হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথার লক্ষণগুলো কী?
উত্তর : কোমর ব্যথার সাধারণ লক্ষণ হলো পিঠের নিচে রোগী ব্যথা অনুভব করতে পারে। এই ব্যথাটা মধ্যম লাইনের ব্যথা হতে পারে এবং দুই পাশেও ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথার যদি সঠিক চিকিৎসা না হয়, আস্তে আস্তে রোগী বলেন আমার পৃষ্ঠদেশে ব্যথা করছে। উরুর পেছন দিকে ব্যথা করছে। উরুর নিচ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত চলে আসছে। রোগী হয়তো বলে উনি ভারী কোনো জিনিস তুলতে গিয়েছিলেন, এর পর থেকে এ রকম ব্যথা হচ্ছে।
এ ছাড়া স্পাইনাল স্পেনোসিসের রোগী, ১০-১৫ মিনিট পরে বলে যে আমি হাঁটতে পারি না। একটু কিছুক্ষণ বসলে ব্যথা কমে যায়। তবে আবার যখন হাঁটতে যান কিছুক্ষণ পর তার ব্যথা আসে। শুধু হাঁটা নয়, ১০-১৫ মিনিট যদি দাঁড়িয়ে থাকেন, তারপরও ব্যথা করে।
প্রশ্ন : রোগীরা যখন চেম্বারে আসে রোগ নির্ণয় কী কেবল লক্ষণ দেখে হচ্ছে? না কি আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়?
উত্তর : রোগী যখন চেম্বারে প্রবেশ করেন তখন রোগীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, তার কোনো সমস্যা আছে কি না। হয়তো দেখা যাবে রোগী তার পিঠকে অস্বাভাবিকভাবে শক্ত করে আসছেন। অথবা রোগী হয়তো একটু বাঁকাভাবে হাঁটছেন। কোমর ব্যথা হলে যাদের ডিস্কের সমস্যা আছে, তাদের শরীরটা একটু বাঁকিয়ে ফেলেন। এটা দেখে আমরা বুঝতে পারি ওনার কোমর ব্যথা রয়েছে। ইতিহাসটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
রোগী হয়তো বলেন আমার কোমর ব্যথা ছিল। কিছুদিন পর পায়ের দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়েছে। আবার জটিলতা হলে রোগী বলেন যে আমার পায়ে অবশতা হচ্ছে।
আরো বেশি জটিলতা যেটা যাকে খুব ভয় পাই, স্পাইনাল কর্ড যেই জায়গায় গিয়ে শেষ হয়েছে, এই এলাকায় অনেকগুলো স্নায়ুর রুটের উপস্থিতি থাকে। এই সমস্যা হলে রোগী দেখা যায় অনেক সময় প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মলদ্বারের আশে পাশে অবচেতন লাগছে। দুই পায়েই তীব্র ব্যথা, অবশতা। কখন ওনার প্রস্রাব পায়খানা হয়ে যাচ্ছে উনি বলতে পারেন না। এই রকম ক্ষেত্রে রোগীকে খুব জরুরি ভিত্তিতে সার্জারি করা লাগে। সার্জারির ফলাফল অনেক সময় আশাপ্রদ হয় না।