কোমর ব্যথার চিকিৎসা
কোমর ব্যথায় অনেকেই ভোগেন। আমাদের দেশে এখন কোমর ব্যথার ভালো চিকিৎসা রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৯১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. জাভেদ রশীদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথার চিকিৎসার কী সুযোগ রয়েছে?
উত্তর : কোমর ব্যথায় সাধারণত বেশির ভাগ মানুষেরই সাধারণত সার্জিক্যাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় না। ১০ থেকে ১৫ ভাগ লোকের সার্জিক্যাল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়। প্রাথমিকভাবে শুরুতে যদি সমস্যাটা নির্ণয় করা যায়, তাহলে বেশির ভাগ মানুষের কনজারভেটিভ ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট। সাধারণ অর্থে ওষুধ খেয়ে ভালো হয়ে যাওয়ার সমস্যা এটি নয়। যদিও দুঃখজনকভাবে সত্যি আমরা যেসব রোগীদের চেম্বারে দেখি, ওনারা বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসেন। এসে বলেন ওই চিকিৎসক আমাকে এই ওষুধ দিয়েছিলেন, আমি ওষুধ খেয়ে ভালোই ছিলাম। তবে ওষুধ ছেড়ে দিয়ে আর ভালো নেই। তখন আমরা আরেকটু গভীরে গিয়ে দেখি রোগীকে আর কোনো উপদেশ দেওয়া হয়েছিল কি না। হয়তো দেওয়া হয়েছিল, তবে রোগীরা হয়তো ভুলে গেছে। রোগীদের একটি ধারণা, ব্যথার ওষুধ খেলাম, চিকিৎসকের কাছে গেলাম, ভালো হয়ে যাব। এটা সত্যি নয়। রোগীকে ভালো থাকতে গেলে মোটা দাগে তিনটি কাজ করতে হবে। বাড়তি ওজন থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা, জীবনযাপনের পরিবর্তন করা, যে কাজ করলে শিরদাঁড়ায় চাপ পড়ছে সেই কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়া। কোমরের পেশি শক্ত করার জন্য ব্যথা যখন কমে আসবে ধীরে ধীরে ব্যায়াম করা। এতে তার উপকার হবে।
আমাদের রোগীরা অনেক সময় তাৎক্ষণিক ফলাফল চান। এই তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে কোনো জাদু কাজ করে না। আপনি যখন ক্রমাগতভাবে আট সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ ব্যায়াম করছেন এর উপকার পাবেন।
ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে আমরা ব্যথা কমিয়ে দিতে পারি। কিন্তু সমস্যার কার্যকারণকে যদি চিকিৎসা না করা যায়, তাহলে ব্যথা উপশম করে আপনি ভালো হবেন না।
প্রশ্ন : রোগ নির্ণয়ের জন্য যে পরীক্ষাগুলোর দরকার পড়ছে সেগুলো ঠিক আছে কি না?
উত্তর : কোমর ব্যথার সমস্যাগুলো নির্ণয় করার জন্য, যেসব চিকিৎসা প্রয়োজন সব পরীক্ষা বাংলাদেশে আছে। চিকিৎসা বাংলাদেশে আছে। কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন : সংক্ষেপে একটু চিকিৎসা পদ্ধতিটি বলুন।
উত্তর : চিকিৎসা তো কনজারভেটিভ। যখন রাইট ইনডিকেশন থাকবে তখন সার্জারি লাগবে। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমে রোগীর ইতিহাসের ওপর গুরুত্ব দিই। এরপর খুবই গুরুত্বপূর্ণ রোগীর রোগ নির্ণয় করা। দুঃখজনকভাবে সত্যি, আমাদের দেশে এই জিনিসটি করা হয় না। আমাদের দেশে রোগীর অনেক পরীক্ষা করে ফেলি তবে পুরোপুরি পরীক্ষা হয় না। রোগীর ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করে ফেলে। তখন ধারণাকে প্রমাণ করার জন্য কিছু পরীক্ষা হয়তো করি। মেকানিক্যাল যে কোমর ব্যথার এর জন্য রোগীকে পরীক্ষা করার কোনো প্রয়োজন নেই। রোগীকে বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়ার পর একটু ব্যথানাশক ওষুধ খেলে সমস্যাটা সেরে যায়। তবে বারবার হলে রোগীকে একটি এক্সরে দিতে পারি। রোগটি প্রাথমিকভাবে গুরুতর কি না সেটা ধরা পড়বে। এরপর আমরা কিছু রক্ত পরীক্ষা করতে পারি যে অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না। এর পর আরো কিছু জটিলতা থাকলে এমআরআই করার প্রয়োজন হতে পারে।