উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়

উচ্চ রক্তচাপ অনেকেরই হয়। নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশকে আক্রান্ত করতে পারে এটি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৯২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক এম তৌহিদুল হক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপ বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : আমাদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে শরীরে রক্ত চলাচল খুবই জরুরি বিষয়। রক্ত চলাচল কীভাবে করে? নির্দিষ্ট একটি চাপের ওপর নির্ভর করে রক্ত চলাচল করে। প্রশ্ন আসছে স্বাভাবিক রক্তচাপ কত? আর কখন আমরা একে উচ্চ রক্তচাপ বলব? শরীরের একটি মাত্রা আছে রক্তচাপের। সেই মাত্রাটি কত? এ মাত্রাকে বলতে গেলে দুই ভাগে করতে হয়। একটি উপরের মাত্রা একটি নিচের মাত্রা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে থাকি, সিস্টোলিক রক্তচাপ। ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। অনেক রোগী আমাদের কাছে এসে বলে, ‘স্যার আমার অনেক রক্তচাপ উঠেছিল’। ‘কত’? ‘২০০’। এভাবে তারা একটা মাত্রা বলে, কিন্তু দুটা বলে না। সব সময় আপনাকে মনে রাখতে হবে দুটো মাত্রা বলতে হবে। উপরে কত ছিল, নিচে কত ছিল। তাহলে মাত্রা নির্ণয় করা সুবিধা হবে। অনেকে এসে বলে আমার রক্তচাপ ১১০-৮০। আরেকজন বলল, স্যার আমার ১৩০-৭০। তাহলে প্রশ্ন আসবে কোনটি আসল রক্তচাপ? দুটোই স্বাভাবিক রক্তচাপ। তাহলে স্বাভাবিকের একটি মাত্রা আছে। ওপরের মাত্রা কত? নীচের মাত্রা কত? ১০০ থেকে ১৩০ বলে থাকি। নিচের মাত্রাটি ৬০ থেকে ৯০ বলে থাকি। তাহলে কেউ যদি এসে বলে ১২০-৮০। কেউ যদি এসে বলে ১০০-৭০ এটিও স্বাভাবিক। তাহলে ওপরের রক্তচাপ কত? ওপরেরটা যদি ১৩০ এর বেশি, মনে করেন ১৫০ হলো, ১৫০-১০০। তাহলে তিনি অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী?
উত্তর: প্রতিটি রোগের কিছু উপসর্গ আছে। এর লক্ষণ রোগী বলতে পারে। আবার অনেক সময় পারে না। সেই না পারার ভাষাকে আমরা বলি অ্যাসিমটোম্যাটিক। অর্থাৎ রোগী বলতে পারে না। কখনো যেকোনো কারণেই চিকিৎসক দেখাতে যাওয়ার সময়, এই রক্তচাপটি ধরা পড়ে। উচ্চ রক্তচাপকে আমরা বলে থাকি নীরব ঘাতক। সুতরাং রক্তচাপের মাত্রা আপনাকে জানতে হবে এবং এর চিকিৎসা নিতে হবে। এই নীরব ঘাতক ব্যাধিটি যে আপনাকে ক্ষতি করতে পারে সে জন্য আপনাকে আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। যেন ক্ষতি না করতে পারে। এখন লক্ষণগুলো কী হবে? অনেক সময় বলে খুব অস্বস্তি লাগে। কী অস্বস্তি? মাথা কেমন করে। মাথায় চক্কর আসে। মাথা ঘুরায়। চোখে ঝাপসা দেখি, ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে, মাথা ব্যথা হচ্ছে। অনেক সময় কেউ বলে বমি লাগে। কেউ বলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কেউ বলে পা ফুলে যায়। এগুলো সব হতে পারে। এগুলো উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবের কারণে হতে পারে। সুতরাং উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ অনেক জটিলতা নিয়ে আসে। কেউ রক্তচাপ বলতে পারছে না, হঠাৎ দেখা যায় দুর্বল হয়ে গেছে। রক্তচাপ কোথায় কোথায় আঘাত করতে পারে? নির্দিষ্ট অঙ্গে। মস্তিষ্ক, চোখ, হার্ট, কিডনি এই চার জায়গায় আক্রমণ করতে পারে। তাই আপনাকে উচ্চ রক্তচাপকে জানতে হবে। এর মাত্রা জানতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে—না হলে রোগী যেমন জটিলতায় পড়ে যাবে। চিকিৎসাও অনেক জটিল হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : উচ্চ রক্তচাপ কেন হয়?
উত্তর : দেখুন অনেক কারণ কিন্তু জানা যায় না। উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণটি আমরা জানি না, যেটা জানি সামান্য অংশ। ৯৫ ভাগ কারণ জানি না। মূল কারণটা আমরা খুঁজে পাই, কিডনির সমস্যা। কিডনির বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। অনেক সময় দেখি গর্ভাবস্থায় হচ্ছে। কেউ স্টেরয়েড খাচ্ছে, কেউ ড্রাগ খাচ্ছে। অনেক সময় কোয়াকটেশন দেখি। কোয়াকটেশন মানে হলো রক্তচলচলের যে নালি সেটি সরু হয়ে যায়। সুতরাং অজানা কারণই বেশি।