থাইরয়েডের যেসব সমস্যায় সার্জারি লাগে
থাইরয়েড গ্রন্থির বিভিন্ন রোগে অনেক সময় সার্জারির প্রয়োজন হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৯৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আবদুস সাত্তার। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক-কান-গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : থাইরয়েডের কী ধরনের সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসা দরকার?
উত্তর : থাইরয়েডের দুটো রোগের চিকিৎসা প্রধানত সার্জিক্যাল হয়ে থাকে। একটি হলো থাইরয়েড ক্যানসার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাল্টিনুডুলার গয়টার। মোদ্দাকথা এ দুটো। অন্যান্য কিছু আছে, থাইরয়েডাইটিসে কিছু অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।
আর এর কার্যকারিতা যদি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়ে যায়, তাকে আমরা হাইপারথাইরয়েডিজম বলি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমে যায়, তাকে আমরা হাইপোথাইরয়েডিজম বলি।
প্রশ্ন : যদি থাইরয়েড ক্যানসারে একজন আক্রান্ত হন, থাইরয়েড ক্যানসারের মধ্যেও তো ভালো-মন্দ রকমভেদ আছে। অস্ত্রোপচার যেটির ক্ষেত্রে করা হয়, এতে বেঁচে থাকার হার বাড়াতে কতটা সহযোগিতা করে?
উত্তর : থাইরয়েড ক্যানসার চার ধরনের—প্যাপিলারি ক্যানসার, ফলিকুলার ক্যানসার, মিডুলারি ক্যানসার ও এনাপ্লাস্টি ক্যানসার। যেটা প্যাপিলারি ক্যানসার, সেটা সর্বাধিক হয়ে থাকে। ৮০ ভাগের ক্ষেত্রে। সেটার ফলাফল খুবই ভালো। ধরে নেওয়া হয় যে প্রায় শতভাগ স্বাভাবিক জীবন, স্বাভাবিক জীবনে দীর্ঘতা, সব ঠিক থাকবে। ফলিকুলারের ফলাফল আরেকটু খারাপ। মিডুলারিতে আরেকটু খারাপ। এনাপ্লাস্টিতে খুব খারাপ। এনাপ্লাস্টিতে এক বছরের মধ্যে মারা যায়। এটায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা খুবই কম।
প্রশ্ন : এই থাইরয়েড গ্রন্থি ফেলে দিলে এর কাজ কীভাবে চলে?
উত্তর : এর একটি সুনির্দিষ্ট কাজ আছে। থাইরয়েড হরমোন উৎপন্ন করা। থাইরয়েড হরমোনের কাজ শরীরের সব অংশেই কিছু না কিছু প্রতিফলিত হয়। সেই কাজ স্থানান্তর করার জন্য আমরা থাইরয়েড হরমোন বাইরে থেকে দিয়ে থাকি। একজন মানুষের ১০০ মাইক্রোগ্রাম লাগতে পারে, ১৫০ মাইক্রোগ্রামও লাগতে পারে। টিএসএস নামক একটি হরমোনের মার্কার আছে, সেটি দেখে আমরা তার কতটুকু লাগবে, সেটি দিই। এটা মুখে খেতে হয়। পুরো থাইরয়েড গ্রন্থি ফেলে দেওয়া হয়। সারা জীবনই এই ওষুধ খেতে হয়।
থাইরয়েড ক্যানসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্যাপিলার ও ফলিকুলারের ক্ষেত্রে পুরাতন যে ধ্যানধারণা, সেটা পরিবর্তন হয়েছে।
আগের ধারণা ছিল, পুরো গ্রন্থিটা একবারেই আমরা ফেলে দেব। তাকে সারা জীবন থাইরক্সিন হরমোন খাওয়াব। সঙ্গে আমরা আরেক ধরনের চিকিৎসা আছে, রেডিও অ্যাকটিভ আয়োডিন বলে সেটি দেব।
বর্তমান ধারণা অনুযায়ী কিছু ধারণা আমাদের দেওয়া হয়েছে, আকারটি যদি ছোট হয়, যদি ছড়িয়ে না পড়ে, যদি এক গ্রন্থিতেই শুধু থাকে—তাকে বলা হচ্ছে পুরো থাইরয়েডটা না ফেলে, অর্ধেক অর্থাৎ হেমিথাইরয়েডেকটমি করার জন্য। এতে তার দুটো সুবিধা। আলাদা কোনো হরমোন বাইরে থেকে দেওয়া লাগছে না, যেটা আমরা সারা জীবন খাওয়াতাম। আরেকটি হলো থাইরয়েড গ্রন্থির পেছনে প্যারাথাইরয়েড নামে দুই জোড়া গ্রন্থি থাকে। যেই গ্রন্থির জন্য মানুষকে সারা জীবন ক্যালসিয়াম খেতে হয়। এটা কোনো কারণে অস্ত্রোপচারের সময় ক্ষতি হতে পারত। সেটি আমরা এড়িয়ে যেতে পারছি। পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের আরেকটি জটিলতা হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে, এক থেকে দুই ভাগ। সেটা হলো একটি নার্ভ থাকে, এটি আঘাত করলে বা কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, তার কণ্ঠস্বর বসে যায়। তার কণ্ঠস্বর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই জটিলতাগুলো আমরা এড়িয়ে যেতে পারছি।
এখানে আবার কতগুলো ঝুঁকি ভাগ করা আছে। যদি কম ঝুঁকির হয়, তাহলে ক্যানসার হলে যে পুরো থাইরয়েড গ্রন্থি ফেলে দিতে হবে, সেটার প্রয়োজন নেই। কম ঝুঁকির যদি হয়, অর্ধেক গ্রন্থি যদি হয়, তাহলেও তার পুরো জীবনধারণের ফলাফল অনেক ভালো হবে। দুটো তুলনা করে দেখা গেছে, একজন মানুষের কম ঝুঁকিগুলোর ক্ষেত্রে পুরো থাইরয়েড ফেলে দেওয়া বা অর্ধেক থাইরয়েড ফেলে দেওয়ার ফলাফল একই।