মুখের টিউমারের চিকিৎসা
মুখের টিউমার দুই ধরনের হয়। বিনাইন ও ম্যালিগনেন্ট। এর চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন হবে এ নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫০০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. সাইফুল আজম রনজু। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেম্যাস সার্জারি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : বিনাইন দিয়ে শুরু করি। কম ক্ষতিকরটি হলে রোগীর ক্ষেত্রে আপনাদের পরামর্শ কী থাকে? লক্ষণগুলোও একটু জানতে চাই।
উত্তর : হয়তো রোগীরা অনেকদিন পর আসে। তারা অপেক্ষা করে যে রোগটি ভালো হয়ে যায় কি না। প্রথম দিকে আসে আমার এই অংশটি ফোলা। যখন এটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ গঠনের ওপর চাপ দেয়, তখন ব্যথা শুরু হয়। তখন তাদের অভিযোগ থাকে আমার এত বছর ধরে এটি ফুলে আছে, ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। আবার কারো কারো অনেক সময় এত বড় টিউমার হয়ে যায় যে, চোখ ছোট হয়ে আসছে বা চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। তখন তাদের জন্য ঝুঁকির হয়ে আসে। ঠিক তখনই তারা হয়তো বা চিকিৎসকের কাছে আসে।
প্রশ্ন : এতদিন পর্যন্ত পুষে রেখে যখন ম্যালিগন্যান্ট টিউমার নিয়ে আসছে, তখন আপনারা পরামর্শ কী দেন।
উত্তর : ম্যালিগনেন্ট টিউমার বা বিনাইন টিউমার যেকোনো টিউমার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। যদি আমাদের কাছে আসে, চিকিৎসা যদি করা যায়, তাকে সারিয়ে তোলা যায়। আর ম্যালিগনেন্ট টিউমারের ক্ষেত্রে, যখন একদম এক্সটেনশনটা অনেক বেশি থাকে বা অনেক কিছু জড়িয়ে যায়, তখন আমরা তাকে সাধারণত সার্জারির পরামর্শ দিই না। সে ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দিয়ে থাকি। আর যদি প্রাথমিক পর্যায়ে আসে, সে ক্ষেত্রে সার্জারি হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ।
প্রশ্ন : সার্জারির সময় টিউমারকে সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি কি আপনাদের আরো কোনো উদ্দেশ্য থাকে?
উত্তর : প্রথমত যেহেতু এটি মুখ। এটি সবারই একটি দেখার বিষয় রয়েছে, সে ক্ষেত্রে যদি বিনাইন টিউমার হয়, মুখে যদি কোনো অসুবিধা থাকে বা মুখ যদি দেখতে ভালো না লাগে, আগের মতো না লাগে, রোগীদের তো অবশ্যই চাওয়া থাকে মুখ আগের মতো দেখানো। সে ক্ষেত্রে সেকেন্ড সার্জারি করে, মুখটা যাতে আগের মতো চলে আসে সেই চেষ্টা করি। সাধারণত সব সময় আগের মতো হয় না। যতটুকু সম্ভব তাকে ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করি। যাকে আমরা রিকনসট্রাকশন সার্জারি বলি।
প্রশ্ন : এই সার্জারিটি আপনারা কীভাবে করেন।
উত্তর : তার যদি চোয়াল কেটে ফেলা হয়, প্রথমে টিউমারটি পুরোপুরি ফেলতে হবে। সে ক্ষেত্রে চোয়াল অনেক সময় কাটা পড়ে যায়। বেশির ভাগ অংশটিই কাটা পড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আমরা কোমর থেকে হাড় নিয়ে, অনেক সময় পা থেকেও হাড় নিয়ে আমরা ওখানে প্রতিস্থাপন করি। আবার অনেক ধরনের রোগী থাকে যারা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে রিকনসট্রাকশন প্লেট বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়ে রিকনসট্রাকশন করে দিই।
প্রশ্ন : বাইরে থেকে যে স্ক্রু প্লেট ইত্যাদি বসাচ্ছেন, তাতে কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়?
উত্তর : সে ক্ষেত্রে আমরা চিন্তা করব তার মুখটা যতটা আগের মতো করে দেওয়া যায়। সে যাতে চিবিয়ে খেতে পারে। সেগুলো আমরা চিন্তা করি। এই দুটোই হলো প্রধানত। প্রথম হচ্ছে তার কাজ। এরপর হচ্ছে দেখা। তার মুখটি যাতে দেখতে আগের মতো লাগে।
প্রশ্ন : সার্জারি করার পর যেন পুনরায় সমস্যা না হয় এ জন্য আপনাদের পরামর্শ কী থাকে? ফলোআপের জন্য রোগী কখন আসবে?
উত্তর : একটি অস্ত্রোপচার করার পর তাদের প্রথম দুই সপ্তাহ পর, পরে এক মাস পর, এভাবে ছয় মাস এক বছর পরপর তাদের আমরা ফলোআপ করি। সে ক্ষেত্রে যদি পুনরায় সমস্যা হয়, তাহলে অল্পতেই যেন সার্জারি করে ঠিক করা যায়, সেদিকে খেয়াল রাখি। সে জন্য অবশ্যই আমাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখবে।
প্রশ্ন : বিনাইন টিউমারগুলোর চিকিৎসা কীভাবে করে থাকেন?
উত্তর : প্রথমে টিউমারটি কী ধরনের সেটি নির্ণয় করি। কিছু কিছু টিউমার আছে যার চিকিৎসা হয়তো আমরা সঙ্গে সঙ্গে করি না। কারণ কিছু বয়সের ওপরও নির্ভর করে। ২০-২২ বছরের কিছু টিউমার আছে যেগুলো হয়তো ৩০-৩২ বছরের পর থেমে যায়। তখন চিকিৎসাটি ৩০-৩২ বছর হলেই করে থাকি। আবার কিছু কিছু টিউমার তার এগ্রেসিভ হয়, আকার তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। সে ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চোয়াল থেকে বের করার চেষ্টা করি।