ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে রোগীর চিকিৎসা
ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৫০৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মহিউদ্দিন আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিসিন ও আইসিইউ বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন মানে কী? এর আওতায় কোন রোগীরা পড়েন?
উত্তর : চিকিৎসাশাস্ত্রের অনেক বিষয়ই আছে, তার মধ্যে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন মেডিসিনের একটি শাখা। আসলে মুমূর্ষু রোগীদের পরিচর্যার জন্য যে বিষয়গুলো ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনে মূলত ব্যবস্থা করা হয়। আসলে আমরা অনেক ক্ষেত্রে অনেকাংশে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউ, ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন জায়গায় পরিচিত। আমাদের রোগীরা যখন অসুস্থ হোন এবং অসুস্থতার একটা পর্যায়ে অনেক সময় দেখা যায়, মুমূর্ষু অবস্থায় চলে যান, তখন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের ভূমিকা নেওয়ার বিষয়গুলো চলে আসে। আরেকটি বিষয়—অনেক সময় রোগী প্রথমেই যখন জরুরি বিভাগে যায়, তখন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের যে অংশ, সেটি অনেক সময় শুরু হয়ে যায়। তার মানে আসলে ইমার্জেন্সি মেডিসিনও একটি বিষয়, যার সঙ্গে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন পাশাপাশি জড়িত। ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনটি আমাদের দেশে যদিও খুব বেশি দিনের নয়, কিন্তু সারা পৃথিবীতেই এটি আলাদা একটি বিষয় হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশেও এ বিষয়টির একটি একাডেমিকভাবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন হচ্ছে। অনেকে বের হচ্ছে। এই বিষয়গুলোতে যেন রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যায়, এ বিষয়ে অনেক উন্নত হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যখন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না, ক্রিটিক্যালই অসুস্থ হয়ে যায়, তখনই আসলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের ভূমিকা চলে আসে।
প্রশ্ন : একটু পরিষ্কার হয়ে নিই। আসলে ‘আইসিইউ’ শব্দটির সঙ্গে আমরা অনেকখানি পরিচিত। ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন এবং আইসিইউ—এ দুটোর সম্পর্ক কী?
উত্তর : ক্রিটিক্যালই জটিল রোগীদের আসলে ইনটেনসিভ কেয়ার দরকার হয়। মুমূর্ষু রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার দরকার হয়। এই নিবিড় পরিচর্যার বিষয়টি আসলে ইনটেনসিভ কেয়ার। আর যে জায়গায় নিবিড় পরিচর্যা দেওয়া হয়, সেটাই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের একটি অংশ।
প্রশ্ন : অর্থাৎ এখানে মুমূর্ষু রোগীদের মেডিসিন্যাল যে ব্যবস্থাপনা করা হয়, সেটিই হলো ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের অংশ। তাই কি?
উত্তর : হ্যাঁ, সঠিক।
প্রশ্ন : আইসিইউ বলতে সাধারণ অর্থে বুঝি ওখানে ইনটিউবিশন করার দরকার হয়, তার ভেন্টিলেশন দেওয়ার দরকার হয়, অনেক পর্যবেক্ষণ করার দরকার হয়। সেখানে একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আপনাদের উভয়ের ভূমিকা কী?
উত্তর : আসলে এখন ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন তো একটি আলাদা বিষয়। আগে দেখা যেত, অনেকেই অ্যানেসথেসিয়া বিষয়ে কাজ করার পর, আইসিওর অভিজ্ঞতা নিয়ে, আইসিইউতে কাজ করত বা ইন্টারনাল মেডিসিনের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে অনেকে আইসিইউতে কাজ করত। এখন আলাদা একটি বিষয় হিসেবে আমাদের দেশে এটি তৈরি হচ্ছে। তো, সে ক্ষেত্রে আসলে মুমূর্ষু রোগীদের যে বিষয়টি চিন্তা করা হয়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, বিশেষ করে মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে ফুসফুস কিংবা হৃৎপিণ্ড কিংবা কিডনি বিভিন্ন অঙ্গ যখন আক্রান্ত হয়, সেই রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার জন্য পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি যেমন থাকে আইসিইউতে, ঠিক সে রকম অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো যেমন স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না, তখন তাদের সাহায্য করতে হয়। যেমন : ফুসফুস যদি ঠিকমতো কাজ করতে না পারে, তখন ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়া হয়। ঠিক এ রকম অনেক সময় দেখা যায়, রক্তচাপ ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না। তখন রক্তচাপ ওঠানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়, কিডনি যদি কাজ করতে না পারে, অনেক সময় ডায়ালাইসিস দেওয়া হয়। এভাবে আলাদা আলাদা এক একটি অঙ্গ যখন কাজ করতে পারে না, আমরা অনেক সময় এই রোগীদের এইচডিও বলি। তবে যখন একের অধিক অঙ্গ কাজ করে না কিংবা শুধু যদি ফুসফুসও কাজ করতে না পারে, তখনো আমরা আইসিইউতে রোগীকে যত্ন নেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে বলি। এ ক্ষেত্রে আসলে আইসিইউতে নিবিড় পরিচর্যার পাশাপাশি যেটা অংশ হিসেবে ক্লোজ মনিটরিং করার জন্য অনেক ধরনের টিউব, লাইন বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র যেমন থাকে, এখানে একটি ডেডিকেটেড টিম থাকে। ডাক্তার, সিস্টার, নার্স, ব্রাদার্স—এদের একটি টিম থাকে, যারা কাজ করেন। কারণ, মুমূর্ষু রোগীদের অনেক সময় খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, কখনো ভালো হচ্ছে। নিবিড় পরিচর্যার অংশ হিসেবে ক্লোজ মনিটরিং যেমন লাগে, ওষুধপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রেও সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমবেশি করতে হয়। সে ক্ষেত্রে এটি একটি আলাদা বিষয় হিসেবে তৈরি হচ্ছে। এখানে যারা কাজ করছে, এখন কেউ মেডিসিন বিষয়ের ছিল, কেউ অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের ছিল। তবে এখন এটি আলাদা একটি বিষয় হিসেবে তৈরি হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে যদিও এখনো দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে এবং এর সঙ্গে বিভিন ধরনের কিছু খারাপ উপসর্গও যোগ হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারির বাইরেও অনেকে টাকা উপার্জনের জন্য আইসিইউ খুলে বসে আছে।
প্রশ্ন : আইসিইউতে যখন একজন রোগীকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়, তখন রোগীর লোক বা অ্যাটেনডেন্টরা অনেক অন্ধকারের ভেতরে থাকেন। তাদের বিশ্বাস করে ওখানে রোগীটি রাখতে হয়, আপনারা ভেতর থেকে যে খবর দেবেন সেই আস্থার ভিত্তিতে চলতে হয়। তারপরও অনেকের মধ্যে একটি সন্দেহ কাজ করে, যে ভেন্টিলেশন আদৌ প্রয়োজন আছে কি না বা নেই। আপনি একটু বলবেন কি একজন রোগীর আসলে ভেন্টিলেশন কখন দরকার? কতটা জরুরি?
উত্তর : ভেন্টিলেশন দেওয়ার বিষয়গুলোতে কিছু নির্দেশনা থাকে। যেমন তার যদি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায়, অনেক সময় দেখা যায় শ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন নেয়, কার্বন ডাইঅক্সাইড বের করে দিই, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রাটাও রক্তে খুব একটা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেকাংশে যদি বেশি হয়, অনেক সময় দেখা যায় ফুসফুসে শ্বাসনালিতে নল দিয়েও মেশিনের সহায়তা নিতে হয়। আসলে এই বিষয়গুলোতে আমরা যখন ভেন্টিলেশনের সহায়তা দিতে চাই রোগীকে, আমরা চেষ্টা করি সব সময় রোগীদের অভিভাবক বা রোগীদের অ্যাটেনডেন্ট যাঁরা থাকেন, তাঁদের বিষয়গুলো পরিষ্কার করার জন্য। আরেকটি বিষয় হলো অনেকাংশে অনেক রোগীই সুস্থ হয়ে চলে যায়। এই বিষয়গুলোতে আমাদের তথ্য পাওয়া ও দেওয়ার মধ্যে ফাঁক থেকে যায়।