পুড়ে যাওয়ার পর জটিলতা ও তার চিকিৎসা
পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসার পর আরো বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হতে পারে ভুক্তভোগীর। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫১৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফোয়ারা তাসমীম পামী। বর্তমানে তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : বিভিন্নভাবে মানুষ পুড়ে যেতে পারে। এই পুড়ে যাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বার্ন কোনগুলো? পরবর্তী জটিলতা কী হয়?
উত্তর : পুড়ে যাওয়ার মধ্যে গরম পানিতে পুড়ে যাওয়াটা তুলনামূলক ভালো। আগুনে পুড়ে যাওয়া যদি অনেক বেশি পোড়া হয়, এটার ঝুঁকি বেশি। তা ছাড়া ইলেকট্রিক বার্নের ঝুঁকি অনেক বেশি। আর কেমিক্যাল বার্ন, যেটা এসিড বা অ্যালকালি দিয়ে পুড়ছে, সেগুলো প্রথম থেকেই গভীর পোড়া হিসেবে হয়। তার জন্য ভালো হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী জটিলতাগুলোও এর বেশি থাকে।
প্রশ্ন : সাধারণত গভীর ক্ষত যদি হয়, সে ক্ষেত্রে হয়তো শুকিয়ে গেছে। শুকিয়ে যাওয়ার পরও তার কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : এক, হতে পারে শুকিয়ে গেছে, তবে তার পরবর্তীকালে যেহেতু গভীর ক্ষত, সে ক্ষেত্রে হাইপারট্রফিক স্কার কিংবা ছয় মাস পেরিয়ে গেলে একসময় উঁচু শক্ত এক ধরনের চামড়া তৈরি হতে পারে। অথবা যদি গাঁটকে আক্রান্ত করে এবং ঠিকমতো যদি সুন্দরভাবে জয়েন্টকে ঠিকমতো রাখা না হয়, সে ক্ষেত্রে কার্যগত সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা সার্জারিতে যেতে পারি।
প্রশ্ন : অনেকের আমরা দেখি, পুড়ে যাওয়ার পর তার হাতটা লেগে আছে। তার ঘাড়টা বাঁকা হয়ে আছে। এ ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে, পুড়ে যাওয়ার সময় ও পরে কী কী সতর্কতা নিতে হবে?
উত্তর : আমরা যে ড্রেসিং করব, ব্যান্ডেজ করব, এ ক্ষেত্রে অ্যানাটমিক্যাল অবস্থায় থাকলে যেভাবে লেগে যাবে না, সে বিষয়টি খেয়াল করা হবে। পরেও তাকে বলতে হবে একে ব্যায়াম করার জন্য। অনেকে এটা করেন না। ভাবেন যে চিকিৎসা শেষ, শেষ হয়ে গেল। প্রতিটি জয়েন্টে যাতে সঠিক নড়াচড়া হয়, দরকার হলে ফিজিওথেরাপির লোকজনের কাছ থেকে, ঠিক উপায়ে ব্যায়ামের পদ্ধতিগুলো জেনে নিতে হবে। তার পরও যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে সার্জারি তো থাকছে। সে ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সার্জারি করে ওই জয়েন্টগুলো ছুটিয়ে দিই। এ ক্ষেত্রে যে ফাঁকটি তৈরি হয়, এ ক্ষেত্রে চামড়া লাগাচ্ছি বা অন্য কিছু করছি।
প্রশ্ন : পুড়ে যাওয়ার পর দুটো বিষয়ে সমস্যা হয়। অ্যাসথেটিক বা সৌন্দর্যগত, আরেকটি হলো ফাংশনাল বা কার্যগত। মুখমণ্ডলের বেলায় অ্যাসথেটিক বিষয়টিতে আমরা বেশি সচেতন। সে ক্ষেত্রে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কী করা হয়, চোখটি যে নেই সে ক্ষেত্রে কী করা হয়?
উত্তর : চোখটা নেই, সে ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই অপথালমোলজিস্টের সঙ্গে বা যাঁরা এ বিষয়ে কাজ করেন, তাঁদের পরামর্শ নিই। আমরা নিজেরাও যেসব জায়গায় চোখ কনটাকচার হয়ে খোলা থাকছে, সেগুলো সার্জারি করে অনেকটা ভালো অবস্থায় নিয়ে যাই। যদি না থাকে, সে ক্ষেত্রে প্রোসথেটিক আই বা নকল চোখ বসিয়ে দিতে চাই।
প্রশ্ন : পুড়ে যাওয়ার পর আগের মতো ত্বক হয়ে যাবে, এটি কি সম্ভব?
উত্তর : একদম পুরোপুরি হয়তো সম্ভব নয়। তবে কিছু সার্জারি, কিছু লোশন, কিছু কিছু জিনিস আছে, যেটা আগের থেকে বিষয়টিকে ভালো করে দেবে।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে কি বারবার সার্জারির প্রয়োজন হবে?
উত্তর : যদি ঠোঁট উল্টে গেছে বা নিচে লেগে গেছে, এগুলো সার্জারি করে ভালো করা সম্ভব। চোখটা বসানো যেতে পারে। নাকের শেপটা ঠিক করা যেতে পারে। একদম হয়তো নষ্টই হয়ে গেছে, এ ক্ষেত্রে আমরা নাকের অন্য জায়গা থেকে টিস্যু এনে, চামড়া এনে নাককে একটি অবস্থায় রাখতে পারি।
প্রশ্ন : কার্যগত ক্ষেত্রে আমার হাতটা নাড়াব, ঘাড় নাড়াব আবার সুন্দরও থাকবে, সেটা কি সম্ভব?
উত্তর : এটা অনেকটা সম্ভব। একদম পুরো না হোক, অনেকটা সম্ভব। কিন্তু সবকিছুই সেটা যদি প্রাথমিকভাবে করা হয়, তাড়াতাড়ি যদি একে নির্ণয় করা যায়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আমরা ফলাফলটা ভালো পাব। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দুই বছরের মধ্যে যেমন হাতের সার্জারি করলে কার্যক্ষমতা সবচেয়ে ভালো হয়। এর পরে হলে এক ধরনের ফিক্স হয়ে যায়। নয়তো বিষয়টি জটিল হয়ে যায়। কার্যক্রমটা ভালো পাব না। হয়তো একটি সৌন্দর্যগত বিষয় থাকবে। তবে কার্যক্রমগত বিষয় পুরোটা দিতে পারব না।
প্রশ্ন : এ ক্ষেত্রে পোস্ট বার্ন রিহ্যাবিলিটেশন বলে একটি কথা আছে, যে পোড়া রোগীদের পুনর্বাসন। মানসিক ও শারীরিক। একটি আপনি বললেন ফিজিওথেরাপি, তার মানসিক অবস্থা যে খুব বিপর্যস্ত থাকে, সে ক্ষেত্রে কাদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে কী করণীয়?
উত্তর : সেখানে সাইকোথেরাপিস্ট আছে। উনারা সাহায্য করে থাকেন। তা ছাড়া আমাদের সমাজের প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে এ বিষয়ে। আমরা চিকিৎসকরা এ বিষয়ে তাদের সাহায্য করতে পারি। এবং পরিবার, আত্মীয়স্বজন, আশপাশের লোক সবাইকে তাদের এই মানসিক সাহায্য করতে হবে। যাদের কাছে তারা কাজ করছে, কিছু ত্রুটিসহও যাতে তারা ফিরে যেতে পারে, সে ধরনের পরিবেশ তাদের তৈরি করে দিতে হবে।