বন্ধ্যত্বের কারণ কী?
বন্ধ্যত্বের সমস্যায় অনেক দম্পতিই ভুগে থাকেন। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৩০তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালের ফার্টিলিটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : বন্ধ্যত্ব বলতে কী বুঝি।
উত্তর : যখন স্বামী ও স্ত্রী পাশাপাশি আছে, কাছাকাছি আছে, এক বছর ধরে কাছাকাছি আছে, এর পরেও তারা যদি গর্ভধারণ করতে না পারে, অর্থাৎ কোনো জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি গ্রহণ না করে তারা মেলামেশা করছে তবে গর্ভধারণ করতে পারছে না, তখন আমরা তাকে বন্ধ্য দম্পতি হিসেবে ধারণা করতে পারি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে বন্ধ্যত্বের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এটি কেন হচ্ছে?
উত্তর : আসলে উন্নত বিশ্বে আমরা যেটা দেখি যে তারা হয়তো ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করার জন্য খুব অ্যাম্বিশাস। বেশি বয়সে গিয়ে তারা পরিবার পরিকল্পনাটা করে। এখানে তারা বাচ্চা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়। এতে সেখানে অনেক বেশি দেখতে পাই আমরা।
বর্তমানে বাংলাদেশেও কিন্তু ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। আগে যেমন মানুষ ২০ বা ২৫ বছরে বিয়ে করত, এখন কিন্তু সেটি দেখা যায় না। এখন আস্তে আস্তে বয়স কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। এখন একটি মেয়ে যখন বিয়ে করতে যায়, সে বিয়ে করে ২৮-২৯ বছর বয়সে। একটি ছেলে যখন বিয়ে করতে যায় তখন ৩২/৩৩-এ করে। এর পাশাপাশি আমরা যে খাবার খাচ্ছি, তার মধ্যে ভেজাল। মাছ কিনতে যাচ্ছি ফরমালিন দেওয়া, প্রতিটি খাবারের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো যখন আমরা খাবার খাচ্ছি, তখন শরীরের ভেতর যাচ্ছে, এটি রক্তের সঙ্গে মিশে এক ধরনের বিষাক্ত জিনিস তৈরি করছে। এটি শুধু মাত্র বন্ধ্যত্ব নয়, ক্যানসারসহ অনেক জটিল রোগ তৈরি করছে।
প্রশ্ন : আর কোনো কারণ কি রয়েছে?
উত্তর : আমাদের ঢাকা শহরে দেড় কোটি মানুষ বাস করে। আমি ধরলাম, ৩০ লাখ কর্মজীবী রয়েছেন। এর মধ্যে ১০ লাখ কর্মজীবী হয়তো পরিবার নিয়ে আছে। কিন্তু বাকি ২০ লাখের ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী থাকছে ঢাকা শহরে, স্ত্রী থাকছে গ্রামে। তারা দেখা যাচ্ছে ছয় মাস পরপর বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, বিশাল একটি গ্যাপ হচ্ছে। পাঁচ বছরের মধ্যে কাছাকাছি থাকার সংখ্যা হচ্ছে কম। এর বাইরেও যেটি নারীরা কিন্তু মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় গর্ভধারণ করতে পারে। ঋতুস্রাবের ১২ থেকে ১৩তম দিনে সাধারণত ওভুলেশন হয়। ওই সময়টি যদি ওই স্ত্রী তার স্বামীর কাছে থাকে এবং তারা শারীরিক সম্পর্কে যায়, তাহলে শুধু গর্ভধারণ করার সম্ভাবনা থাকে। সে সময়টা হচ্ছে মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা। এর মধ্যে তারা যদি কাছাকাছি থাকতে না পারে, তাহলে কিন্তু গর্ভধারণ করার সুযোগ কম। কাজেই বছরের পর বছর স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি থাকছে তবে ওই সময় মেলামেশা করছে না তা হলে বন্ধ্য হিসেবে থেকে যাবে।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে তারা সাধারণত কী ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে?
উত্তর : রোগীরা যখন আমাদের কাছে আসে, অনেক বছর ধরে কাছাকাছি আছি অথবা নেই, গর্ভধারণ হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে প্রথমে আমরা যে জিনিসটি দেখতে চাই, তারা কি আসলেই কাছাকাছি ছিল কি না।
এরপর আসবে যদি মেলামেশা করে থাকে তাহলে শুক্রকিটের পরিমাণ কেমন? শুক্রকিটের গতি প্রকৃতি এবং তার গুণগত মান কেমন? সেটা কিছু পরীক্ষা করে আমরা বুঝতে পারব। এরপর যেটি আসবে স্ত্রীর ডিমের গুণগত মানটা কেমন? ঋতুস্রাব কি নিয়মিত হয়? যদি ঋতুস্রাব নিয়মিত না হয়, তাহলে ডিমটা নিস্মৃত হয় না। এতে এখানে গর্ভাবস্থা আসার কোনো সুযোগ নেই। অনেক সময় দেখা যায় ঋতুস্রাব নিয়মিত হচ্ছে, তবে অন্য কোথাও হয়তো সমস্যা আছে। সেভাবে আমরা একটি পর্যালোচনা করি। এর ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে কী করব? মূলত চারটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো কিছু পেতে গেলে যেমন ধরুন আমি যদি একটি ভালো চারাগাছ পেতে চাই, তাহলে বলব প্রথমত ভালো বীজ লাগবে, মাটি লাগবে, আমার পানি লাগবে, আমার পরিবেশটা লাগবে।
যে কোনো বংশবৃদ্ধির জন্য কিন্তু এই বিষয়গুলো লাগবে। এখন যদি মাটির কথা বলি, মানুষের ক্ষেত্রে মাটি হলো ইউটেরাস। বীজ হলো স্পাম এবং এগ। যদি পানি বলি, সেটি হলো বিভিন্ন পুষ্টি ও হরমোন। এবং যেই পরিবেশের কথা আমি বলেছি, পরিবেশ হলো জরায়ু, টিউব ও ডিম্বাশয়, তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক। অনেক সময় দেখা যায় জরায়ু ভালো আছে, কিন্তু ডিম্বাশয়ে দেখা যায় ডিম নেই। তাহলে গর্ভধারণ হবে না। হয়তো টিউবে পানি জমে আছে। টিউবের কাজ হলো ডিম্বাশয় যে ডিম পাঠাচ্ছে সেটি জরায়ুতে প্রেরণ করা। টিউবে যদি পানি থাকে ডিম্বাশয় থেকে ডিমটা স্বাভাবিকভাবে চলে আসবে। টিউব যদি ব্লক থাকে, তাহলে ডিম্বাশয় থেকে, ডিম জরায়ুতে আসার সুযোগ নেই। আর স্বামী-স্ত্রী যখন শারীরিক সম্পর্ক করছে স্পাম যাচ্ছে জরায়ুতে। আর ডিমটা রয়ে গেছে ডিম্বাশয়ে। সেখানে গর্ভাবস্থা আসার কোনো সুযোগ থাকছে না।