অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় প্রতিরোধে করণীয়

‘হাড়কে ভালোবাসুন, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস-২০১৬ পালিত হচ্ছে।
অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক। হাড়ের ক্ষয়রোগ মানবদেহের বিভিন্ন হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর করে। শরীরে সব সময় ব্যথার অনুভূতি বাড়িয়ে স্বাভাবিক হাঁটাচলা, কাজকর্ম বিঘ্ন ঘটিয়ে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২০ কোটি নারী-পুরুষ হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত। তাই নীরব ঘাতক এই রোগ হতে বিশ্ববাসীকে বাঁচাতে জনসচেতনতার উদ্দেশ্যে ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস পালিত হয়।
অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ কেন হয়
হাড় গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ৪০ বছর বয়সের আগে হাড়ের বৃদ্ধি বেশি হয় আর ক্ষয় কম হয়। এর পর থেকে হাড়ের ক্ষয় বেশি হয়, বৃদ্ধি কম হয়। হাড়ক্ষয় নির্ভর করে আপনার ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে হাড়ের ঘনত্বের সঙ্গে সঙ্গে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন ফাইবারের উপস্থিতি কেমন। তাই অল্প বয়সে স্বাস্থ্যসম্মত হাড়ের ঘনত্বের সঙ্গে পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম, ফসফেট, কোলাজেন বুড়ো বয়সে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এ ছাড়া যেসব কারণে অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ হয় :
১. মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের ঝুঁকি বেশি;
২. যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না;
৩. উচ্চতা অনুসারে যাঁদের ওজন কম;
৪. যাঁরা নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খান না;
৫. ধূমপায়ী ও মদ্যপানকারীরা;
৬. ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে;
৭. থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেশি হলে;
৮. এই রোগের পারিবারিক ইতিহাসের ঝুঁকি বেশি;
৯. বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া;
১০. ডায়াবেটিক, লিভার, কিডনি রোগে হাড়ের ক্ষয় রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
প্রতিরোধ
অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক, যার জন্য প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার উত্তম।
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন : নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের শক্তি বাড়ে। এতে হাড়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে জয়েন্টগুলো সচল রাখে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাড়ক্ষয় কমায়।
২. নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার খান :
হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খান।
ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। কারণ, এতে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি করে।
৪. ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫. হাড় ভাঙা রোধে বাথরুমে পিচ্ছিল ভাব দূর করুন।
৬. রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখুন। অন্ধকারে চলাফেরা করবেন না।
৭. অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না।
অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক। হাড়ের ক্ষয়রোগ, তাই এই রোগের প্রতিরোধে চাই আগে থেকেই সচেতনতা, যত্ন, জীবনের শৃঙ্খলা।