লিভারের রোগে কখন সার্জিক্যাল চিকিৎসা করা হয়?

লিভারের বিভিন্ন রোগে এখন সার্জারি করা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৩৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. বিধান সি দাস। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : লিভারের কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসাকে আপনারা গুরুত্ব দেন?
উত্তর : দুটো বিষয়ের ক্ষেত্রে সার্জারি করে থাকি। লিভারের নন-ক্যানসারাস কিছু অবস্থা আছে। আরেকটি হলো ক্যানসারাস অবস্থা। যেকোনো কারণে যদি লিভারে পানি জমে, সিস্ট বলা হয়। সেটা যদি খুব বড় হয়, কোনো চাপ প্রয়োগ করে, আশপাশের অঙ্গকে বাধা দেয়, ব্যথা হয়। তাহলে আমরা অস্ত্রোপচার করতে পারি। আরেকটি হলো প্যারাসাইটিক ইনফেকশন। সেগুলো অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসা করতে হয়। কিছু কিছু লিভারে পাথর হতে পারে। জন্মগত সমস্যা থাকার কারণে লিভারের নালিতে পাথর হতে পারে। সেগুলোতে লিভারের সার্জারির মাধ্যমে এগুলো অপসারণ করা হয়। কিছু কিছু লিভারে পাথর হতে পারে। লিভারের ভেতরে পাথর। জন্মগত সমস্যা থাকার কারণে লিভারের নালির ওখানে পাথর হতে পারে। লিভারের সার্জারির মাধ্যমে সেগুলো অপসারণ করা হয়। কিছু ক্যানসারজনিত সমস্যা আছে, যেগুলোকে আমরা বলি প্রাইমারি লিভার ক্যানসার। লিভারের মধ্যেই ক্যানসার হবে। যেমন পাকস্থলীর ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, এগুলো লিভারের মধ্যে এসে জমা হতে পারে। সেখানেও ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে।
প্রশ্ন : রোগীরা সাধারণত কী ধরনের সমস্যা নিয়ে আপনাদের কাছে আসে?
উত্তর : লিভার রোগের ক্যানসার যদি আমি বলি, আসলে প্রথম দিকে তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। কোনো লক্ষণ থাকে না। অনেক সময় রোগী যদি অন্য কোনো কারণে পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করল, সে ক্ষেত্রে লিভারে ছোটখাটো স্পট নিয়ে আসতে পারে। সেটাও একটা টিউমার নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আসতে পারে। প্রথম কথা হলো, প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ ওদের থাকে না। আর দ্বিতীয় কথা হলো, অন্য কোনো কারণে যদি পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়, তাহলে ধরা পড়ে। আর যখন উপসর্গ নিয়ে আসে, তখন এটা অনেক বেড়ে যায়। যেমন : পেটের ব্যথা নিয়ে আসতে পারে। ক্ষুধামান্দ্য, স্বাস্থ্যহানি কমে যাওয়া, পেটে পানি চলে আসা, জন্ডিস হওয়া। এগুলো লক্ষণ হতে পারে।
প্রশ্ন : কোন রোগীর ক্ষেত্রে আপনারা লিভার রোগের সার্জারির দিকে এগিয়ে যান?
উত্তর : যদি ছোট একটা টিউমার থাকে বা দুই-তিনটা টিউমার থাকে। স্বাভাবিক লিভারের যদি দুই-তৃতীয়াংশের মতো কেটে দিই, এটা দিয়ে জীবনযাপন সম্ভব। দেড় মাস থেকে দুই মাসের মধ্যে সেটি বড় হয়ে যায়।
তবে যদি লিভার সিরোসিস বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে, সে ক্ষেত্রে হয়তো এত বড় অস্ত্রোপচার করা যাবে না। তখন আমরা লিভারের ছোট অংশ কেটে নিয়ে এলাম। অথবা অন্যান্য আধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে টিউমারকে পুড়িয়ে দিলাম। এটা প্রাথমিক।
প্রাথমিক অবস্থায় যদি আসে, তাহলে সেগুলো অস্ত্রোপচার করা সম্ভব। আরেকটি হলো যে আমরা সম্পূর্ণ লিভারকে কেটে ফেলতে পারি। ফেলে একে আরেকটি নতুন লিভার দিয়ে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে পারি। লিভার সিরোসিস যদি হয়, বিশেষ করে বি ভাইরাস, সি ভাইরাস দিয়ে, এগুলো ক্রনিক লিভারের রোগ। আবার অনেক সময় অ্যালকোহলের কারণে যদি হয়, যদি আর কোনো প্রতিকার না করা যায়, তখন লিভারকে তুলে ফেলতে হবে। বিভিন্ন উৎস থেকে লিভার পাওয়া যায়, মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে হতে পারে, সঙ্গে সঙ্গে এনে যদি লাগিয়ে দিতে পারি, তাহলে এভাবেও সম্ভব।