হঠাৎ চোখ থেকে পানি পড়ে কেন?

হঠাৎ চোখ থেকে পানি পড়ার সমস্যা অনেকেরই দেখা যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৩৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. কিউ এম ইকবাল। বর্তমানে তিনি বিআইএইচএস হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : হঠাৎ চোখ থেকে পানি পড়ার সমস্যা কেন হয়? কোন বয়সে এই রোগটি বেশি পেয়ে থাকেন?
উত্তর : আসলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। বয়সভেদে দুই সময়ে এই রোগটি বেশি পেয়ে থাকি। একটি হলো নবজাতক। নতুন ছোট বাচ্চাদের চোখ থেকে পানি পড়া।
আর একটি হচ্ছে মধ্য বয়স বা তার পরে। সুস্বাস্থ্যের জন্যই চোখে স্বাভাবিকভাবে কিছু পানি তৈরি হয়। এই অশ্রু চোখের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটা শুকিয়ে গেলে যেমন চোখের কর্ণিয়ায় ঘা হতে পারে, তেমনি এটি যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তৈরি হয়, অথবা চোখ থেকে নাকে চলাচলের একটি রাস্তা আছে, সেই রাস্তা যদি সমস্যা হয়, আমাদের চোখে একটি পরিমাণ পানি আছে, সেই পানি যদি নাকে গিয়ে শুকিয়ে যায়, অন্য রাস্তায় চলে যায় সমস্যা হয়। জন্মের পর পর চোখের পানি খুব কম হয়, প্রায় হয়ই না। কয়েকদিনের মধ্যে ছোটো শিশুর চোখের পানি তৈরি হওয়া শুরু করে দেয়, দেখা যায় একজন মা শিশুকে নিয়ে এসে বলে, আমার বাচ্চার বয়স সাতদিন, তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, কেতর হচ্ছে,এই সময় এটা হয়, চোখ থেকে নাকে পানি চলাচলের শেষ প্রান্তটা বন্ধ থাকে অনেক সময়। যেটা অনেক সময় নিজে নিজেই খুলে যায়, তবে খোলার আগ পর্যন্ত অতিরিক্ত পানিটা চোখ থেকে বেয়ে পড়তে থাকে। এটার চিকিৎসা আছে। আরেকটি সময় আমরা এটা পেয়ে থাকি, মধ্য বয়স বা তার পরে।
প্রশ্ন : মধ্য বয়সে রোগীদের এ বিষয়ে লক্ষণ কেমন হয়ে থাকে?
উত্তর : এই ক্ষেত্রে রোগীদের প্রথমদিকে অল্প পানি পড়ে, মুছতে থাকে। বয়স্ক রোগীদের নেত্রনালি বন্ধ থাকলে আস্তে আস্তে সেই পানিতে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। তাতে করে ওখানে সংক্রমণ হতে পারে। ফুলে যায়, পেকে যায়, চোখের কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চোখের কোণায় দেখা যায় অনেক সময় পেকে গিয়ে ফোঁড়া হলো। কর্ণিয়ায় ঘা হয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন : এই সমস্যায় রোগীরা কী শুধু পানি পড়া নিয়েই আসছে, না কি আরো কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে?
উত্তর : চোখ দিয়ে পানি পড়া দৃষ্টিঘাতী রোগের প্রথম লক্ষণ। সেটা হলো গ্লুকোমা। যদিও এটা কম। ১০ হাজার বাচ্চার মধ্যে এক জনের হয়। নবজাতকের গ্লুকোমায় কিন্তু চোখ থেকে পানি পড়ে। এসব ক্ষেত্রে আলসেমী না করে দ্রুত চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
আর মধ্য বয়স কিংবা তার পর চোখে পানি পড়া, সেই ক্ষেত্রে আমরা যাতে যত্নবান না হই সেক্ষেত্রে যেই জটিলতা তৈরি হতে পারে। ছানি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও দেখতে হবে চোখের নেত্রনালি বন্ধ আছে কি না। আগে যদি কারো নেত্রনালি বন্ধ থাকে তাহলে সেটি অস্ত্রোপচার করে চালু করে নিতে হবে।
প্রশ্ন : চোখ দিয়ে পানি পড়া রোগে চিকিৎসার কী কী সুযোগ রয়েছে?
উত্তর : সারা দেশেই চোখের ভালো বিশেষজ্ঞ আছেন। এই চিকিৎসাটা খুব ভালো ও ব্যয়বহুলও নয়। চোখের নেত্রনালি অস্ত্রোপচার কেটে করতে হয়। আরেকটি অস্ত্রোপচার লেজার দিয়ে করা হয় সেটিও চালু হয়ে গেছে। রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোতে করা হচ্ছে। আর চোখের নেত্রনালি কেটে যে নতুন করে রাস্তা বানিয়ে দেওয়া হয়, এটাও খুব নিরাপদ একটা অস্ত্রোপচার।
প্রশ্ন : এই সমস্যা চিকিৎসা না করা হলে কী জটিলতা হয়?
উত্তর : আসলে এখানে তো সংক্রমণের উৎস থেকে যাচ্ছে। চোখ থেকে নাকে পানি যাওয়ার যে রাস্তা সেটাতে রোগ জীবাণু বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ থেকে সামান্য কারণে চোখের কর্ণিয়ায় ঘা হয়ে যায়। সেখান থেকে চোখটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে গেলে এটা দৃষ্টিঘাতী সমস্যা তৈরি করে। এই জন্য চোখে পানি পড়াকে হেলা করা উচিত নয়।
প্রশ্ন : নবজাতকের ক্ষেত্রে যেই ক্ষেত্রে নেত্রনালি খুলে যাচ্ছে না, সেই ক্ষেত্রে করণীয় কী ?
উত্তর : আসলে আমরা নেত্রনালি খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করব না। খুব সহজেই চোখের কোণায় একটি ম্যাসাজ করা হয়। আমরা মাকে বা বাবাকে দেখিয়ে দেই, কীভাবে ম্যাসাজটা করতে হবে। একটি খুব পাতলা মেমব্রেন চোখের ও নাকের মাঝামাঝে জায়গাটায়, নেত্রনালির শেষ প্রান্তে পাতলা একটি মেমব্রেন থাকে, সে খুলে নাই বলে পানি পড়ছে। নাকের গোড়ায়, চোখের কোনায়, আঙ্গুলের মাথা দিয়ে যদি একটু ম্যাসাজ করা হলে চোখের ভেতর চাপ বেড়ে যায়।এমনিতেই নালিটি খুলে যায়। যে ক্ষেত্রে খোলে না সেই ক্ষেত্রে সার্জারি করি।