কোমর ব্যথায় কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

জীবনে কখনো কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৫৪৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শামিম আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথায় কারা বেশি আক্রান্ত হয়?
উত্তর : আসলে ৯০ ভাগ লোক জীবনে কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়। যারা কর্মক্ষম, তাদের মধ্যে দেখা যায় ৫০ ভাগ লোক প্রতিবছর কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়। পুরুষ ও নারী দুজনেরই সমানভাবে হতে পারে। ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এমনি এমনি ভালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথার ধরনগুলো কী কী?
উত্তর : ৭০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে, যারা কোমর ব্যথা নিয়ে আসে, সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। কারণ বিভিন্ন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাজের সময় ভুল অঙ্গবিন্যাসের কারণে কোমর ব্যথা বেশি হয়। একে আমরা বলি মাসল স্পিন। ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এটি হয়।
এ ছাড়া অন্যান্য কারণ যেগুলো আছে, সেগুলো হলো ডিস্কোজেনারেটিভ চেইঞ্জ। অস্টিওআর্থ্রাইটিস, কোনো সংক্রমণের কারণে হতে পারে। অনেক সময় বাতের কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় ক্যানসারের কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে। এগুলোর ভাগ অনেক কম। ৭০ ভাগ লোকেরই কোমর ব্যথার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন : কোমর ব্যথা হলে কোন সময় চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
উত্তর : যখন ব্যথা হবে, তখনই আসলে আসা উচিত। কারণ, আমরা একে তিনটি ভাগে ভাগ করি, সময় অনুসারে। যদি চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে নিয়ে আসে, তখন আমরা বলি একিউট লো ব্যাকপেইন। এর পর ছয় সপ্তাহের বেশি বা তিন মাসের কম হলে সাবিকো, যখন তিন মাসের বেশি হয়ে যায় তখন একে বলি ক্রনিক লো ব্যাকপেইন। একিউট লো ব্যাকপেইনে আমরা রোগীকে বলব কিছু ব্যথার ওষুধ খাওয়ার জন্য। দরকার হলে বিশ্রাম নিতে হবে। চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে অন্য কোনো চিকিৎসা ছাড়াই কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। ক্রনিক লো ব্যাকপেইন যদি নিয়ে আসে, তখন সেই রোগীর ক্ষেত্রে দেখতে হয় অন্য কোনো কারণ আছে কি না। একিউট লো ব্যাকপেইনের ক্ষেত্রে আমরা দেখি কোনো জটিল চিহ্ন রয়েছে কি না। যেমন কোনো একজন রোগীর বয়স যদি পনেরোর কম হয়, পঞ্চাশের বেশি হয়, কোমর ব্যথা আছে, তার সঙ্গে জ্বর আছে বা অন্যান্য সমস্যা আছে, এগুলোকে আমরা বলি জটিল চিহ্ন। অথবা কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা হলো, কোনো সড়ক দুর্ঘটনা হলো, সেসব রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার হয়।
প্রশ্ন : পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে আপনারা কী কী করে থাকেন?
উত্তর : একিউট কোমর ব্যথার ক্ষেত্রে জটিল কোনো চিহ্ন না থাকলে কোমর ব্যথার কোনো প্রয়োজন হয় না। যদি চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রোগীর ব্যথা ভালো না হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত রোগীর অবস্থা বুঝে, একটি এক্স-রে করি অথবা কোনো একটি রক্ত পরীক্ষা করি। খুব দরকার হলে রোগীকে একটি এমআরআই করতে বলি।
প্রশ্ন : এসব পরীক্ষা দিয়ে কি পুরোপুরি বোঝা যায়? এর পরবর্তীকালে রোগীর কী করণীয়?
উত্তর : আসলে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো কারণই জানা যায় না। লাম্বার স্টেনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো লাভ হয় না। এমআরআই করেও তিনটি অবস্থায় আমরা করতে পারব। রোগীর হয়তো কোমর ব্যথা আছে, এর সঙ্গে পা নাড়তে পারে না। কোমর ব্যথা আছে, তার সঙ্গে প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে গেল, একটি রোগীর কোমর ব্যথা আছে, তার সঙ্গে হয়তো দেখা গেল পা অবশ অবশ লাগে। এ তিনটি পর্যায় ছাড়া আসলে এমআরআই করারও দরকার হয় না। এ ক্ষেত্রে এক্স-রে করে দেখতে পারি। অনেক সময় কোনো রোগীর হয়তো টিবি হয়, অনেক সময় ক্যানসার হয়, সে ক্ষেত্রে প্রথমে আমরা করি সাধারণ এক্স-রে। তাতে যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের একটি এমআরআই করতে হবে। অনেক সময় ওখান থেকে মাংস বা রস নিয়ে পরীক্ষা করতে হয়।