কী কী কারণে জ্বর হয়?

জ্বর রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। বিভিন্ন কারণেই জ্বর হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৫১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমীন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : জ্বর বলতে কী বোঝানো হয়? সেটি কী ধরনের জ্বর এবং তা বোঝার উপায় কী?
উত্তর : আমাদের এখানে মানুষের জ্বর খুব প্রচলিত। অনেকে কিন্তু জ্বর আর জ্বর জ্বর ভাবকে মিলিয়ে ফেলে। এই জন্য আমাদের পরিষ্কারভাবে জানতে হবে জ্বর মানে কি?
আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে, এই স্বাভাবিক তাপমাত্রার আবার তারতম্য আছে। সকালে এক রকম, বিকেলে এক রকম। মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেন হাইট। সেটি আবার সন্ধ্যার দিকে এক ডিগ্রি ফারেন হাইট বেশিও থাকতে পারে। আমাদের অন্যান্য সময়ের তাপমাত্রা যদি ৯৮ দশমিক চারের বেশি হয়, অথবা যদি বিকেল থেকে শুরু করে অন্য সময় ৯৯ দশমিক চারের বেশি হয়। একে আমরা বলব জ্বর। আর জ্বর জ্বর ভাব মানে মানুষের মনে হতে পারে তার জ্বর এসেছে। কিন্তু যদি আপনি তাপমাত্রা দেখেন যেটুকু বলা হয়েছে, তার নিচে আছে, এটা আসলে জ্বর জ্বর ভাব, তবে জ্বর নয়।
প্রশ্ন : কী কী কারণে জ্বর হয়। কী কারণে সেটি হচ্ছে, এটি বোঝার উপায় কী?
উত্তর : জ্বর আসলে একটি লক্ষণ। অনেক ধরনের জ্বর আমরা দেখে থাকি। জ্বরকে কতগুলো ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়। একটি জ্বর আছে সারাক্ষণ থাকে। এই ধরনের জ্বর কখনো স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে নামে না। আরেকটি জ্বর আছে, একে আমরা বলি ইন্টারমিটেন ফিবার। এই জ্বরটি থেমে থেমে আসছে। সে ক্ষেত্রে জ্বর আমাদের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় চলে আসতে হবে। পরে আবার হয়তো একদিন-দুদিন পর জ্বর আসতে পারে।
আরেকটি জ্বর আছে একে নির্দিষ্ট ভাগে ফেলতে পারবেন না। অনিয়মিত জ্বর। সকালে হয়তো আসছে, বিকেলে হয়তো আসছে। আবার কোনো একসময় জ্বর ছাড়াও থাকছে। বিভিন্নভাবে আমরা এভাবে জ্বরকে ভাগ করে থাকি। একেক রোগের ক্ষেত্রে সেটি একেকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
জ্বর যখন হবে, এর প্রকারভেদ দেখে আমরা বুঝতে পারব এর ভেতরের কারণ কী?
প্রশ্ন : কোন কোন জ্বরের ক্ষেত্রে কোন কোন রোগকে প্রথমে চিন্তা করেন?
উত্তর : আসলে জ্বরের তো অনেক কারণ। একটি প্রচলিত কারণ হিসেবে চিন্তা করা হয় সংক্রমণ। সংক্রমণ তো আসলে অনেক ধরনের আছে। ভাইরাস আছে, ব্যাকটেরিয়া আছে, কিছু পরজীবী আমাদের শরীরে আছে- এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। আবার শুধু যে সংক্রমণ থেকে জ্বর হবে, এমন কোনো কথা নেই। প্রদাহজনিত অনেক কারণে জ্বর আসতে পারে।
আবার এমনও কিছু কারণ আছে ক্যানসারজনিত কারণ, এদের কারণেও মানুষের জ্বর আসতে পারে। একটি উদাহরণ দিই। হয়তো একটি রোগী আপনার কাছে আসছে যার সারাক্ষণ জ্বর আসছে। তার সঙ্গে তীব্র গায়ে ব্যথা হচ্ছে, জ্বর আসছে। তখন স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া হয় এটি একটি ভাইরাল ইনফেকশন। ঠিক একই রকমভাবে কোনো একটি জ্বর আসছে, তবে উনি বলছেন যে যখনই জ্বর আসছে, তখনই কাঁপুনি দিচ্ছে। সারা শরীরে কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর আসছে। এটি আবার ঘাম দিয়ে ঝরে যাচ্ছে। তখন কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হবে এই জ্বরের নির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকতে পারে। যেমন আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া চিন্তা করতে পারব। এটা ছাড়াও যদি কারো প্রস্রাবে সংক্রমণ থাকে। বিশেষ করে নারীদের অনেক বেশি হয়, তারও কিন্তু কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। আবার এমনও আছে শরীরের ভেতর যদি কোনো জায়গায় ফোঁড়া হয়, সেটা লিভারও হতে পারে, ফুসফুসে হতে পারে। যেকোনো জায়গায় যদি হয়, তখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। যদি এই ধরনের সমস্যা নিয়ে আসে, আমরা এই ধরনের পরীক্ষা করি। এতে আমরা প্রমাণ করতে পারি যে কী কারণে তার জ্বর এসেছে।