শীতে ত্বকের যত্ন কীভাবে নেবেন?
শীত এলে ত্বকের প্রয়োজন হয় কিছু বাড়তি পরিচর্যার। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৫৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন। বর্তমানে তিনি শিওর সেল মেডিকেলের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : শীতকালে ত্বকের পরিচর্যা বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : আসলে শীত যখন আসে, আমাদের ত্বককে পরিবেশের দুটো জিনিসের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। একটি হচ্ছে তাপমাত্রা, আরেকটি স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। শীতে এ দুটোই কমে যায়। আমাদের ত্বকে একটি নিজস্ব কর্মপদ্ধতি আছে। এটি দিয়ে আমরা চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারি। কিন্তু শীতে আমাদের ত্বকের জন্য একটি বিশেষ যত্ন দরকার। আর এ জন্য আমাদের দরকার একটি ত্বকের উপযোগী শীতের যত্ন।
প্রশ্ন : এই পরিচর্যার মধ্যে কোন কোন বিষয় পড়ে?
উত্তর : ত্বকের পরিচর্যায় প্রথমে আসে ত্বকের ধরন। আমরা সাধারণত ধরন বলতে বুঝি শুষ্ক, তৈলাক্ত বা স্পর্শকাতর ত্বক। কিন্তু এ ছাড়া আমাদের ডার্মাটোলজিস্টরা ত্বকের একটি ধরনের কথা বলে থাকি। চুলের রং, চোখের আইরিশ ও ত্বকের টোনের ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। এভাবে আমরা ছয়টি ধরন করি। টাইপ ১, ২, ৩ হলো একটু বেশি সাদা। টাইপ ৪, ৫ হলো বাদামি ত্বক। আর ৬ হলো একটু কালো ত্বক। সাধারণত এটা আফ্রিকানদের হয়ে থাকে।
টাইপ ১, ২ ও ৩-এর ক্ষেত্রে পোড়ে বেশি, তবে ট্যান কম হয়। আর আমরা যারা বাঙালি, তাদের ট্যান বেশি হয়, পোড়ে কম। শীত এলে আমাদের প্রথম ভয় হলো ত্বক মরামরা হবে, একটু কালো হয়ে যাবে। আমরা তাই অনেক বেশি ব্লিচিং উপাদান বা লাইটেনিং উপাদান ব্যবহার করতে থাকি। এতে শীতের শেষে দেখা যায়, হয়তো অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজারের কারণে ত্বকে ব্রণ বা র্যাশ হচ্ছে। অথবা পোস্ট ইনফ্লামেটরি হাইপার পিগমেন্টেশন হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : তাহলে কী করা উচিত?
উত্তর : যেকোনো ত্বকের ধরনের জন্য অবশ্যই দরকার এক বছর মেয়াদি এসপিএফ রুটিন। এসপিএফ রুটিন বলতে আমরা সানস্ক্রিনই বলব না, দিনে আমরা যে পণ্যগুলো ব্যবহার করি, বাইরে যাওয়ার জন্য আমরা যেই পণ্যগুলো ব্যবহার করি, আমরা বিবি ক্রিম বা বিভিন্ন ভ্যানিশিং ক্রিম ব্যবহার করি, সেগুলোও পড়ে। এগুলোর সবকিছুতে একটু হালকা এসপিএফ থাকতে হবে। শীতকাল দেখে যে আমি এসপিএফযুক্ত কিছু ব্যবহার করব না, এটি একদম ভুল। কারণ, শীতেও আলট্রাভায়োলেট রে বলিরেখা ও পোড়া দুটোই করে।
প্রশ্ন : এসপিএফ বিষয়টি সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন?
উত্তর : আমরা এসপিএফ ও সানস্ক্রিনের সঙ্গে বেশি পরিচিত। আমাদের যে বাদামি ত্বক, ৪ ও ৫ নম্বর ধরনের, সেখানে এসপিএফ ৩০ পর্যন্ত পণ্যগুলো ব্যবহার করা বেশি ভালো হবে।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া খুব উপকারী?
উত্তর : আমরা স্বাভাবিক ত্বকের জন্য এমন একটি পণ্য ব্যবহার করব, সেটি সানক্রিন হোক বা ময়েশ্চারাইজার পণ্য, সেটি আমাদের বাজে পরিবেশ থেকে প্রতিরোধ করে, সঙ্গে বয়সের দাগগুলোও ধীরগতির করে। তাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করব। আর বয়স যাদের কম, তারা আলফা হাইড্রো অক্সিড এসিডযুক্ত যেকোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারে। আর সানস্ক্রিন ব্যবহারে ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের খুব ক্ষতি হবে না।
প্রশ্ন : কসমেটিকস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
উত্তর : শীতকালে একটি বাড়তি শুষ্কতা ত্বকে চলে আসে। যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের ত্বক তো আরো শুষ্ক হয়ে থাকে। অনেকে একটি অভিযোগ করে, আমি বাইরে যাচ্ছি, এই পণ্য ব্যবহার করছি। ভালোভাবে পণ্যটি ত্বকে বসছে না, ভেসে আসছে। সে ক্ষেত্রে আমি যে ক্লিনজার ব্যবহার করব, ত্বকের উপযোগী হতে হবে। আর ক্লিনজার যদি জোজোবা অয়েল সমৃদ্ধ হয়, দেখা যাবে একটি বাড়তি ময়েশ্চারাইজার আমার ত্বকে চলে আসছে। আর এর পরও আমরা যখন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করব, দুটো জিনিসের ওপর খেয়াল করতে হবে।
প্রথম হলো, আমাদের ত্বকে লিপিড নামে একটি পদার্থ থাকে। সিমেন্ট যেমন ইটের ভাঁজে ভাঁজে দেওয়া হয়, সে রকমই লিপিড আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। শীতকাল এলে লিপিডটা নষ্ট হতে থাকে। সে জন্য আমরা গ্লাইকোলিক এসিডযুক্ত কোনো জিনিস যদি ব্যবহার করি, এরপরও আমরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কথা বলেছি। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম জেলি আমরা রাতের বেলা যদি মুখে দিই, সকালবেলা ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে, ক্রিমযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করে, ময়েশ্চারাইজার দিয়ে এর পর যে পণ্যগুলো দরকার, সেগুলো ব্যবহার করলে ত্বকটা ভালো দেখাবে।