চোখের চশমাজনিত সমস্যা ও প্রতিকার
চোখে অনেক সময় পাওয়ারজনিত সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৫৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. আবদুল মান্নান। বর্তমানে তিনি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সাধারণ কথায় আমরা বলি, চোখের পাওয়ার কমে গেছে, দেখতে পাই না কিংবা নানা রকমের সমস্যা হয়। ঝাপসা দেখি। এটি দেখে অনেক সময় আপনারা চশমা দেন, যাতে এ সমস্যা দূর হয়। তার মধ্যে কারো দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধা, কারো কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা। একজন মানুষের দেখতে পাওয়ার তারতম্য হয় কেন?
উত্তর : আসলে চোখে দেখার জন্য অনেক ত্রুটি আছে। চশমাজনিত ত্রুটি আছে। চশমাজনিত ত্রুটির মধ্যে দূরদৃষ্টি, আমরা বলি ক্ষীণ দৃষ্টি বা দৃষ্টির অসমতা, এগুলো আমাদের চশমাজনিত সমস্যা। চশমাজনিত ত্রুটির মধ্যে মায়োপিয়া রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোগী দূরের জিনিস একেবারে দেখে না। আরেকটি চশমাজনিত ত্রুটি রয়েছে, এতে দূরেও দেখে না। কাছেও দেখে না। একে আমরা বলি হাইপারমেট্রোপিয়া। আরেকটি চোখের চশমাজনিত ত্রুটি আছে, বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে যে আমাদের বস্তুর প্রতিবিম্বটা চোখে পড়ে, অ্যাঙ্গেলের ভিন্নতার জন্য, অসমতার জন্য প্রতিবিম্বটা আমাদের চোখের স্পর্শকাতর অংশ, যেটাতে আমরা রেটিনার অংশ অ্যাকুলা বলি, সেখানে ফোকাস করে না বলে, মানুষ সাধারণত দেখতে পারে না। আরেকটি ত্রুটি হলো, সাধারণত ৪০ বছরের বয়সজনিত কারণে অধিকাংশ মানুষ কাছের লেখা পরিষ্কারভাবে পড়তে পারে না। একে আমরা চালশে। এর জন্য যে ত্রুটি হয়, একে আমরা বলি প্রেস বায়োপিয়া।
মায়োপিয়া যেটা, সে ক্ষেত্রে আমারা রোগীদের মাইনাস লেন্স দিই। সেটা দিয়ে ঠিক করলে, রোগী দূরে ও কাছে দুদিকে পরিষ্কার দেখতে পারে। আর হাইপারমেট্রোপিয়া যেটা, সে ক্ষেত্রে ত্রুটিটা আমরা এমন এক ধরনের লেন্স দিয়ে ঠিক করে দিই, যাতে রোগী দূরেও দেখতে পারবে। কাছেও দেখতে পারবে।
আর কিছু দৃষ্টিজনিত ত্রুটির জন্য সিলিঞ্জিক্যাল পাওয়ার লাগে, এটা সব ক্ষেত্রে নয়, কারো কারো ক্ষেত্রে লাগে। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, আঘাতজনিত বা পোস্ট অপারেটিভ অবস্থায়, এ সমস্যা হলে সিলিঞ্জিক্যাল প্লাস ও মাইনাস অংশ আছে। এগুলো দিয়ে আমরা সমস্যা ঠিক করে দিই।
আর ৪০ বছরের পর, বিশেষ করে আমরা পত্রিকা পড়ি, অনেকে সেলাই করে, চাল-ডাল বাছে—এসব ক্ষেত্রে দেখতে অসুবিধা হয়। একে আমরা বলি প্রেস বায়োপিয়া। এ ক্ষেত্রে আমরা এক ধরনের লেন্স দিয়ে একে ঠিক করে দিই। এটা খুব সহজ। ব্যয়বহুল নয়। সেগুলো দিয়ে এই সমস্যাগুলো দূর করতে পারি।
প্রশ্ন : শিশুদের বেলায়ও অনেক সময় দেখা যায় চশমা দিয়ে থাকেন। সেটি কখন দরকার হয়?
উত্তর : শিশুদের ক্ষেত্রে চশমাজনিত ত্রুটি দ্রুত ঠিক করা দরকার। সাধারণত ২০ থেকে ২৫ বছরে একটি মানুষের পরিপক্বতা হয়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা বলব, যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে দ্রুতই ঠিক করতে হবে। সেটা ঠিক সময়ে ঠিক না করলে অ্যাম্বালোপিয়া হবে। যেই চোখের পাওয়ার কম থাকবে, সেটি অলস চোখ হিসেবে থেকে যাবে এবং একটি শিশু যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করবে, সে ক্ষেত্রে দৃষ্টি যদি কমে যায় চোখের ত্রুটির কারণে, তাহলে কাজগুলো করা তার জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। সে জন্য শিশুদের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে বলব, সঠিক সময়ে, সঠিক চিকিৎসা না করলে তাদের দৃষ্টি কম থেকে যাবে। পরে সারা জীবনে সমস্যা হবে।