তরুণদের হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ বাড়ছে কেন?

আগে দেখা যেত কেবল মধ্য বয়সের লোকেরা হার্ট অ্যাটাকের সমস্যায় ভুগছেন। তবে এখন দেখা যায় তরুণরাও এই সমস্যায় ভুগে থাকেন।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৭১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. শাহাবউদ্দিন খান। বর্তমানে তিনি আল হেলাল স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিসিন ও হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ কেন বাড়ছে?
উত্তর : এটির অনেক কারণ। আমাদের ৩০ বছর আগে যে জীবনযাত্রা প্রণাল ছিল এখন এটি পরিবর্তন হয়ে গেছে। মূলত ইসকেমিক হার্ট অ্যাটাক ছিল পশ্চিমা জগতের একটি রোগ। আমরা যখন তরুণ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ি, ৭৫ সাল থেকে বলতে পারি, আমরা ৫৫, ৬০ বা সত্তরের আগে হার্ট অ্যাটাক হতে দেখতাম না। অথচ গত বছর আমার আল হেলাল হাসপাতালে তিয়াত্তরটা ছেলে মেয়ের হার্টের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে যাদের বয়স পঁয়ত্রিশের কম।এটি খুব ক্ষতির। এর কারণ হলো আমাদের আর্থিক সঙ্গতি খুব দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। প্রচুর লোক গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হয়ে যাচ্ছে। ফাস্টফুডের প্রতি একটি আকর্ষণ। সেডেন্টারি জীবন যাপন। রিকশা ছাড়া কেউ চলতে চায় না। আগে গ্রামের বাজারে যেতে হলে তাকে তিন কিলোমিটার হেঁটে যেতে হতো। এখ নতো কেউ হাঁটতেই চায় না। ওজনাধিক্য। বেশির ভাগ লোকেরই পেট বড় হয়ে যাচ্ছে। ধূমপান করা। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সারাদিন কাজ করার পর টিভি নিয়ে বসে পড়ে বা কম্পিউটার, ট্যাব এগুলো নিয়ে বসে পড়ে। এ ছাড়া আমাদের মতো উদীয়মান তৃতীয় বিশ্বের দেশে, ইনফেকটিং এজেন্টগুলোও একটি কারণ। সেই সঙ্গে যেটা হলো আর্থিক উন্নতির সাথে সাথে খাবারের অভ্যাস সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। মাছে ভাতে বাঙালি এখন ফাস্টফুড বেশি খাচ্ছে। প্রতিযোগিতা ধরে রাখার জন্য ঢাকা শহরে যে মানসিক চাপ আমাদের নিতে হচ্ছে, এটিও একটি কারণ। এ ছাড়া যেটা আমরা পরিবর্তন করতে পারি। আরেকটি হলো উচ্চ রক্তচাপ।
একজন ভালো চিকিৎসককে দেখিয়ে খুব সহজেই কিন্তু এটা ঠিক থাকে। ডায়াবেটিস দিন দিন এর হার বেড়ে যাচ্ছে। যে ডায়াবেটিস একসময় ছিল মাত্র দুই ভাগ লোকের এখন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে অনেকের আছে। খাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রক্তে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর্থিক সঙ্গতির সাথে সাথে সিগারেট, টোবাকো খাওয়া বেড়ে যাচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার যে প্রাকৃতিক নিয়ম এর থেকে সরে যাওয়া সব মিলিয়ে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হচ্ছে। এই জিনিস যে কেবল বাংলাদেশে তাই নয় সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতেই হচ্ছে। আমরা ইদানীং একে নাম দিয়েছি ম্যালিগনেন্ট করোনারি আর্টারি ডিজিজ।
একটা ৩৫-৪০ বছরের ছেলে দিনে হয়তো ১০টা সিগারেট খায়, হালাকা পাতলা, তার হয়তো কোলেস্টেরল বেশি আরো নানা সমস্যা আছে, একদিন হয়তো আসল বুকে ব্যথা নিয়ে, পরে যখন আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করি- দেখা গেল তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তো আমাদের এই হার্ট অ্যাটাকের জন্য আমি যেই কথাগুলো বললাম, রক্তে কোলেস্টেরলের প্রাধান্য, সিগারেট বা তামাক ব্যবহার, সেডেন্টারি জীবন যাপন এবং পেটে স্থূলতা। এগুলো বড় সমস্যা। এ ছাড়া কিছু সমস্যা থাকে, যেমন অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য হাইপার ইউরেসেমিয়া, ইউরিক এসিডট বেড়ে যাচ্ছে। হাইপারহোমোসিস্টেনেমিয়া। আয়রন কনটেন্ট খুব বেশি থাকা। লাইপোপ্রোটিন এ বেশি থাকা। এখন একজন রোগী যখন আমার কাছে হার্ট অ্যাটাক নিয়ে আসে আজকে দীর্ঘ বছর পর আমি অন্তত লজ্জা পাই। এটা আমাদের ব্যর্থতা। চিকিৎসক সমাজের ব্যর্থতা। এটা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ব্যর্থতা। এটা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা। আমরা কেন তাকে এই তথ্যগুলো দিতে পারলাম না।