কেন হয় পেপটিক আলসার?

পেপটিক আলসার খুব প্রচলিত রোগ। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হতে পারে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৭৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. রোবেদ আমীন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : পেকটিক আলসার নামটি দিয়ে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : পেপটিক আলসার রোগকে আপনি যদি ভাগ করেন, পেপটিক বলতে বোঝায় আমাদের যে খাদ্যগুলো জমা হয় এক জায়গাতে, পাকস্থলী বলি। তার একটি বিশেষ কাজ আছে। এখান থেকে এসিড নিঃসরণ হয়। এই এসিড নিঃসরণ যেন চারদিকে না ছড়িয়ে যায়, তার জন্য কিছু ব্যবস্থা আমাদের শরীরে আছে। সবসময় এটি একটি ভারসাম্যের মধ্যে থাকে। এই ভারসাম্য যদি কোনো কারণে এসিডের দিকে বেশি চলে যায় এবং উপাদানের ক্ষমতা যদি কমে আসে, তাহলে পেপটিক আলসার রোগ হতে পারে। আর আলসার মানে সহজ বাংলায় হলো ঘা। আপনি যদি যে কোনো জায়গায় অনেক মাত্রায় এসিড দিয়ে দেন। তাহলে যে অংশটা থাকে, এটা তার জায়গায় থাকবে না। এটা উঠে আসে। পরে অনেক পদ্ধতিতেই এই ঘা শুকাতে পারে। এই ঘায়ে যদি দীর্ঘসময় আপনি এসিড দিয়ে দেন অথবা তার সুরক্ষা ক্ষমতা না থাকে, আলসার হতে থাকবে। সহজ ভাষায় বললে পেপটিক হলো খাদ্যভাণ্ডার পাকস্থলীর ঘা। তবে এখানে ক্ষুদ্রান্ত বলতে একটি বিষয় আছে। সেটির সাথেও এটি যুক্ত থাকে।
প্রশ্ন : গ্যাসট্রিক আলসার বলে একটি শব্দ কিন্তু আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। আমাদের রোগীরাও নিজেরা অনেকটাই বুঝে ফেলে। অনেকে বলে গ্যাসট্রিকের সমস্যা হয়েছে। সেটি আসলে পেপটিক আলসারের সাথে কতখানি যুক্ত?
উত্তর : আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ খুব পরিচিত কিছু শব্দ বলে, একটি হলো গ্যাসট্রিক হয়ে গেছে। অথবা গ্যাস হয়ে গেছে। আসলে এ দুটো শব্দের কোনোটা দিয়েই কিন্তু গ্যাসট্রিক আলসার বোঝানো হয় না। গ্যাস বলতে বাঙালিরা বোঝানোর চেষ্টা করে যে খাবার খেয়েছে সেগুলো যদি সঠিকভাবে হজম না হয়। এটা যেকোনো খাদ্যে হতে পারে। খাদ্যের উপাদান বলেন, নিয়ম পদ্ধতি বলেন, এসবের মাধ্যমে হতে পারে। ঝাল অথবা ভাজা পোড়া এগুলোর মাধ্যমে হতে পারে। আর গ্যাসট্রিক বলতে মানুষজন সাধারণত বোঝায় এই গ্যাসের সাথে যে অস্বস্তি হয়, পেটে ব্যথা হয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে- যেগুলো গ্যাসট্রিক আলসার ছাড়াও হতে পারে। আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় নন আলসার ডিসপ্যাপসিয়া। এটা আসলে গ্যাসট্রিক আলাসার নয়, তবে এতেও মানুষের অস্বস্তি হচ্ছে। আর গ্যাসট্রিক আলসার কিন্তু সহজ রোগ নয়, একে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণ বলে চিন্তা করা হয়।
প্রশ্ন : এই রোগের কারণ কী?
উত্তর : হ্যালিকোবেকটার পাইলোরি নামের একটি ব্যাকেটিয়া আছে, অনেকে হয়তো জানে। এটি কিন্তু আমাদের পাকস্থলীতে থাকে না। থাকে আমাদের ক্ষুদ্রান্তে। যদি এখানে এমন অবস্থা তৈরি হয়, এসিডের মাত্রা বেড়ে গেছে এবং সুরক্ষার ক্ষমতা বেড়ে গেছে, তখন এই পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া চলে আসে। তখন এই আলসার অথবা ঘাকে আস্তে আস্তে বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি অনেক দিনের গবেষণার পরবর্তী সময়ে জানা গেছে। বর্তমানে এই সমস্যা হলে আগের ওষুধের পাশাপাশি আমরা অ্যান্টিবায়োটিকও ব্যবহার করে থাকি।
প্রশ্ন : খাদ্যাভ্যাস কী এর সাথে সম্পর্কিত?
উত্তর : অনেক কারণ এর জন্য দায়ী থাকতে পারে। অনেকে ভাবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেলে কি গ্যাসট্রিক হয়? অথবা শুধু ঝাল খেলে হয় কি না। শুধু ঝাল খেলে যে গ্যাসট্রিক আলসার হবে এমন কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু দেখা গেছে যারা অনেক বেশি টিনজাত খাবার খায় বা খাবার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদার্থ আছে, এর ব্যবহার করলে তার গ্যাসট্রিক আলসার হওয়ার প্রবণতা বেশি। আবার শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অনেক বেড়ে গেলে গ্যাসট্রিক বা প্যাপটিক আলসার হওয়া আশঙ্কা থাকে।