শীতে ত্বকে কী কী সমস্যা হতে পারে?

শীতে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৫৮২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. তাওহিদা রহমান ইরিন। বর্তমানে তিনি শিওর সেল মেডিকেল বিডির ডারমাটোলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : সাধারণত কোন কোন রোগ হওয়ার প্রবণতা এই সময়ে ত্বকে বেশি থাকে?
উত্তর : আসলে এখন কিন্তু শীতের স্থায়িত্ব অনেক কম। খুব অল্প সময়ের জন্য শীত আসে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে শীতের প্রকোপ আমরা তেমন অনুভব করছি না। কিন্তু তাপমাত্রা সেইরকমভাবে পরিবর্তন না হলেও, আর্দ্রতা পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রশ্ন : শীতে আসলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : শীতে আসলে বাচ্চাদের থেকে শুরু করে বয়স্কদের অনেক ধরনের অসুখবিসুখ হয়, তবে আমি বয়স্কদের দিয়েই শুরু করছি। যখন আমাদের বয়স বাড়তে থাকে, আমরা নিজেদের প্রতি উদাসীন হয়ে যাই। বয়স্কদের প্রধান যে অসুখটি বলা হয় একে বলা হয় উইনটার ইচ। এর নাম হলো জেরোটিক এক্সিমা। ত্বক খুব বেশি মাত্রায় শুষ্ক হতে থাকে এবং ফেটে ফেটে যায়। নদীর পানি শুকিয়ে গেলে যেমন ফেটে যায়, সেরকম ত্বকটা হয়ে যায়। সাধারণত পায়ে হয়, অথবা হাতেও হয়। জেরোটিক এক্সিমার যাদের প্রবণতা থাকে, শীত আসার আগেই যদি ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার ত্বকে ব্যবহার করি বা পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকে ব্যবহার করি, তাহলে দেখা যাবে, সেরকমভাবে জেরোটিক এক্সিমা হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। আর যদি হয়েই যায় তখন কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রশ্ন : হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে কী করবেন?
উত্তর : জেরোটিক এক্সিমার সাথে কিন্তু চুলকানিটা থাকে। যদি ব্লিস্টার থাকে, তখন আমরা মডারেট পটেন্ট নামের একটি স্টরয়েড ব্যবহার করব। ১৫ দিনের জন্য। এরপর চুলকানি যদি থাকে একে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুখে অ্যান্টিহিসটামিন খাব। আর ময়েশ্চারাইজার তো আছেই। পায়ে যদি সমস্যা হয়, শুধু সেখানেই নয়, পুরো শরীরের ন্যাচারাল অয়েল সমৃদ্ধ কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন : এই ব্যবস্থা নেওয়ার পর কি রোগী ভালো হয়ে যায়?
উত্তর : দেখা যায় প্রতি শীতেই এটি আসছে। এ জন্য আমি বলেছি যে প্রতিরোধটা আগে। যদি শরীরের আর্দ্রতা মেনে চলি, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি, তাহলে দেখা যাবে জেরোটিক এক্সিমাটা কঠিনভাবে হচ্ছে না।
প্রশ্ন : আর কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : জেরোটিক এক্সিমার সাথে আরেকটি অসুখ আসতে পারে, লিমোলার রোগ। মেয়েদের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সে, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে একটু কম বয়সে হয়। এটি গোল গোল হয়। অনেকে সোরিয়াসিস বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনও ভাবে।
নিমোলার এক্সিমাতে শীতের শুরুতে দেখা যায় দানা দানা, পানিপানি র্যাশ হচ্ছে। এরপর ফেটে যাচ্ছে। শীত যাওয়ার পর দেখা যায় শক্ত দাগ হয়ে যাচ্ছে।
ব্লিস্টার অবস্থায় ওয়েটড্রেসিং ব্যবহার করবে। এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রটোকল। এটি দিলে যে ক্ষতটা হয় সেটা শুকিয়ে যাবে। এরপর যখন ফেটে যাবে,তখন আমি শুধু ট্রপিক্যাল কোনো অ্যান্টিবায়োটিক দেই। আর যদি বেশি ফেটে যায়, তখন আমরা সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি। অন্য সময় হলেও শীতে এটি বেশি দেখা যায়।
প্রশ্ন : আর কী কী ধরনের সমস্যা হয়?
উত্তর : যাদের সোরিয়াসিস আছে, শীত এলে তাদের মধ্যে আতঙ্কের বিষয় কাজ করে। খুব কষ্টদায়ক হয়। শীতে তো একটা ছুটির মেজাজ চলে আসে। এতে খাবার-দাবারের একটি অনিয়ম চলে আসে। সোরিয়াসিসের সাথে খাবার-দাবার, সূর্যের আলো সবকিছুই জড়িত।