স্বরযন্ত্রে সমস্যা, কীভাবে বুঝবেন?

অনেক সময় শীতে ল্যারিংস বা গলার স্বরে প্রদাহের জন্য বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৯১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. এম এন ফারুক। বর্তমানে তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ইএনটি সার্জারির বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : রোগী কীভাবে বুঝবে ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্র আক্রান্ত হচ্ছে?
উত্তর : কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়। ল্যারিংসে যখন ভোকাল কর্ডগুলো সংক্রমিত হয়ে যায়, তখন এর নড়াচড়া সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এতে ভারী হয়ে যায়। ভারী হয়ে গেলে কণ্ঠস্বরটা পরিবর্তন হয়ে যায়। এটা বড়দের ব্যাপারে যতটুকু না মারাত্মক, ছোটদের বেলায় অসম্ভব মারাত্মক। সাধারণত গলা ভেঙে গেছে বলা হয় বড়দের বিষয়ে। তবে ছোটদের বিষয়ে একিউট ল্যারিংজাইটিস হবে, তখন এটা কিন্তু তাকে মেরে ফেলতে পারে। মেরে ফেলতে পারে এই কারণে যে ছোট বাচ্চাদের যে ল্যারিংসটা এর মধ্যে যে মিউকাস মেমব্রেন আছে, ঝিল্লিটা—এটা অত্যন্ত ঢিলা থাকে। ঢিলা থাকার জন্য যখনই কোথাও কোনো সংক্রমণ হয়, অর্থাৎ কোথাও যদি প্রদাহ হয়, সেখানে ইনফেকটিভ উপাদান যেগুলো থাকে, সেগুলো ফ্লুইড বেশি থাকে। যেহেতু ঝিল্লিগুলো অত্যন্ত লুজ ওখানে, এটা ফুলে গিয়ে মুখটা বন্ধ করে দেয়, তখনই বাচ্চাটা আর শ্বাস নিতে পারে না। বেশিরভাগ বাচ্চা কিন্তু হাসপাতালে আনার আগেই মারা যায়। কোনোমতে যদি আপনি জরুরি বিভাগে নিতে পারেন, তখন দ্রুত ইমার্জেন্সি ট্রেকিওসটোমি করে দেওয়া হয়। তখন শিশুকে বাঁচানো যায়। বাচ্চাকে আপনি নিরাপদ করে দিলেন। এরপর অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করলেন। কাজেই আপনাকে খুব সচেতন থাকতে হবে। পরিবারের অন্য লোকদের বুঝতে হবে আপনার ছোট বাচ্চাটার স্বরযন্ত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। কারণ, সে যখন চিৎকার করবে, দেখবেন যে কোনো শব্দ বের হয় না। যখন সে জোরে কথা বলবে বা কাশি দেবে, তখন সে শব্দটা আসবে না। তখনই আপনাকে তাকে চিকিৎসার জন্য নিতে হবে। এটাই একটি ঝুঁকির বিষয়। এ সময় অবশ্যই জরুরি বিভাগে নিয়ে যাবেন। এ বিষয়ে আমি দর্শককে অনুরোধ করব, আপনারা একটু যত্নশীল থাকবেন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে।
আরেকটি হলো গলার সংক্রমণের জন্য লারুকস এনজাইনা বলে একটি রোগ হয়। তাদের এ জায়গা ফুলে গিয়ে আস্তে আস্তে নিচের দিকে আসে। এটা হলে অনেক সময় পুঁজ হয়ে যায়। কখন হবে? যখন টনসিলটা ইনফেকটেড হয়ে যাবে। অথবা বেশির ভাগ বাচ্চার কিন্তু দাঁতের ক্ষয়রোগ হয়। দাঁতের ক্ষয় আরো সংক্রমিত হয়ে গলার দিকে চলে আসে। আসার সঙ্গে সঙ্গে সে ল্যারিংসকে বন্ধ করে দেয়। গলার নিচের এই অংশ যখনই নিচে নেমে আসে, তখনই খুব সচেতন হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। নিয়ে গেলে গলার নিচে একটি ইনসিশন দিয়ে পাসটা বের করে দেওয়া হয়।
আরেকটি ভয়ংকর রোগ হয় নিট্রোফেরিংগ্যাল অ্যাপসেস। ফ্যারিংসে পেছনে লিম্ফটোন থাকে, এটা সাংঘাতিকভাবে সংক্রমিত হয়ে যায়। সংক্রমিত হলে এখানে পুঁজ জমে। পুঁজ জমলে পড়ে ওয়ালটা সামনের দিকে এসে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে পড়ে। তখন আর সে নিশ্বাস নিতে পারে না। খেতে পারে না। মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে। নিশ্বাস না নেওয়ার জন্য তার সমস্ত শরীর নীল হয়ে যাবে। তখনই তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকরা দ্রুত তাকে কোনোরকম অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই, দেয়ালটাকে ছিদ্র করে দিলে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে সব পুঁজ বেরিয়ে চলে আসবে। বাচ্চার জীবনটা বাঁচবে। তবে এর মৃত্যুর হার অনেক। কারণ হলো, বাবা-মা বোঝার আগেই এটি খুব দ্রুত বেড়ে যায় যে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই এটি মরে যায়।