স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট- কী করবেন, কীভাবে করবেন

Looks like you've blocked notifications!

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ বেশ পরিচিত একটি শব্দ। সাম্প্রতিক সময়ে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি জীবনের কোনো এক পর্যায়ে মানসিক চাপের শিকার হননি। যার মন আছে তার মনে চোট লাগতেই পারে। শুরুতে টুকটাক মন খারাপ, হতাশা কিংবা অবসাদ, কখনো বা রাগ ও সাময়িক উত্তেজনা- এভাবেই স্ট্রেসের শুরু।

‘অ্যাকিউট স্ট্রেস’ মোকাবিলা করতে পারলে তা স্থায়ী হয় না। সামান্য কিছু শারীরিক অসুবিধা বা অস্বস্তির মধ্যেই তা সীমিত থাকে। কিন্তু শুরুটা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা টুকটাক মন খারাপের অনুভূতি উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে, তখন দেখা দেয় ‘এপিসোডিক অ্যাকিউট স্ট্রেস’। স্ট্রেসের এই অভিঘাত কিন্তু স্রেফ শারীরিক অসুস্থতার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না, গভীরভাবে চেপে বসে মনের ওপর। হার্টবিট বাড়ে, বাড়ে রক্তচাপ, ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা তৈরি হয়। মনের ওপরেও নিয়ন্ত্রণ কমতে থাকে, ফলে মানসিক চাপের যে অধ্যায় সূচিত হয় তার নাম ‘ক্রনিক স্ট্রেস’, যা কিনা স্ট্রেসের থার্ড স্টেজ বা জটিলতর মানসিক চাপ মর্মে বিবেচিত হয়।

চাপ যে শুধু মনের ওপরেই পড়ে তা নয়, বরং নানান রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। মাইগ্রেন থেকে শুরু করে বমি বমি ভাব, কনস্টিপেশন, ডায়রিয়া, খাবারে অরুচি, ইনসমনিয়া, অবসাদ, এমনকি, প্যানিক অ্যাটাক অব্দি হতে পারে।

তাই মানসিক চাপকে আর মামুলিভাবে নেওয়া উচিত নয়। ক্রনিক স্ট্রেস সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। পারিবারিক, সামাজিক ও চাকরিজনিত কারণে স্ট্রেস হতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা না হওয়া, ডিভোর্স, রুচি ও পছন্দগত অমিল, সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারা বা নিজেকে আউটকাস্ট ভাবা, কর্মস্থলে বিপ্রতীপ পরিস্থিতির শিকার হওয়া, বসের দুর্ব্যবহার, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা বা কাজের অত্যধিক চাপ, কাজ হারানোর ভয় ইত্যাদি প্রায়শ আমাদেরকে তাড়া করে বেড়ায়। অর্থনৈতিক কারণেও আমরা স্ট্রেসের শিকার হই। নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যের সাথে তাল মেলাতে না পেরে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠি। আর্থিক নিরাপত্তার অভাবও মানসিক চাপের কারণ। তবে এসকল চাপ সামাল দেওয়ার কিছু তরিকাও আছে। ‘স্ট্রেস আউট’ অর্থাৎ মনের ভেতর জমানো ছোটো ছোটো কষ্টগুলো যেন দীর্ঘমেয়াদে বাসা না বাঁধে  সেই জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে।

উন্নত দেশগুলোতে এখন স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও উপদেশমূলক সেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। আমি মনে করি, It’s all about attitude to life. মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। তবে সবার আগে চাই ট্রাবল শুটিং। কী বা কে আমাকে স্ট্রেস দিচ্ছে সেটা সবার আগে শনাক্ত করতে হবে। তার জন্য চাই মনঃসমীক্ষণ। আবার কিছু ফিজিক্যাল ইস্যুও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ও পরিমিত ঘুমের অভ্যেস, শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম, সর্বোপরি মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকা যায় বলে বিশেষজ্ঞদের মত।   

আমরা জানি, সুস্থ দেহে সুন্দর মন। অসুস্থ ব্যক্তি জীবনকে কখনও উপভোগ করতে পারেন না। তার জীবন কাটে উহুঁ আহা করে। আর শরীর সুস্থ রাখতে চাই পরিমিত সুষম খাবার, রাতে অন্তত সাত ঘণ্টা নির্ভেজাল ঘুম (দুঃস্বপ্ন-তাড়িত ঘুম নয়, একেবারে সাউন্ড স্লিপ বা সুষুপ্তি), আর চাই রেগুলার এক্সারসাইজ। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা কম্পিউটার ল্যাবে কাজ করেন, অর্থাৎ দিনের বেশির ভাগ সময় বসে থাকেন তাদের মধ্যে মানসিক চাপাক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি। আর যারা স্পোর্টসম্যান তারা প্রায়ই মানসিক চাপমুক্ত থাকেন। বস্তুত, কর্টিসল হরমোন কী তারা জানেন না। মোদ্দা কথা, পর্যাপ্ত শারীরিক কসরত মন ও শরীর দুটোকেই সুরক্ষা দেয়।  

আলোচ্য বইটিতে সহজ ভাষায় স্ট্রেস কী এবং কেন, মনকে কীভাবে চাপমুক্ত রাখা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি পড়ে আপনারা মানসিক চাপের কারণ এবং তার রকমসকম বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। তবে এখানে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কোনো ওষুধ বাতলানো হয়নি। তবে মনের চাপ বাড়াবাড়ি রকম বেড়ে গেলে অতি অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে মনোবিদের সঙ্গেও কনসাল্ট করতে পারেন। তারা হয়তো আপনার পরিস্থিতি বিবেচনায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে পারবেন। বলে রাখা ভালো, স্ট্রেস কোনো রোগ নয়, তবে স্ট্রেসের কারণে কিন্তু অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপ সময়ে সামাল দিতে না পারলে তা আপনাকে ধ্বংসের দোরগোড়ায় নিয়ে দাঁড় করাতে পারে। তাই টুকটাক মন খারাপকেও উপেক্ষা করা ঠিক নয়। নিজেকে জানুন, বুঝুন, মনের সঙ্গে একান্তে বসে বোঝাপড়া করুন, ভাল খান, নির্ভেজাল ঘুমান এবং পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন, আর পরম বন্ধু হিসেবে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত এই বইটিকে হাতের কাছে রাখুন, দেখবেন মনের চাপ অনেকটাই সেরে গেছে।

প্রকাশক : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ২০২৩, মূল্য : ২৩০ টাকা।

লেখক পরিচিতি : ডা. তপতী মণ্ডল (প্রধান, নিউক্লিয়ার কার্ডিওলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা) ও অরুণ কুমার বিশ্বাস (অতিরিক্ত কমিশনার, বাংলাদেশ কাস্টমস)