রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
রোজার অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এই সময় বিশেষ করে যাঁরা ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলাসার, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদিতে ভুগছেন, তাঁদের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে রোজা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও অনেক রোগী রোজা রাখতে খুবই আগ্রহী। তাঁরা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, রমজান মাসে ওষুধ সেবনবিধি ঠিক করে নিতে পারেন, তবে সহজেই রোজা রাখতে পারেন। এতে রোজা ভাঙার বা রোজা থেকে বিরত থাকার কোনো প্রয়োজন হয় না।
রোজা রোগ ও আপনার স্বাস্থ্য
রোজা রাখার উদ্দেশ্য শরীরকে দুর্বল করে অকর্মণ্য করা নয়, বরং শরীরকে সামান্য কিছু কষ্ট দিয়ে দৈহিক ও আত্মিক উৎকর্ষ সাধন। শুধু তা-ই নয়, অনেক রোগের বেলায় রোজায় ক্ষতি না হয়ে বরং বহু রোগব্যাধির প্রতিরোধক এবং আরোগ্যমূলক চিকিৎসালাভে সহায়ক হয়। রোজায় স্বাস্থ্যের সমস্যার চেয়ে বরং স্বাস্থ্যের উপকারই বেশি হয়।
ডায়াবেটিক রোগী
রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ ও রহমতস্বরূপ। ডায়াবেটিক রোগীরা সঠিক নিয়মে রোজা রাখলে নানা রকম উপকার পেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, আর রোজা রাখা হতে পারে এর অন্যতম উপায়। এতে সহজেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সহজ ও সুন্দরভাবে করা যায়। যাঁরা ইনসুলিনের ওপর নির্ভাশীল নন, তাঁদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা হতে পারে আদর্শ চিকিৎসা ব্যবস্থা। যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও রোজা অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমাতে সহায়ক। শুধু রক্তের গ্লুকোজই নয়, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও রোজা মোক্ষম। এর সঙ্গে সঙ্গে রোজা ডায়াবেটিক রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়। এটি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অপরিহার্য।
রক্তের কোলেস্টেরল
যাঁদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, রোজা তাঁদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। রোজা ভালো কোলেস্টেরলকে (এইচডিএল) বাড়াতে এবং মন্দ কোলেস্টেরলকে (এলডিএল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত ওজন
যাঁদের ওজন অতিরিক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে রোজা ওজন কমানোর জন্য এক সহজ ও সুবর্ণ সুযোগ। ওজন কমে যাওয়ার বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকা যায়। যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, বাতের ব্যথা, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, গাউট ইত্যাদি। আবার ওজন কমাতে পারলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে আসে।
শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগী
যাঁরা এসব রোগে ভোগেন, তাঁদেরও রোজা রাখতে কোনো অসুবিধা নেই। রোজায় এ ধরনের রোগ সাধারণত বৃদ্ধি পায় না। বরং চিন্তামুক্ত থাকায় এবং আল্লাহর প্রতি সরাসরি আত্মসমপর্ণের কারণে এ রোগের প্রকোপ কমই থাকে। প্রয়োজনে রাত্রে একবার বা দুবার ওষুধ খেয়ে নেবেন। এ ধরনের ওষুধ বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। এতে রোজার কোনো ক্ষতি করবে না।
হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ
রোজার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ হওয়ার ফলে যাঁরা হৃদরোগ অথবা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাঁদের জন্য রোজা অত্যন্ত উপকারী। এতে শরীরের, বিশেষ করে রক্তনালির চর্বি কমে যায়। রক্তনালির এথরোসক্লোরোসিস কমাতে সাহায্য করে।
পেপটিক আলসার
একসময় ধারণা ছিল, পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন না, তাঁদের ঘন ঘন খাওয়া খেতে হবে। অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা যাবে না। অনেকে মনে করেন, রোজা পেপটিক আলসারের ক্ষতি করে এবং এসিডের মাত্রা বাড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ধারণা ঠিক নয়। রোজায় নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার কারণে এসিডের মাত্রা কমে যায়। তাই সঠিকভাবে রোজা রাখলে এবং সঠিক খাবার দিয়ে সেহরি ও ইফতার করলে রোজা বরং আলসারের উপশম করে। এ ছাড়া রোজা গ্যাস্ট্রাইটিস, আইবিএস ইত্যাদি রোগেও উপকারী।