বিশ্ব স্ট্রোক দিবস : প্যারালাইসিস পুর্নবাসনে ফিজিওথেরাপি
প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব স্ট্রোক দিবস (World Stroke Day) পালিত হয়। এবারের (২০২৫) প্রতিপাদ্য Act FAST, Save Brain, Save Life— এই বার্তাই হোক বিশ্ব স্ট্রোক দিবসের অঙ্গীকার। এর মূল উদ্দেশ্য হলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক প্রতিরোধ ও দ্রুত চিকিৎসার গুরুত্ব বোঝানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন জীবদ্দশায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। সঠিক সময় চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিলে জীবন বাঁচানো এবং স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব।
আরও পড়ুন : স্ট্রোকের লক্ষণ কী?
আরও পড়ুন : স্ট্রোক হয়েছে, বুঝবেন কীভাবে?
স্ট্রোক কি
স্ট্রোক হলো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের হঠাৎ ব্যাঘাত। এটি দুই প্রকার—
১. ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke) : মস্তিষ্কের কোনো ধমনী বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত ও অক্সিজেনের ঘাটতিতে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট হয়।
২. হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke) : মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে তা আশেপাশের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করে।
স্ট্রোক হওয়ার কারণ
• দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
• ডায়াবেটিস মেলিটাস
• উচ্চ কোলেস্টেরল
• ধূমপান ও মদ্যপান
• অতিরিক্ত মানসিক চাপ
• স্থূলতা ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
• পারিবারিক বা বংশগত ঝুঁকি
আরও পড়ুন : হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য কী
আরও পড়ুন : স্ট্রোকের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে করণীয়
স্ট্রোকের লক্ষণ
স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ মনে রাখার সহজ সূত্র হলো FAST—
• F (Face) : মুখ বেকে যাওয়া
• A (Arm) : এক বা দুই হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া
• S (Speech) : কথা জড়ানো বা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া
• T (Time) : এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি
এছাড়া হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, চোখে দেখা কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদিও স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
স্ট্রোক নির্ণয়ের জন্য সাধারণত CT scan, MRI, Doppler ultrasound, এবং Blood test করা হয়। এসব পরীক্ষায় মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বা রক্তক্ষরণ আছে কিনা তা জানা যায়।
আরও পড়ুন : তরুণদের মাঝে স্ট্রোকের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ
আরও পড়ুন : স্ট্রোক কত ধরনের?
চিকিৎসা
ইস্কেমিক স্ট্রোকে রক্ত জমাট ভাঙার ওষুধ (Thrombolytic therapy) ব্যবহার করা হয়, তবে এটি ৩–৪.৫ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তক্ষরণ বন্ধ ও মস্তিষ্কের চাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ বা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্যারালাইসিস পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা
স্ট্রোকের পর অনেক রোগীর শরীরের এক পাশ আংশিক বা সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত (Paralysis) হয়ে যায়। এখানে ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—
• প্রাথমিক পর্যায়ে : রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা, জয়েন্টের নড়াচড়া বজায় রাখা এবং পেশির খিঁচুনি (spasticity) প্রতিরোধ।
• পুনর্বাসন পর্যায়ে : রোগীকে ধীরে ধীরে বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা, ভারসাম্য রক্ষা ও দৈনন্দিন কাজ শেখানো হয়।
• এক্সারসাইজ ও থেরাপি : প্যাসিভ ও অ্যাকটিভ এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং, ব্যালান্স ট্রেনিং, গেইট ট্রেনিং, ইলেকট্রিক স্টিমুলেশন ও ফাংশনাল থেরাপি রোগীর দ্রুত সুস্থতায় সহায়ক।
• স্পিচ ও অকুপেশনাল থেরাপির সাথে সমন্বয় : কথা ও হাতের সূক্ষ্ম কাজের দক্ষতা ফিরিয়ে আনতে অন্যান্য থেরাপিস্টদের সহযোগিতাও অপরিহার্য।
আরও পড়ুন : স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে যে খাবারগুলো এখনই কমাবেন
আরও পড়ুন : স্ট্রোক হওয়ার পেছনে কী কী কারণ দায়ী
উপসংহার
স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব সঠিক জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওষুধ সেবন ও ধূমপান ত্যাগের মাধ্যমে। সময়মতো চিকিৎসা ও ধারাবাহিক ফিজিওথেরাপি পুনর্বাসনই স্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তিকে নতুন জীবন দিতে পারে।
লেখক :
ডা. এম ইয়াছিন আলী
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল
ধানমন্ডি, ঢাকা।

ডা. এম ইয়াছিন আলী