ঈদ পোশাক
তড়িঘড়ি দর্জিবাড়ি
চারিদিকে এরই মধ্যে ঈদের আমেজ দেখা যাচ্ছে। একটা উৎসবের জন্য যেন সবাই প্রস্তুত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে ব্যস্ত নগরীর দর্জিবাড়িগুলোও। ঈদ বলে কথা! পোশাকটি হওয়া চাই স্পেশাল। সবার থেকে আলাদা। তাই দর্জিবাড়িই একমাত্র ভরসা।
কিন্তু হাতে যে একদমই সময় নেই। দর্জিবাড়িরও রয়েছে কিছু ধরাবাধা নিয়ম। ২০ রোজার পর কোনোভাবেই তারা পোশাকের অর্ডার নেয় না। এর কারণ একটাই, অর্ডারের ভীষণ চাপ। তাদেরও কিছু করার নেই। কেউ তো আর এক-দুইটা পোশাক বানায় না! একেকজনের কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয়টি পোশাকের অর্ডার থাকে। তার আবার কত কাটিং। কেউ কারিনা কাটে পোশাক বানাতে আগ্রহী, কেউবা প্রিয়াঙ্কার কামিজের গলার মাপ নিয়ে ব্যস্ত, কেউ আছেন দীপিকার ফ্লোরটাচ পোশাকের চক্করে। তাই দর্জিরাও থাকেন মহাব্যস্ততায়। সবার চাহিদা পূরণ করতে হবে তো।
দর্জির কাছে যেতে হলে আগে তো কাপড় কিনতে হবে। তাই গজকাপড়ের দোকানেও ভিড়ের কমতি নেই। দামটাও বেশ জমিয়েই বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। তবু দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। আর হবেই বা না কেন, ঈদ তো আর রোজ রোজ আসে না।
চাঁদনি চকের এক বিক্রেতা শফিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সারা বছর আমরা রোজার এই একটি মাসের অপেক্ষায় থাকি। বেচাকেনা তো এই সময়টাতেই ভালো হয়। আর দাম না বাড়িয়ে উপায় আছে। আমরাও তো আগের বাড়ের থেকে এবার বেশি দামে কাপড় কিনে এনেছি। ব্যবসার লোকসান করে তো আর কাপড় বেচব না।’
তবে দাম যতই বাড়ুক, প্রিয়জনের পোশাকটি কিন্তু ঠিকই কেনা হচ্ছে। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে কথা হলো গৃহিণী আফসানা হোসেনের সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঈদে পরিবারেরই সবার জন্য পোশাক আমিই কিনি। এখন এসেছি মেয়ে আর আমার জন্য গজকাপড় কিনতে। কারণ একটু দেরি হলে আর দর্জিরা কাপড় জমা নিতে চায় না। তাই দেখেশুনে আগেই গজকাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’
এত কিছুর মাঝে দর্জিদের লাভ হলেও চিন্তার শেষ নেই। কারণ উৎসবের দিনটিতে পোশাক নিয়ে কারো মন খারাপ থাকুক, এটা তারাও চান না। নিউমার্কেটের দর্জি সুমন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কাজের প্রেসার সেই রোজার আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এখনো আমরা পোশাকের অর্ডার নিচ্ছি। সারা রাত আমাদের দর্জিরা কাজ করেন। এতটুকু সময় নেই বিশ্রামের। তার ওপর পোশাকের ডিজাইনে কোন ভুল হচ্ছে সেই চিন্তার শেষ নেই।’
অনেকে আছেন যাঁরা এত ঝামেলায় যেতে চান না। তাঁরা তৈরি পোশাক কিনতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সে ক্ষেত্রে আজকাল বিভিন্ন ডিজাইনের দেশীয় কাপড়ের পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে নিজের পছন্দমতো পোশাকটি বাছাই করতে পারেন। তবে কেনার পর ফিটিংসে সমস্যা হলে কাছের পরিচিত কোনো দর্জির কাছ থেকে মাপ অনুযায়ী ফিটিংস ঠিক করিয়ে নিতে পারেন।
দরদাম
গজকাপড়ের দাম অনেকটা নির্ভর করে কাপড়ের মানের ওপর। সুতির মধ্যে একটু ভালো মানের গজকাপড়ের দাম প্রতি গজ ৩০০ থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা, নেট কাপড়ের দাম ২৫০ থেকে ৭৫০, জর্জেট কাপড়ের দাম ৫৫০ থেকে এক হাজার ২০০, সিল্কের কাপড়ের দাম ৪৫০ থেকে এক হাজার, কাতান কাপড়ের দাম ৫৫০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। তৈরি পোশাকের দাম দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকার পর্যন্ত রয়েছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী সেখান থেকে পোশাক কিনতে পারেন। আর পোশাক বানানোর মজুরি দোকানভেদে সালোয়ার কামিজ ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, আনারকলি ৮০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং ফ্লোরটাচ কামিজ ও লং গাউনের মজুরি ৬৫০ থেকে এক হাজার টাকা।
কোথায় যাবেন
মেয়েরা সাধারণ নিউমার্কেট, চাঁদনী চককের দর্জিদেরই বেছে নেয় পোশাক বানানোর জন্য। তবে অনেকেই দূরত্বের কারণে বনানী, গুলশান পিংক সিটিতে বানিয়ে নেয় নিজের পছন্দের পোশাকটি। এ ছাড়া উত্তরা, মতিঝিল, মগবাজার, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন গলিতে নানা মানের টেইলার্স রয়েছে। চাইলে নিজের পছন্দের ডিজাইনের পোশাকটি এসব দর্জির কাছ থেকে বানিয়ে নিতে পারেন। এতে পোশাকের মজুরিটাও হাতের নাগালে থাকবে।
পরামর্শ
১. গজকাপড় কেনার সময় কয় হাত পানা কিনছেন খেয়াল রাখুন। কারণ পরে বানানোর সময় কামিজের লংয়ের ক্ষেত্রে ছোট হতে পারে।
২. যেভাবে বানাতে চান দর্জিকে তার মাপ ও ডিজাইন একে বোঝাবেন। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে।
৩. নিত্যনতুন অনেক ডিজাইনই চোখে পড়বে। তবে যে ডিজাইনটিতে আপনাকে মানাবে সেটাই বানাতে দিন।
৪. অনেক পোশাকের মাঝে আপনার পোশাকটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পরিচিত দর্জির কাছে বানানোর চেষ্টা করুন।
৫. তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে কাপড়ের মান ভালো কি না দেখে কিনুন। কারণ অনেক তৈরি কাপড় আছে দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু কাপড় ভালো না। তাই আগে থেকেই বাছাই করে পছন্দের পোশাকটি কিনুন।