বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে
ফুলেল উৎসবে মেতে উঠেছে প্রকৃতি। প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও ছড়িয়ে পড়ে বসন্তের রঙের আভা। আর তাই বসন্তের প্রথম দিনে মানুষের সাজপোশাকের মধ্যেই ফাগুনের আগমনীবার্তার প্রকাশ ঘটে। যেহেতু বসন্ত মানেই রঙের বাহার, তাই পোশাকেও রয়েছে রঙের সমাহার। আর বাঙালিয়ানা মানেই শাড়ি। তাই শাড়িকেই হয়তো বেছে নেবেন অনেক নারী। তবে শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়ার জনপ্রিয়তাও কম না। আর ছেলেদের পাঞ্জাবির সঙ্গে ফতুয়া বা ওয়েস্টার্ন আউটফিটেরও চল চোখে পড়ছে। তবে যেসব পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, উৎসবের সঙ্গে মানানসই সেসব পোশাকই পরার পরামর্শ দিলেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা।
বসনে রঙের ছড়াছড়ি
বাসন্তী বা হলুদকে ফাল্গুনের রং হিসেবে ধরা হয়। তবে দিনে দিনে এই রঙের ধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন বাসন্তি ও হলুদ রঙের সঙ্গে কমলা, লাল এবং নতুন পাতার সবুজ রংকেও বসন্তের রং ধরা হয়।
অঞ্জন'স ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার শাহীন আহমেদ বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে মানুষের বসন্ত উৎসব পালনের আগ্রহ তত বাড়ছে। তাই বর্ণিল বসন্তে অঞ্জন’স এনেছে নানা ডিজাইন আর বৈচিত্র্যের উৎসবের পোশাক।’
শাহীন আহমেদ বলেন, ‘উৎসবের রঙে রাঙাতে শাড়ি, পাঞ্জাবির নতুন সব কালেকশন থাকছে এবার। সঙ্গে সালোয়ার-কামিজ আর ফতুয়ার রং এবং ডিজাইনেও ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছি। আর রং হিসেবে বাসন্তি, হলুদ ও কমলাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
বিনিয়ানা ফ্যাশন হাউসের কর্ণধার লিপি খন্দকার বলেন, ‘বসন্তের রং হিসেবে প্রতিবারের মতো এবারও হলুদকেই বেছে নিয়েছি। এছাড়া বাসন্তি আর সবুজ রঙের ছোঁয়াও থাকছে আমাদের পোশাকে।’
‘রং হিসেবে বাসন্তি হলুদ, কমলা, লাল, সাদা, লাইম গ্রিন উজ্জ্বল সব রংকে বেছে নেওয়া হয়েছে এবং ব্লক প্রিন্টের শাড়িতে করা হয়েছে কাঁথা, চুমকি ও গ্লাসের কাজ।’ বললেন ফ্যাশন হাউস বাংলার মেলার কর্ণধার আবু মোহাম্মদ মতিউজ্জামান।
পোশাকে উৎসবের আবহ
যেহেতু শীতের শেষ মানেই বসন্ত, তাই প্রকৃতিতে মিষ্টি ফাগুনের হাওয়ার সঙ্গে হালকা গরমেরও ছোঁয়া থাকে। এ সময়ে সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর সাধারণত বসন্তে পোশাকের ডিজাইনে ফুলকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং প্রকৃতির বিভিন্ন মোটিফও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।
‘কটন, লিলেন, খাদি, ভয়েল এবং তাঁত কটনকে বেছে নেওয়া হয়েছে বসন্তের পোশাকে। এসব পোশাকের ক্যানভাসে এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্টসহ ফুটে উঠেছে সর্বজনীন উৎসবের আবহ।’ বললেন ফ্যাশন হাউস অঞ্জন'স-এর কর্ণধার শাহীন আহমেদ।
আর তাঁতের সুতি শাড়ির ওপর এপ্লিক, স্ক্রিন প্রিন্ট আর ব্লকের কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিপি খন্দকার।
এ ছাড়া এবারের বসন্তে কাপড়ে বৈচিত্র্য আনার জন্য ব্লক, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্টের সাথে সিকোয়েন্স ব্যবহার করে করা হয়েছে এবং কটন শাড়িতে ফুলেল নকশায় টাইডাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফ্যাশন হাউস বাংলার মেলার কর্ণধার আবু মোহাম্মদ মতিউজ্জামান।
ব্লাউজের কাটছাঁটে ভিন্নতা
একরঙা শাড়িকেই এই উৎসবে বেছে নেন নারীরা। তাই বরাবরই ব্লাউজে থাকে বাহারি রঙের ছোঁয়া। আর এর সঙ্গে যোগ হয় নিত্যনতুন ডিজাইন।
লিপি খন্দকার বলেন, ‘শাড়ির সঙ্গে কনট্রাস্ট করে ব্লাউজের রং বেছে নেওয়া ভালো। তবে একরঙা শাড়ির সঙ্গে বাহারি রঙের ব্লাউজ বেশ মানানসই।’
‘ব্লাউজের গলায়ও এসেছে ভিন্নতা। এখন একটু উঁচু গলার ব্লাউজ যেকোনো শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে যায় বেশ। আর হাতার ক্ষেত্রে স্লিভলেস ব্লাউজেই বেছে নিচ্ছে তরুণীরা।’ বললেন লিপি খন্দকার।
কোথায় পাবেন
আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিবছরই বসন্তের রঙিন পোশাকের পসরা সাজায়। এ বছরও নানা রং, ডিজাইন আর মোটিফ নিয়ে বৈচিত্র্যময় পোশাকের আয়োজন করেছে হাউসগুলো। আড়ং, অঞ্জন'স, রং, বিবিয়ানা, কে-ক্রাফট, বাংলার মেলা, দেশাল ও নিপুণে আপনি আপনার পছন্দের ফাল্গুনের পোশাকটি কিনতে পারবেন। এ ছাড়া বসুন্ধরা শপিং মল, যমুনা ফিউচার পার্ক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, রাপা প্লাজা, মৌচাক মার্কেট এবং নিউমার্কেট ও গাউসিয়া থেকে সাধ আর সাধ্য অনুযায়ী ফাল্গুনের পোশাকটি বেছে নিতে পারেন।