ভাজি-ভর্তার হোটেল নীরব
মাছে-ভাতে বাঙালি বলে খ্যাতি পেলেও এ দেশের মানুষের কাছে কিন্তু রয়েছে ভর্তার অন্যরকম চাহিদা। ছোটবেলায় সেই মা-খালাদের হাতে তৈরি কত রকম-সকমের ভর্তা দেখে জিভে জল আসার উপক্রম হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা যেন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। যান্ত্রিক এ শহরে এত সময় কোথায় এই বাড়তি বিড়ম্বনাটুকু নেওয়ার। তবে সেই বাড়তি ঝামেলাটুকু থেকে খুব সহজেই মুক্তি দেয় ‘নীরব হোটেল’। নানাবিধ ভর্তা-ভাজির জন্য বিখ্যাত এই খাবারের দোকানটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক আজ।
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত এই রেস্তোরাঁর অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এখানকার ভর্তা-ভাজি। প্রতিদিন প্রায় ২০ রকমের ভর্তা-ভাজি করা হয় এখানে। এ ছাড়া এই রেস্তোরাঁর মেনুতে আছে আরো নানাবিধ খাবার। বিরিয়ানি, ভুনা খিচুরি, মাংসের ভুনা, কলিজা ভুনা, বোরহানি ইত্যাদিরও দেখা মিলবে এখানে। এখানে মাংসের কালাভুনা ও মগজ ভুনার রয়েছে সুখ্যাতি। সব খাবারের দামই রয়েছে সাধ্যের মধ্যে। প্রতিটি আইটেমের দাম সর্বনিম্ন ১৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত।
আহামরি আড়ম্বর না থাকলেও ছিমছাম এই রেস্তোরাঁ নজর কাড়বেই। এটি সম্পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এবং সেই সাথে রয়েছে বসার পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা। খাবারের মান নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। প্রতিটি খাবারে রয়েছে ঘরোয়া ছোঁয়া। প্রবেশের পরই সুস্বাদু খাবারের লোভনীয় গন্ধ এসে যেন খিদে আরো বাড়িয়ে দেয়। সামান্য ভর্তা-ভাজি দিয়ে যে পেট পুরে খাওয়া যায় তা এখানে না এলে বোঝা যাবে না।
এই রেস্তোরাঁর খাবার পরিবেশনা এক কথায় চমৎকার। এর জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে যে কর্মচারীদের যেন দম ফেলার সময়টুকু নেই। শত ব্যস্ততার মাঝে খাবার পরিবেশনকারী মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিনই এখানে রয়েছে মানুষের ঢল। ছুটির দিনগুলোতে তুলনামুলক ভিড় বেশি থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন দৈনন্দিন মেনুর পাশাপাশি বিশেষ দিনগুলোতে বিশেষ খাবার করা হয়। পহেলা বৈশাখে অনেকেই এখানকার পান্তা ভাত ইলিশ খেতে আসেন।’
নীরব হোটেল প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সকালের নাস্তা থেকে রাতের খাবার সবই সারা যাবে এখানে। প্রায় সব পেশার মানুষই প্রতিদিন জড়ো হয় এখানে। তবে সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য ছাত্রছাত্রীদের নিকট বেশ জনপ্রিয় এ হোটেল। বন্ধুদের সাথে নিয়ে প্রতিদিনই দলবেঁধে আসে অজস্র তরুণ-তরুণী। তেমনি একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুসফিক রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই চলে আসি এখানে বন্ধুদের নিয়ে। গ্রামে মায়ের হাতের ভর্তা না হলে ভাত খাওয়া হতো না। এখানে এসে যেন সেই স্বাদের কিছুটা রোমন্থন করতে পারি।’
নানা পেশার কর্মজীবীরাও কাজের ফাঁকে দুপুরে খাবারের পর্বটি এখানে সেরে যান। মাঝে মাঝে এখানে আগমন ঘটে বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের। আর তাঁদের বাংলাদেশি খাবারের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে ‘নীরব হোটেল’।