ঐতিহ্য
বাংলাদেশের ছয় শাড়ি

শাড়ি শুধু বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক নয়, এটি তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক। যুগ যুগ ধরে নারীরা শাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে আসছে, আজও যেকোনো অনুষ্ঠানে শাড়িই তাদের প্রথম পছন্দ। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের শাড়ির পেছনে রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস— যেমন: জামদানি, সিল্ক, তাঁত ও মণিপুরী বুনন। এসব শাড়ি শুধু পোশাক নয়, অঞ্চলভিত্তিক সংস্কৃতিরও বাহক। শাড়িপ্রেমী নারীরা এসব ঐতিহ্যবাহী শাড়ি সংগ্রহে রাখেন। রাজধানীতে পাওয়া গেলেও আসল শাড়ি কিনতে যেতে হয় সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলে। আজ জানবো কোন এলাকায় কোন শাড়ি পাওয়া যায়।
ঢাকাই জামদানি
ঢাকাকে জামদানির আদি জন্মস্থান বলা হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, নোয়াপাড়া ও এর আশপাশের এলাকায় তাঁতিরা ঢাকাই জামদানি শাড়ি বুনেন। মিহি সুতোয় বোনা স্বচ্ছ এই শাড়ি। নিজস্ব ও স্বতন্ত্র ডিজাইনের অধিকারী এই শাড়ি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে। কার্পাস তুলা থেকে পাওয়া সুতা দিয়ে এই শাড়ি তৈরি হয়। সূক্ষ্ণ কাজ আর রুচিশীল ডিজাইনের জন্য এর শাড়ি বেশ দামিও হয়।
মণিপুরি শাড়ি
দুই ধরনের তাঁতে কাপড় বুনে থাকে মণিপুরি সম্প্রদায়। শাড়ি বোনা হয় সাধারণ হস্তচালিত তাঁতে। নারীরাই কাপড় বুনে থাকেন। হস্তচালিত তাঁতে জামদানির মতো দুজন করে বসেন। আরও একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, মণিপুরি যে কোনো পোশাক সুতি সুতায় বোনা হয়। মণিপুরি বয়নের বৈশিষ্ট্য টেম্পল মোটিফ। শাড়ির পাড় এবং আঁচলেও তাঁরা এই নকশা বুনে থাকেন। মণিপুরি ভাষায় এই মোটিফকে বলে মৈরাং। এ ছাড়া শাড়ির জমিনে থাকে অন্যান্য মোটিফ।
টাঙ্গাইলের শাড়ি
টাঙ্গাইলের আদি শাড়ি বলেতেই সুতি শাড়ি, যা ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও উজ্জ্বল ও আরামদায়ক হয়। আবহাওয়া উপযোগী ও নকশায় অনন্য হওয়ায় একসময় ভারতজুড়ে এর চাহিদা ছিল। এককালে আমদানিকৃত সিল্ক সুতো দিয়ে তৈরি শাড়ি ‘মসলিন’ নামে পরিচিত ছিল। আশির দশকে সংযোজন হয় হাফ সিল্ক, নব্বইয়ের দশকে আসে ডাবল জ্যাকার্ড বুনন।
শুরুর দিকে শুধু পাড়ে নকশা থাকলেও এখন জমিন ও আঁচলেও ডিজাইন হয়। আগে এই শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ পিস না থাকলেও এখন সংযুক্ত থাকে। শাড়িগুলো প্রধানত তিন ধরনের— ভাইটাল, জ্যাকার্ড (নকশাপাড়) ও বুটি। টাঙ্গাইলে একসময়ের গর্ত তাঁতের পরিবর্তে শাড়ি বোনা হয় জ্যাকার্ডে। বুটির নকশায় জটিলতা ও সংখ্যার ওপর নির্ভর করে শাড়ি তৈরির সময়কাল।
রাজশাহীর সিল্ক শাড়ি
দেশের রাজশাহী সিল্ক শাড়ি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে। রেশম সুতা থেকে তৈরি এই শাড়ি অত্যন্ত সূক্ষ্ম, নরম ও মূল্যবান। এই শাড়ির জন্য রাজশাহীতে একটি সিল্ক গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং সিল্ক কারখানা তৈরি করা হয়েছে।
সিলেটের জুম শাড়ি
সিলেটের জুম শাড়ি পাহাড়ি অঞ্চলের ঐতিহ্য। রেয়ন ও ভিসকস সুতায় তৈরি এই শাড়ি পাতলা ও আরামদায়ক। সব বয়সের নারীরা এটি স্বাচ্ছন্দ্যে পরতে পারেন। সিল্ক শাড়ির মতো দেখতে এটির রং হয় গাঢ় ও হালকা, যা সব ঋতুতেই পরা যায়।
কুমিল্লার খাদি শাড়ি
কুমিল্লার খাদি শাড়ি খুবই জনপ্রিয়। জেলার চান্দিনায় খাদি শাড়ির আদি নিবাস। তাঁতিরা চরকায় সুতা কেটে খাদি সুতার সঙ্গে কটন সুতার মিশ্রণে নকশা বুনে তৈরি করে এই শাড়ি, যা শুধুমাত্র কুমিল্লায় পাওয়া যায়।