ঘরের পৌষ্য ছোট্ট বিড়ালটির যত্ন নেবেন যেভাবে

বিড়াল! আদুরে চোখে তাকিয়ে থাকা এই ছোট্ট প্রাণীটি যেকোনো বিড়ালপ্রেমীর জীবনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠে। তার যত্ন, খেয়াল-পরিচর্যা এক সময় শিশুর মতই নিবিড় হয়ে দাঁড়ায়। বিড়াল শুধু আদরেই বাঁচে না, তার রয়েছে পরিপূর্ণ যত্ন, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার প্রয়োজন।
সময় দিন, সঙ্গ দিন: মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা
বিড়ালের অন্যতম চাহিদা হচ্ছে সঙ্গ। একাকীত্ব ওকে বিষণ্ণ করে তোলে। তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় তার সঙ্গে কাটান, খেলুন, আদর করুন। খেলনার দোকানে পাওয়া নানা রকম খেলনা কিনে তাকে দিতে পারেন। দিনে একবার হলেও ছাদে বা বারান্দায় একটু ঘোরার সুযোগ দিন। এতে ওর মন ভালো থাকবে ও পরিবেশ-পরিচিতি বাড়বে, যা তার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
যদি ঘর ফাঁকা রেখে বাইরে যান, তাহলে অবশ্যই পরিষ্কার খাবার পানি ও পর্যাপ্ত খাবার রেখে যেতে ভুলবেন না। শুকনো ক্যাটফুড এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে, যা দীর্ঘসময় টিকে থাকে। বিড়াল আঁচড়াতে ভালোবাসে তাই ঘরের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আঁচড়ানোর ব্যবস্থা রাখা দরকার। আঁচড়ানোর স্টিক বা কাঠের উপর পাটের দড়ি পেঁচিয়ে একটি জোন তৈরি করে দিন। এতে সোফা বা কুশনের ক্ষতি কম হবে।
বাসাকে ক্যাট-প্রুফ করুন: নিরাপত্তা সবার আগে
বিড়ালের নিরাপত্তার জন্য ঘরকে ‘ক্যাট-প্রুফ’ করে তোলা জরুরি। জানালায় জাল বসানো, বাথরুমে ফাঁকা ফাঁস বন্ধ রাখা এবং রাসায়নিক দ্রব্য ও আগুনের কাছ থেকে বিড়ালকে দূরে রাখা দরকার। একদম ছোট বিড়ালের বাচ্চা থাকলে মা বিড়াল থেকে আলাদা করা উচিত নয়। কারণ তাদের শরীরের উষ্ণতায় বেঁচে থাকার শক্তি পায় শিশুরা।
টিকা ও স্বাস্থ্য: সুস্থতার চাবিকাঠি
দুই মাস বয়সে বিড়ালকে প্রথম কম্বাইন্ড টিকা দেওয়া উচিত এবং ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে বুস্টার ডোজ দেওয়া প্রয়োজন। তিন মাস বয়সে জলাতঙ্কের টিকা দিন। স্প্রে (মেয়ে বিড়াল) ও নিউটার (ছেলে বিড়াল) করলে তারা আর বাচ্চা দিতে পারবে না ফলে আগ্রাসী আচরণ কমে এবং শারীরিকভাবে স্থিতিশীল থাকে। অবশ্যই অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শে এসব কাজ করাতে হবে।
খাবার ও পানি: পরিষ্কার ও পুষ্টিকর
বিড়ালের খাবার হতে হবে পরিষ্কার ও পুষ্টিকর। প্রতিদিন পানি বদলে দিন এবং আলাদা পাত্রে পানি ও খাবার দিন। ঘরে তৈরি খাবারই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধ চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, কলিজা, মাছ, ডিম ও বিভিন্ন সবজি যেমন কুমড়া, লাউ, গাজর, ব্রকোলি ইত্যাদি দিতে পারেন। বাজারে পাওয়া ক্যাটফুডও নিরাপদ বিকল্প হতে পারে। বারান্দায় ঘাস রাখতে পারেন বিড়াল প্রয়োজনে সেগুলো খেয়ে বমির মাধ্যমে বিষাক্ত কিছু দূর করে ফেলে। তবে কাঁচা মাছ-মাংস, আঙুর, চকোলেট, চা-কফি, অ্যালকোহল ও চিনি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ছোট্ট বিড়াল মায়ের দুধ না পেলে তরল দুধের সঙ্গে পানি মিশিয়ে খাওয়ানো যায়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: যত্নেই ভালো থাকে
বিড়ালের মলমূত্রের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে লিটার বক্স রাখুন। ওকে সেই জায়গায় অভ্যস্ত করুন। সপ্তাহে একবার লিটার পরিবর্তন করুন। গোসল করাতে বিড়ালের জন্য উপযুক্ত সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। নখ কাটতে হলে খুব গভীর নয়, কেবল ধার কমানো পর্যন্ত কাটুন। বিড়ালকে একা ঘরে রাখলে ন্যূনতম আলো নিশ্চিত করুন। কোথাও ঘুরতে গেলে ওকে এমন কারো কাছে রাখুন, যে পরিচিত ও নিরাপদ পরিবেশ দিতে পারে।
বিড়াল পালন শুধু খেয়ালের বিষয় নয়, এটি একটি দায়িত্বপূর্ণ সম্পর্ক, যার জন্য সচেতনতা ও ভালোবাসার মিশ্রণ দরকার। একবার যদি তাকে আপন করে নেন, সে হয়ে উঠবে আপনার জীবনের শান্তির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।