বেদনা-ক্লান্তি দমাতে পারেনি সামসুল আলমের সুরসাধনা
নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাঁর। তবু কণ্ঠে ধরে রেখেছেন সুরের জাদু। বাজান নানা বাদ্যযন্ত্র। তাঁর কণ্ঠে বাউল গানের মূর্চ্ছনায় প্রায়ই মেতে ওঠেন এলাকার সংগীতপ্রেমীরা। এলাকার উৎসব-পার্বণেও আছে তাঁর নাম-ডাক। পেশায় রিকশাচালক এই শিল্পী তাঁর শখের যানবাহন চালাতে চালাতেও গেয়ে ওঠেন গান। ইউটিউব, ফেসবুকেও আছে বেশ ফ্যান ফলোয়ার। কোনো বেদনা ও ক্লান্তি দমাতে পারেনি এই শিল্পীর সুরসাধনা।
বলছিলাম কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের জগন্নাথপুর দক্ষিণপাড়ার সামসুল আলমের কথা। তাঁর সুরেলা কণ্ঠের আসর জমে ওঠে রাতে, চলে সুরের সাধনা।
স্থানীয় ‘সাধক মারফত আলী বাউল শিল্পীগোষ্ঠী’ নামে ছোট্ট একটি টিনশেড ঘরে দেখা মেলে সামসুল আলমের। সেখানে বাউল নয়ন উস্তাদের তত্ত্বাবধানে ২০ থেকে ২৫ জন কণ্ঠশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পী সংগীতচর্চা করেন। কোনো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেলে দলগতভাবে অংশ নেন তাঁরা।
দুই মেয়ে, এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বাউল সামসুল আলমের সংসার। তিনি জানান, দারিদ্র্য তাঁর প্রতিদিনের সঙ্গী হলেও সংগীতচর্চায় কখনও বাঁধা হতে দেননি। পরিবার পরিজন, প্রতিবেশি সবাই তাঁকে উৎসাহ দেন। তাঁর স্বপ্ন—একদিন তিনি সারা বিশ্বে দেশের হয়ে বাউল গানের নেতৃত্ব দেবেন। এইজন্য তিনি তাঁর প্রতিভা বিকাশের জন্য সুযোগ চান। মাধ্যম চান।
দরিদ্র বাউলশিল্পী সামসুল আলমের সুর জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা এবং আর্থিক সহায়তায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান এলাকার শিক্ষক আব্দুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘বাউলশিল্পী সামসুল আলম কারও কাছে হাত না পেতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এটি আমাদের সমাজের জন্য উদাহরণ হতে পারে।’
নয়ন বাউলের বাবা মারফত আলী ছিলেন প্রখ্যাত বাউলশিল্পী। বাবার স্মরণে তিনি ২০০০ সালে স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলেন ‘সাধক মারফত আলী বাউল শিল্পীগোষ্ঠী’ নামের সংগঠনটি।
সংগঠনের প্রধান উস্তাদ নয়ন বাউল জানান, এখানে ২০ থেকে ২৫ জন শিল্পী কলাকুশলী আছেন। এরমধ্যে সামসুল আলম প্রধানতম শিল্পী। ইতোমধ্যে নিজের লেখা ও সুরে বেশ কিছু গান গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সামসুল।
কবি, গীতিকার ও সুরকার কাজল কান্তি পালের লেখা বেশ কিছু গান গেয়েছেন সামসুল আলম। সেগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে উল্লেখ করে কাজল জানান, সামসুল আলম একজন প্রতিভাবান গুণী শিল্পী। তাঁর কণ্ঠে মাদকতা আছে। এমন গুণী শিল্পীর পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন কাজল কান্তি পাল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, বর্তমান সরকার সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। দেশব্যাপী শিল্পী ও সাহিত্যিকদের নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এই বাউলশিল্পী আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করলে তিনি সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। এ ছাড়া তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।