কমেছে মামলা গ্রেপ্তার জামিন, আদালতে নেই কর্মচাঞ্চল্য
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর সময় পেরিয়েছে তিন মাস। আজ ৮ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের শপথেরও তিন মাস। এমন এমন দিনে অনেকের কৌতুহল আদালতপাড়া নিয়ে। নানা ঘটনায় আলোচিত সমালোচিত এই অঙ্গন নিয়ে চোখ রাখে এনটিভি অনলাইনও। জানা যায়, ঢাকাতে নতুন মামলা দায়েরের সংখ্যা কমেছে। গত তিন মাসে আসেনি মামলার তদন্ত প্রতিবেদনও। এদিকে, গত সরকার সংশ্লিষ্ট আসামিরা ছাড়া চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ, প্রতারণা, মারামারি, জালিয়াতিসহ অন্যান্য খাতের নতুন আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা একবারে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
গত ৩০ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ও সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সাধারণত থানায় মামলা দায়েরের পরে মামলার নথি থানা থেকে জিআর শাখায় পাঠানো হয়। সেখানে আসামির রিমান্ড বা জামিন শুনানির তদারকি করা হয়। রাজধানী ঢাকা মহানগরে ৫০টি থানার মধ্যে রয়েছে রমনা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ,কলাবাগান, কোতায়ালী, লালবাগ, বংশাল, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর, সূত্রাপুর, মতিঝিল, পল্টন, সবুজবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, মুগদা, শাহাজাহানপুর, ওয়ারী, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কদমতলী, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর, হাতিরঝিল, মিরপুর মডেল, শাহ আলী, পল্লবী, কাফরুল, রুপনগর, ভাষাণটেক, দারুস সালাম, গুলশান, বাড্ডা, খিলক্ষেত, ক্যান্টনমেন্ট, ভাটারা, বনানী, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, তুরাগ, বিমানবন্দর, দক্ষিণখান ও উত্তরখান থানা। সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় গিয়ে যায়, সেখানে ঢাকা মহানগরের ৫০ থানার প্রতিনিধি আছেন।
প্রায় সবই রাজনৈতিক মামলা
সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা (জিআর) শাখায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ‘বেশির ভাগ মামলা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা। আদালতের জিআরও শাখায় এগুলো রাজনৈতিক মামলা হিসেবেই পরিচিত। এ ছাড়া গত তিন মাসে আদালতে পুরাতন মামলা বা জুলাই-আগস্টের সহিসংতার ঘটনায় কোন মামলার চার্জশিট/চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি। এমনকি, আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা শূন্যতে নেমে এসেছে।
থানায় মামলা কমে এক-তৃতীয়াংশ
মিরপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) উপপরিদর্শক জালাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত তিনমাসে আদালতে মামলা দায়েরের সংখ্যা অনেক কমে গেছে, যা সংখ্যা বিবেচনায় আগের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ। তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে ঢাকার বেশির ভাগ মামলা আদালতে দায়ের করা হয়। থানা থেকে শুধু মামলাগুলো এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে আদালতের জিআর শাখায় পাঠানো হয়, সেখানে নতুন মামলা নম্বর হিসেবে এন্ট্রি হয়।’
জিআরও জালাল আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের আগে ঢাকায় প্রতিদিন অনেক মামলা হতো। এরমধ্যে মাদক, ছিনতাই, প্রতারণা, নারী নির্যাতন, মারামারি, হত্যাচেষ্টা, খুন, ডাকাতি, চুরিসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের হতো। কিন্তু বর্তমানে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে শুধু সহিংসতার মামলা হচ্ছে। সাধারণ অপরাধের জড়িত মামলা কম। তিনি বলেন, তবে চলতি সপ্তাহ থেকে যৌথবাহিনীর অভিযানের পর থেকে কিছু মাদক ও ছিনতাইয়ের মামলাও হচ্ছে।
জালাল আরও বলেন, তিন মাসে মিরপুর থানায় ৩৮ ও শেরেবাংলা নগর থানায় ২৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাধারণ আসামির রিমান্ড, জামিন শুনানি কমেছে
সূত্রাপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) রণপ কুমার ভক্ত বলেন, ‘গত তিন মাসে আদালতে মামলার সংখ্যা একবারে কমে গেছে। থানা থেকে নতুন কোন মামলাই আসছে না। এ ছাড়া আগে প্রতিদিন আসামি গ্রেপ্তার হলেও এখন হাতে গোনা দুই একজন গ্রেপ্তার হন। জিআর শাখায় কাজ কমে গেছে বলে জানান তিনি।’ তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে থানা ভেঙে দেওয়ার কারণে মামলা কম হয়েছে। এ ছাড়া থানায় পুলিশ কর্মকর্তা না থাকার কারণেও মামলা কম হয়েছে বলে শুনেছি। আদালতে আগের মতো রিমান্ড, জামিন শুনানি বা কর্মচাঞ্চল্য নেই।’
জিআর তথ্যে তিন মাসে যতো মামলা
খিলগাঁও সাধারণ নিবন্ধন শাখায় (জিআর) দেখা গেছে, গত আগস্ট মাসে মাত্র দুটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১০৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তেজগাঁও জিআর শাখায় দেখা গেছে, তিন মাসে ২৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাতিরঝিলে ১৬টি, মিরপুর থানায় ৩৮ ও শেরেবাংলা নগর থানায় ২৫টি, কদমতলী থানায় ৯২টি, হাজারীবাগ থানায় ৩৯টি, কোতোয়ালি থানায় ১৬টি, বংশাল থানায় ১৫টি, পল্লবী থানায় ৭৫টি, কাফরুল থানায় ৩৯টি, ভাষানটেক থানায় ২০টি, বাড্ডা থানায় ২৭টিসহ অন্য বাকিসব থানায় গড়ে ৩০-৩৫টি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব থানায় গণঅভ্যুত্থানের আগে প্রতিদিন গড়ে ৭/৮টি মামলা দায়ের করা হতো। আর মাসে তিনশতের ওপরে মামলা দায়ের হতো।
আসামি গ্রেপ্তারে গিয়ে বিপাকে পুলিশ
ভূমি প্রতিরোধ আইনে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন তোফাজ্জলনামের এক ব্যক্তি। তার আইনজীবী কামরুজ্জামান সুমন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত আগস্ট মাসে আদালত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় পাঠানো হয়। থানাতে অনেক অনুরোধের পরে পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করতে যায়, কিন্তু সেখানে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ। আসামি পুলিশ সদস্যদের ডাকাত বলে সেনাবাহীনিকে ফোন করেন। সেনাবাহিনী তখন এসে পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও পরেন। পরে যখন দেখেন আদালতের ওয়ারেন্ট রয়েছে এবং প্রকৃত পুলিশ, সে সময় পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে তোফাজ্জল বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা আগস্টের পরে অনেকটা অসহায়ের মতো রয়েছে। তারা আমাদের সাহায্য করতে চাইলেও পরিস্থিতির কারণে সাহায্য করতে পারছে না। তিনি বলেন, পুলিশের পূর্বের ন্যায় আত্মবিশ্বাস ফেরত আসলে মানুষ আইনের সুফল পাবেন।
আসামি গ্রেপ্তারে অনীহা পুলিশের
আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের অনিহার অভিযোগ উঠেছে। নামপ্রকাশের অনিচ্ছুক পুলিশ সূত্র বলছে, এখনও তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যদিও সেনাবাহিনীকে তাদের সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। তারপরও তারা টহলে যেতে ততোটা নির্ভার হচ্ছেন না। নির্ধারিত পোশাক পরা দেখলে এখনও মানুষ তাদের দিকে অন্যভাবে তাকার। যদিও জুলাই আগস্টের ঘটনার সঙ্গে সব পুলিশ জড়িত না। ওই সূত্রের দাবি, পুলিশ জনতার জন্য তৈরি, তাদের নিরাপত্তার জন্য এখন তারা প্রস্তুত, তবে জনতার সমর্থন ও তাদের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসহায়।
পুলিশের গ্রেপ্তারি কাজে অনীহা নিয়ে সুজন মোল্লা নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘গত ১১ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতে তার বৃদ্ধ বাবাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তিনি বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলা দায়েরের পরে আদালত এফআইআর (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) হিসেবে গ্রহণের জন্য থানাকে নির্দেশ দেন। থানা কর্তৃপক্ষ এফআইআর গ্রহণ করলেও আসামি গ্রেপ্তার করছেন না। তিনি তার অভিযোগে আরও বলেন, শ্যামপুর থানার ওসি স্যারের কাছে কয়েকবার গিয়েছি। তাকে আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে বলা হলে তিনি বলেন, ‘ থানায় এখন অস্ত্র নেই। গণঅভ্যুত্থানের পরে বেশিরভাগ অস্ত্র লুট হয়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের ফোর্সের সংখ্যাও নেই। এ সময় আসামি গ্রেপ্তার করা অনিরাপদ।
সুজন আরও বলেন, আমরা মামলা করে উল্টা বিপদের মধ্যে আছি। থানা আসামি গ্রেপ্তার না করার কারণে আসামি ঊল্টো আমাদের হয়রানি করছেন। তবে, বর্তমান বাস্তব অবস্থাও বুঝতে পারছি।
আদালতেও কমেছে মামলা দায়ের
ঢাকার সিএমএম আদালতের ৩৪টি এজলাসে গিয়ে দেখা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের পরে অনেক মামলার সংখ্যা কমে গেছে। গণঅভ্যুত্থানের আগে যেখানে প্রতিদিন ৮-১০টা মামলা হতো সেখানে প্রতিদিন গড়ে ২-৩টি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে আইনজীবীরা বলেন, ‘আদালতে মামলা দায়ের করা হলে আদালত বেশির ভাগ মামলাই তদন্ত দেন। এখন থানায় তদন্ত সংক্রান্ত কাজ সে ভাবে হচ্ছে না বিধায় এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলেও পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করছেনা বিধায় বাদীর মধ্যে একধরনের মামলা দায়েরে অনীহা দেখা গেছে।’
সিএমএম আদালতের ২৮নং আদালতে গিয়ে দেখা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের পরে ৬০টি মামলা, ২৭নং আদালতে ২৭৭টি, ৬ নং আদালতে ২১৯টি, ৫নং আদালতে ৬৪টি, ৪নং আদালতে ১৮৩টি, ৭নং আদালতে ৩৬৯, ৮নং ১৪৯টি, ৯নং আদালতে ৬১৭টি, ১০নং আদালতে ৪০০টি, ১১নং আদালতে ১৯১টি, ১২নং আদালতে ১৬৪টি, ১৩নং আদালতে ৭৬টি, ১৪নং আদালতে ৩৫৮টি, ১৫নং আদালতে ৬০৪টি, ১৬নং আদালতে ১৪৮টি, ১৭নং আদালতে ৪১৯টি, ২০নং আদালতে ২৭৬, ২১নং আদালতে ১২১টি, ২২নং আদালতে ৬৮টি, ২৩নং আদালতে ১১৮, ২৪নং আদালতে ৩৮৪, ২৫নং আদালতে ১৯৬টি, ২৬নং আদালতে ৭০টিসহ বিভিন্ন আদালতে আরও মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কমেছে জামিন
ঢাকার সিএমএম আদালতে জামিনও খুব কম হচ্ছে। সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আদালতে থানার মামলায় জামিন খুব কম হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘থানায় নতুন মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছেন কম ও গণঅভ্যুত্থানের আগে গ্রেপ্তার অনেক আসামির ইতোমধ্যে জামিন হয়ে গেছে।সেগুলো বেশির ভাগই সাবেক সরকারের আমলে রাজনৈতিক মামলা ছিল।
আদালতের ডেসপাশ শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে ঢাকার আদালত থেকে ২০০ জনের বেশি আসামি জামিন পেতেন । তাদের মুক্তির জন্য কারাগারে জামিননামা পাঠানো হতো। কিন্তু এখন মাত্র ৫০ থেকে ৭০ জনের জামিন হয়, যা জামিন প্রায় অর্ধেকের কম হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকার আদালতের ফৌজাদরী আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মনসুর রিপন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে থানা ভেঙে দেওয়ার কারণে ও পুলিশ সদস্য কিছু মারা যাওয়ার কারণে মামলা দায়েরের সংখ্যা কমে গেছে। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে পুলিশ থানায় না থাকার কারণে ও থানায় লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকার কারণে অনেক মামলা হয়নি। তিনি বলেন, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ও নতুন পুলিশ সদস্য বদলি হয়ে আসার কারণে মামলা দায়েরের সংখ্যা কমে গেছে।’
ফৌজদারী আইনজীবীদের নেই মামলা
আদালতের জুনিয়র আইনজীবী মাহফুজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ফৌজদারী আইনজীবীদের হাতে একবারে মামলা নেই। তবে, সিভিল প্রেকটিস যারা করেন তারা কিছু মামলা দায়ের করতে পারছেন। থানা সঠিক ভাবে কাজ না করায় এবং পুলিশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণে মামলা আদালতে কম হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনজীবীরা তো মামলার উপরে নির্ভরশীল। তাদের আর্থিক বিষয় মামলার আসামি গ্রেপ্তারের সাথে জড়িত। আদালতে নতুন মামলা না আসায় আইনজীবীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে বলে জানান তিনি।’
চলছে পুরাতন মামলার কার্যকমই
ঢাকার সিএমএম আদালতের সহকারী বেঞ্চ সহকারী রিপন মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত তিন মাসে আদালতে কোনো মামলার চার্জশিট না আসায় বিচারের জন্যও নতুন মামলা আসছে না। পুরাতন মামলার কার্যকমই চলছে। তবে নতুন কিছু মামলা আদালতে দায়ের করা হয়েছে।
রিপন মিয়া আরও বলেন, বেশির ভাগই জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সহিংসতার মামলা। তিনি বলেন, গত তিনমাস ৬৪টি মামলা আদালতে দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে চেক প্রতারণা, যৌতুক নিরোধ আইন, প্রতারণা, জালিয়াতি এবং জুলাই-আগস্টের সহিংসতার মামলা রয়েছে।
আদালতে আসছে না তদন্ত প্রতিবেদন
ঢাকার সিএমএম আদালতের সহকারী বেঞ্চ সহকারী রিপন মিয়া বলেন, আদালতে দায়ের করা মামলা গুলো বেশির ভাগই তদন্তে পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু থানা থেকে বা তদন্ত সংস্থা মামলার প্রতিবেদন বা রিপোর্ট আসছে না। এতে মামলার বিচারকাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ
ঢাকার আদালতে জিআরপি (ঢাকা রেলওয়ে) থানার এক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘এখন কোন অপরাধী গ্রেপ্তার করতে গেলে জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। কারণ, ভাসমান মাদক কারবারি, চোর-ছিনতাইকারি গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশ উল্টো বিপদের মুখে পড়ে। এ ছাড়া আদালতের ওয়ারেন্ট মোতাবেক আসামি গ্রেপ্তার করতে গেলেও বাধার মুখে পড়তে হয়। তবে, বর্তমানে সিনিয়র স্যারদের সহযোগিতায় পুলিশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিদিনই যৌথবাহিনীর অভিযানে আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে। দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে জানান তিনি।
বিচারিক মামলায় স্থবিরতা
গণঅভ্যুত্থানের পরে বিচারিক আদালতে সাক্ষীর অভাবে চাঞ্চল্যকর হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, নাশকতাসহ বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার বিচারে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ মামলার সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে আদালতে সাক্ষ্য কার্যক্রম চলছে না। আর এই কারণে মামলার জট বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
ফৌজদারী মামলা বিচারে হাজির করা যাচ্ছে না পুলিশ-সাক্ষীকে
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আড়াই মাস পরে আদালতে নতুন পিপি-জিপি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে সাবেক সরকারের জিপি-পিপিরা দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে আদালতে সাবেক সরকারের আমলের পিপিরা না আসায় মামলার বিচারকাজে বিলম্বিত হয়েছে। আদালত থেকে এখন সাক্ষী হাজিরের জন্য বিচারকরা সমন জারি করলেও থানা থেকে সমন সাক্ষীদের ঠিকানায় যাচ্ছে না। ফলে সাক্ষীরা জানেন না, তাদের মামলার হাজিরার তারিখ কবে। আর বেশিরভাগ সাক্ষীরা হলেন পুলিশ সদস্য।
পিপি আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা বদলি ও পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের কোনো ঠিকানা ট্রেস করা যাচ্ছে না। এতে মামলার ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, ফৌজদারী মামলা বিচারে সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।