ছানির আধুনিক চিকিৎসা কী?
চোখের প্রচলিত সমস্যার মধ্যে ছানি একটি। সাধারণত প্রবীণ বয়সে এটি হয়। ছানির অনেক আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই রয়েছে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪১৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম নজরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আই হাসপাতালের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ছানির আধুনিক চিকিৎসা বলতে কী বুঝি?
উত্তর : আসলে চোখের ছানির চিকিৎসা একটিই। সেটি হলো সার্জিক্যাল চিকিৎসা। এর কোনো মেডিকেল চিকিৎসা নেই। লেজার দিয়ে, ওষুধ দিয়ে বা চশমা দিয়ে ছানির চিকিৎসা করবে তা কিন্তু নেই।
কী অস্ত্রোপচার করা হয়? সেটা হলো, চোখের ভেতর যে লেন্সটা ঘোলা হয়ে গেছে, সেটি বের করতে হবে। বের করে ওই একই জায়গায় একটি লেন্স প্রতিস্থাপন করে দিচ্ছি। কৃত্রিম একটি লেন্স দিয়ে। এটা হলো অস্ত্রোপচার।
এখন যেই প্রশ্নটি আপনি করেছেন আধুনিক চিকিৎসা। আমরা কিছুদিন আগ পর্যন্ত এটা করতাম। লেন্সের আকার প্রায় ৮ থেকে ৯ মিলিমিটার। চোখের পাশে আট থেকে নয় মিলিমিটার ইনসিশন (ফুটো) দিয়ে, বের করতাম। এর পর ওখানে একটি লেন্স বসিয়ে দিতাম পরিষ্কার করার পর, এরপর সেলাই করে দিতাম। এটা কিছুদিন আগে ছিল। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে আমরা করেছি। এই পদ্ধতিকে বলা হতো ইসিসি। এরপর আসল ফ্যাকো ইমালসিফিকেশন। ফ্যাকো সার্জারি। যেটা আমরা প্রায় ২৫ বছর আগে বাংলাদেশেই শুরু করেছি। এই অস্ত্রোপচারটা কী? আমরা অত বড় ইনসিশন দিব না।
চোখের পাশে দুই থেকে তিন মিলিমিটার একটি ইনসিশন দিব। একে বলে ট্যানেল ইনসিশন। যখন এটা হয়ে গেল আমরা ওই টানেলের ভেতর দিয়ে ফ্যাকো ইমালসিফিকেশন মেশিনের সাহায্যে একে দুই ভাগ করব, চার ভাগ করব। গলিয়ে ফেলব। এরপর একে পরিষ্কার করে বের করব। এরপর ওই দুই মিলিমিটারের মধ্য দিয়ে আমরা একটি ভাজ করা যায় এমন একটি লেন্স এখানে প্রতিস্থাপন করব।
জায়গামতো প্রতিস্থাপন হয়ে যাবে। কোনো সেলাইয়ের প্রয়োজন নেই। রোগী খালি চোখে চলে আসবেন। এখন তো ইনজেকশনও দেওয়া হয় না। চোখে ড্রপ দিয়ে অবশ করে দেই। ইনজেকশন দেই না।
অস্ত্রোপচার হয়ে গেল, উনি খালি চোখে বাড়ি চলে যাবেন। আধা ঘণ্টার মধ্যে উনি বাড়ি চলে যাচ্ছেন। এই হলো আধুনিক চিকিৎসা ফ্যাকো সার্জারি। রোগীর ভোগান্তি অনেকটা কমে এসেছে। এটা এই যুগের একটি অস্ত্রোপচার। আন্তর্জাতিক মানের একটি অস্ত্রোপচার। তবে আমার মনে হয় এই কথাটা বলা সঙ্গত যে আধুনিক বলতে আরো একটি অস্ত্রোপচার আছে। সেটা হলো লেজার ক্যাটারেক্ট সার্জারি।
প্রশ্ন : সেটা কি বাংলাদেশে হচ্ছে?
উত্তর : বাংলাদেশ আই হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করছি। সেটা হলো লেজার ক্যাটারাক্ট সার্জারি। এটা কী জিনিস? এটা আসলে ফ্যাকো সার্জারির মতোই, তবে এর কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। আমরা এটা লেজারের সাহায্যে করি। আমি যদি আরেকটু বিস্তারিত বলি—যখন একটি অস্ত্রোপচার করি, তখন চাকু দিয়ে একটি ফুটো করে, চোখের ভেতর যে ছানি রয়েছে, তার সামনে গোল করে আমরা একটি অংশ কেটে নিয়ে আসি। এরপর বড় যে ছানিটা নয় মিলিমিটার, একে দুই ভাগ করি। চার ভাগ করি, ছয় ভাগ করি, আট ভাগ করি, এরপর পরিষ্কার করে নিয়ে আসি। লেন্স দেই।
এখন আমরা লেজারের ক্ষেত্রে কী করি? যেই ফুটোটা করছি এটা লেজার করে দিচ্ছি। এই যে ভেতরে গোল করে কাটছি, একে আমি হাতে করলে কখনোই এটা গোল হবে না। কিছু না কিছু এদিক ওদিক হবে। সাইজ হয়তো আমি পাঁচ দশমিক পাঁচ মিলিমিটার করব। তবে সেটা কখনোই হবে না। কিন্তু লেজারে করলে একদম পাঁচ দশমিক পাঁচ হবে। পরিপূর্ণতা পাবে ভালোভাবে। নিঁখুত অস্ত্রোপচারের জন্য লেজার গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা দেখেছি যারা লেজারে অস্ত্রোপচার করেন তারা খুব সুখী। তারা চোখেও ভালো দেখেন, মান অনেক ভালো হয়। এই সুযোগটা বাংলাদেশে আছে। যাদের সুযোগ আছে তারা করছেন। ভালো ফলাফল পাচ্ছেন।
প্রশ্ন : এই চিকিৎসাটা কি বেশ ব্যয়বহুল?
উত্তর : হ্যাঁ, ব্যয়বহুল। কারণ কোটি কোটি টাকা একটি মেশিনের দাম। আই হাসপাতালে আছে এটা ঠিকই, তবে সবাইকে আমরা এই সুবিধাটা দিতে পারি না। কারণ এটা অনেক দামি। তবে যাদের সুবিধা রয়েছে তাদের বিদেশে না গিয়ে আমাদের দেশে এই সেবা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেই।