ঈদে শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের করণীয়
ঈদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা খুব জরুরি। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৪৯৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. রৌশনী জাহান। বর্তমানে তিনি শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজের রেসপিরেটরি মেডিসিস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ এগুলো যাদের আছে তাদের কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর : এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে। এটা যদি আমরা মাথায় না রাখি, খেয়াল না রাখি, আর সেই মতো কাজ না করি, তাহলে কিন্তু আমাদের ঈদের আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে। আমি যেটি বলব যে আমাদের একটি পরিমিতবোধ থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখতে হবে। সে জন্য কিছু কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে যে আমরা যেটা পেলাম সেটাই খেয়ে ফেলব বা অনেক মজার মজার জিনিস খাব, এই বিষয়ে আমাদের সংযত হতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সংযত হওয়া।
প্রশ্ন : যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে লাল মাংস স্বাস্থ্যকর কিছু নয়। তাদের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে?
উত্তর : আসলে আনন্দটা তো উপভোগ করতে হবে। কিন্তু সেটা করতে হলে আমাদের নিজেদের প্রশ্ন রাখতে হবে, আমি কতটুকু পরিমাণ করলে ভালো থাকতে পারব, আনন্দটা পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারব। বিশেষ করে এই বার যে ঈদটা সেখানে আমাদের একটা কোরবানির বিষয় আছে। তবে এখানে মাথায় রাখতে হবে যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের তো অ্যালার্জিজনিত একটি রোগের বিষয় আছে। অনেক সময় লাল মাংস কিন্তু উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। এই জিনিসটা যাতে এত বেশি খেয়ে না ফেলে, যে এটা তার শ্বাসকষ্টকে বাড়িয়ে দেবে। এই সময় যেটা মনে রাখতে হবে রোগী আগে থেকে চিকিৎসা যেটা পেয়ে আসত, সেটা সঠিক মাত্রায় সঠিকভাবে নিচ্ছে কি না। এটা তাকে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা তো আবার বেড়াতে যাই ঈদে, আনন্দ উপভোগ করার জন্য গ্রামের বাড়ি যাই, তখন আমার সাথে করে ওষুধগুলো নেওয়া হলো কি না। আমাদের মনে রাখতে হবে যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে তাদের সংযত থাকার ব্যাপারটা। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া চলবে না, উপভোগ করতে হবে। সবই খাব। এক পিস মাংস খেলাম। আর ওষুধটা যেন অবশ্যই ঠিক থাকে। এটা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায় ঈদ উপলক্ষে যারা গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে, শিশুদের অনেক সময় খেয়াল রাখতে পারে না। পানিতে ডুবে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যেহেতু নদী-নালা খাল-বিল পানিতে ভরে গেছে। তাই বাবা-মায়ের জন্য পরামর্শ কী থাকবে?
উত্তর : এ বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ছোট বাচ্চাদের তো অতটা জ্ঞান থাকে না, তাই তাদের এই বিষয়ে জ্ঞানটা দিতে হবে বা ওদের সাথে কাউকে দিতে হবে। একা না ছাড়াই ভালো। কেউ যেন সাথে থাকে সেটা খেয়াল করতে হবে। আর অবশ্যই নিজে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে দেওয়া, এই ধরনের দায়িত্বগুলো ছেড়ে দিলে হবে না। যখনই সে দলবল মিলে যাচ্ছে, একটু খেয়াল রাখলে আমার মনে হয় আনন্দটা পুরোপুরি করা যাবে।
প্রশ্ন : বয়স্ক যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী আছে, তাদের এই সময়টায় মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাদের ক্ষেত্রে কী বলবেন?
উত্তর : আমি যেটা বলব একেবারে সবকিছু বন্ধ করে দিলে তো কোনো আনন্দই পরিপূর্ণ হয় না, যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের যেটা করতে হবে, ওষুধটা নিয়মিত খেতে হবে। তাদের যে হাঁটা চলা বা ব্যায়ামের যেই বিষয়টি, বন্ধ রাখলে চলবে না। ওষুধ চলা অবস্থায় নির্দিষ্ট মাত্রায় সে কিছু খেতে পারবে। এই সময় যেহেতু সে এসব খাচ্ছে, তাই তার হাঁটাচলা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া উচিত হবে। অনেকে এটা ভুলে যায়। হাঁটা বন্ধ করে দেয়। ওগুলো ঠিক রেখে ওষুধটা ঠিকভাবে চললে, তাহলে সেমাই বা মিষ্টি খেতে পারে। একটা মিষ্টি তো খুব একটা ক্ষতি করবে না। অবশ্যই পরিমিতি বোধ বজায় রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।