মাথায় আঘাত পেলে দ্রুত কী করবেন?
সড়ক দুর্ঘটনা বা উপর থেকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মানুষ মাথায় আঘাত পায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৭৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. জিল্লুর রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : সাধারণত কোন কোন কারণে মাথায় আঘাতের ঘটনা ঘটে থাকে?
উত্তর : আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা হলো একটি বড় কারণ। এ ছাড়া খেলাধুলা করার সময় আঘাত, উপর থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার কারণে মাথায় আঘাতের ঘটনা ঘটে। গাছ ভেঙে যাওয়া বা ছাদের ওপর কিছু ভেঙে পড়া, আঘাত অনেক সময় মারামারি থেকে হতে পারে। এ ধরনের কারণের জন্য মাথায় আঘাতের ঘটনা ঘটে।
প্রশ্ন : সাধারণত আপনাদের কাছে যখন এসব রোগী আসে, মাথায় ঠিক কোন জায়গার আঘাত নিয়ে আসে?
উত্তর : সাধারণত মাথার যেকোনো জায়গায় আঘাত লাগতে পারে। সামনে এবং পাশে হয়। এ ছাড়া পেছনেও হতে পারে।
প্রশ্ন : মাথায় আঘাত পেলে তাৎক্ষণিকভাবে করণীয় কী?
উত্তর : প্রাথমিক অবস্থায় আঘাত পাওয়ার পরপরই, প্রাথমিক অবস্থায় যে আঘাতপ্রাপ্ত হলো তাকে সমান জায়গার মধ্যে শুইয়ে দেওয়া উচিত। এর পর তার শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথার অবস্থা এই অবস্থাগুলো ঠিক রাখতে হয়। কাত করে রাখার পর দেখা যায় মাথায় আঘাতের পর যখন অজ্ঞান হয়ে যায় বা বমি যদি করে, যদি কাত করে থাকে বমিটা বের হয়ে যেতে পারে। এ জন্য প্রাথমিক অবস্থায় যদি শ্বাসনালিকে পরিষ্কার করতে পারি, তাহলে দেখা যায় প্রাথমিক ধাক্কাটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। পরবর্তীকালে যদি হাসপাতালে যেতে হয়, হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক গিয়ে তাকে মাথায় আঘাতটা বুঝতে পারে। সে অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা দিতে পারে। সেখানে সম্ভব না হলে উপযুক্ত হাসপাতালে রেফার করলে নিউরোসার্জারি বিভাগ থাকলে বা যেখানে আছে, সেখানে ব্যবহার করলে, তখন চিকিৎসা করলে ভালো হয়।
প্রশ্ন : কীভাবে আপনারা সমস্যা খুঁজে বের করেন?
উত্তর : মাথায় আঘাতের পর তার অজ্ঞানের অবস্থা, একে বলে গ্লাসগো কোমাস্কেল। আমরা প্রথমে তাকে অজ্ঞানের মাত্রাটা নিরূপণ করার চেষ্টা করি। আমরা সাধারণত তাকে বলি গ্লাসগো কমাস্কেল একটা স্কেলিং পদ্ধতি, যেখানে সাধারণত অজ্ঞানের মাত্রা ৩ থেকে ১৫ পর্যন্ত হয়। খারাপের দিকে গেলে আস্তে আস্তে স্কেল কমতে থাকে। ৩ হলে সবচেয়ে খারাপের দিকে যায়। গ্রেডিং করে আমরা দেখতে চাই, রোগীর অবস্থাটা কী রকম। তার কি মডারেট আঘাত, নাকি জটিল আঘাত। গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
প্রশ্ন : চিকিৎসা কীভাবে নির্ধারণ করেন আপনারা?
উত্তর : নিরূপণ এবং চিকিৎসা একই সঙ্গে চলতে থাকে। রোগীরা যখন দুর্ঘটনা নিয়ে আসে, তখন তো বেশ খারাপ অবস্থাতেই আসেন অনেকে। তখন আমরা রোগীকে পরীক্ষা করি। পাশাপাশি চিকিৎসা শুরু করতে হয়। শুরুতেই আমরা যখন দেখি যে রোগী অজ্ঞান আছে, তাহলে আমরা একটি স্যালাইন শুরু করি। অজ্ঞানের মাত্রা নির্ণয় করার পর অবস্থা দেখি। যদি কোনো শ্বাসকষ্ট হয়, এর কারণ নিরূপণ করার চেষ্টা করি। পাশাপাশি তরল শুরু করার পর আমরা সম্পূর্ণভাবে রোগীকে পরীক্ষা করি।
কারণ, মাথায় আঘাতের রোগী যদি আসে, তখন যে শুধু মাথায় আঘাত করতে হয়, সেটি কিন্তু নয়। তার শরীরের অন্যান্য জায়গায় আঘাত পেতে পারে। ঘাড়ে আঘাত হতে পারে, লিম্ফে আঘাত হতে পারে। পেটে আঘাত হতে পারে। সে অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি।