ধান মাড়াইয়ের সময় কৃষকরা চোখে আঘাত পেলে কী করবেন?
আমাদের দেশে অনেক সময় ধান মাড়াইয়ের সময় কৃষকরা চোখে আঘাত পান। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়? এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৫৮৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শারফুদ্দিন আহম্মেদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং কমিউনিটি ও অপথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কৃষকরা যদি হঠাৎ চোখে আঘাত পান ধান মাড়াইয়ের সময়, তাৎক্ষণিকভাবে কী করণীয়?
উত্তর: এমন কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের উচিত হলো চোখকে পরিষ্কার করবে। কোনো কিছু ঢুকলে বের করার জন্য নিজেরা চেষ্টা না করে আশপাশের চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাবে। আর পরিষ্কার পানি দিয়ে বারবার চোখ পরিষ্কার করে ফেলবে। এরপর চোখ ঢেকে সঙ্গে সঙ্গে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাবে। ধানের পাতা বা পাটের পাতা চোখে বাড়ি লাগলে ফাঙ্গাল কর্নিয়াল আলসার হয়। এব্রেশন হলে সেটা যদি সংক্রমণ না হয়, তাহলে অনেক লোকের অন্ধত্ব দূর হবে। আর একটি জিনিস করা যায়, সেটি হলো সুরক্ষা। যেমন লেদ মেশিন ব্যবহারের সময় কৃষকরা গ্লাস ব্যবহার করেন।
আমাদের কৃষকরা কিন্তু কোনো গ্লাস ব্যবহার করেন না। আমরা যদি পাওয়ারও দিই, তাহলে তাঁরা বলেন, ‘না না স্যার চশমা দেবেন না। আমি কৃষক চশমা কেন পরব?’ তবে এই চোখের ঘা রোধ করতে যখন সে মাঠে কাজ করবে, যদি একটি কালো চশমা, অথবা জিরো পাওয়ারের যে কোনো চশমা পরে, মানে বাইরে থেকে কোনো কিছু ঢুকবে না, এ জন্য একটি চশমা ব্যবহার করে অনেক লোকের অন্ধত্ব দূর হয়ে যাবে। ব্যাকটেরিয়াল কর্নিয়াল আলসার আছে। ভাইরাল আলসার আছে। ফাঙ্গাল আছে। ফাঙ্গালের কথাই কিন্তু আমি বললাম। কৃষকদের সাধারণত এটা হয়।
কর্নিয়াল আলসারের যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হয়, অপচিকিৎসা করা হলে কিন্তু চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। সেই ক্ষেত্রে অসতর্ক হওয়া যাবে না। অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ব্যবহার করতে হবে। তবে সেটি বলবে চক্ষু বিশেষজ্ঞ। নিজেরা কোনো ফার্মেসি থেকে কিনে চোখের ওষুধ ব্যবহার করবেন না। আরেকটি বিষয় হলো যে ঘা হচ্ছে, প্রচুর ময়লা হয় চোখে এবং তার চোখে যদি অল্প কিছুদিনের মধ্যে পাতলা দুধের মতো জমে, একে আমরা ব্যাকটেরিয়াল কর্নিয়াল আলসার বলি। চক্ষু বিশেষজ্ঞ এর চিকিৎসা করবেন। এটি বাইরে থেকে যাওয়া জিনিসটিকে দূর করছে না। আবার সঙ্গে ধুলাবালির মধ্যে কাজ করছে, ময়লা যাচ্ছে, ধুলাবালি হচ্ছে। এগুলোতে ব্যাকটেরিয়াল কর্নিয়াল আলসার হতে পারে। আবার সিজনাল ভাইরাল ক্যারাটাইটিস হয়। এটি চোখ ওঠার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এমনি ভাইরাসে হারপিস জোস্টার, হারপিস সিমপ্লেক্স, এডিনোভাইরাস—এ রকম কিছু ভাইরাসের কারণেও চোখে ঘা হতে পারে। চোখে তার খোঁচা খোঁচা লাগে। সেই ক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ নিয়মমতো ব্যবহার করবেন। কর্নিয়াল আলসার হওয়ার পর যদি চিকিৎসা না করা হয়, বেশ কিছু জটিলতা হয়।
কর্নিয়া অস্বচ্ছ হতে পারে। ওষুধ দেওয়ার পরও সেটি থাকতে পারে। শুকিয়ে গেছে। চোখ রক্ষা পেলেও হয়তো দৃষ্টি ফিরে পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমরা একটি চিকিৎসা করি। একে আমরা ক্যারাটো প্লাস্টি বলি। অর্থাৎ অন্ধ লোক মারা যাওয়ার পরও যদি আমরা ওই চোখটি রাখি, ওই কর্নিয়াটায় আরেকজনের দৃষ্টি ফিরে পাবে। কর্নিয়াল আলসার হলে মহৎ কাজ করলে ওই চোখ দিয়ে আরেকজন দেখতে পাবে। এ রকমভাবে ক্যারাটো প্লাস্টি করে আমরা বহু রোগীকে ভালো করে দিয়েছি। আমরা আশা করি যদি এই কর্নিয়াটি আমরা ছয় ঘণ্টার মধ্যে মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে তুলতে পারি, ওই চোখ দিয়ে দৃষ্টি আরেকজনর পেলে আমি মনে করি এটি সদকায়ে জারিয়া হবে।
অনেক সময় দেখা যায় কোনো কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। কর্নিয়া একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তখন আইরিস প্রলাপস হয়। এর জন্য কনজিনটেবল হুড একটি চিকিৎসা করি। তাতেও যখন উন্নতি হয় না, কর্নিয়া অন্ধ হয়ে যায়। এই চোখ শেষ পর্যন্ত এত ব্যথা হয়, প্রয়োজনে তুলে ফেলতে হয়। কর্নিয়াল আলসার এমন একটি রোগ যেটি অবহেলা করা যাবে না। চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। একে ভবিষ্যতে রক্ষা করার জন্য অন্তত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।