ঘুমের সমস্যা কমাতে যা করবেন
ঘুমের সমস্যা কমাতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৮৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন জিয়ানুর কবীর। বর্তমানে তিনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি প্র্যাকটিস করছেন।
প্রশ্ন : ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে প্রাথমিকভাবে আপনারা কীভাবে ঘুমের সমস্যাকে ব্যবস্থাপনা করেন?
উত্তর : এটি ব্যবস্থাপনা করার জন্য বিষয়টিকে আমরা ধারণা করি। ধারণা করার পর আমরা সাইকোথেরাপি দেই। সাইকোলজিক্যাল প্রিন্সিপাল ও থিওরি বেজ চিকিৎসাগুলো দেই। এর মধ্যে আমরা স্লিপ হাইজিন বলে একটি থেরাপি দেই। স্লিপ শিডিউলিং একটি থেরাপি মেথড। এর পর কগনেটিভ থেরাপি আছে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা রিলাক্সেশন, মাইন্ড ফুলনেস নামে কিছু থেরাপি আছে সেগুলো দেই।
প্রশ্ন : স্লিপ হাইজিন বিষয়টি কেমন একটু বুঝিয়ে বলেন?
উত্তর : দুটো বিষয় আছে স্লিপ হাইজিনের মধ্যে। একটি হলো লাইফস্টাইল ফেক্টর। আরেকটি হলো বেডরুম ফেক্টর। লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর বলতে জীবনযাপনের কিছু বিষয় আছে। উত্তেজক যেই খাবারগুলো আছে সেগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। যেমন : ক্যাফেইন, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি খাবারগুলো এড়িয়ে যেতে বলি। এগুলো শরীরকে উদ্দীপ্ত করে। এই ক্ষেত্রে প্রথমে আমরা বলি ঘুমাতে যাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যে এই জিনিসগুলো খাওয়া যাবে না। খাদ্যাভ্যাস জীবন যাপনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেকে ঘুমানোর আগে খুব বেশি খায় বা অনেকে আবার একদম খালি পেটে ঘুমাতে যায়। সেই ক্ষেত্রে আমরা বলি খুব হালকা খাবার খেয়ে ঘুমাতে যেতে হবে এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে ঘুমাতে যেতে হবে।
আবার অনেকে খুব বেশি শারীরিক ব্যায়াম করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। তবে আমরা বলি ঘুমাতে যাওয়ার তিন চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করা দরকার। এগুলো মিলে স্লিপ হাইজিনের বিষয়টি নির্ভর করে।
এ ছাড়া শোবার ঘরের কিছু বিষয় আছে স্লিপ হাইজিনের ক্ষেত্রে। শোয়ার ঘরটা কেমন হবে, পরিবেশটা কেমন, বালিশ বা বিছানাটা কেমন, আরামদায়ক কি না- এই বিষয়গুলো মূলত স্লিপ হাইজিনের মধ্যে থাকে।
এরপর হলো স্লিপ শিডিওলিং বা ঘুমের সময়। এর মানে হলো ঠিক করে নেওয়া যে আমি কতক্ষণ ঘুমাব। কেউ সাত ঘণ্টা ঘুমায়, কেউ আট ঘণ্টা ঘুমায়। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার দেখবেন তিন-চার ঘণ্টা ঘুমালেও হয়। সেই ক্ষেত্রে তাকে প্রথমে শোয়ার সময়টি ঠিক করতে হবে। পরে জেগে ওঠার সময়টি ঠিক করতে হবে। ঘুমাতে যাওয়া এবং জেগে ওঠার জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করতে হবে। ছুটির দিনেও এই বিষয়টি মেনে চলবে। সপ্তাহে সাত দিন এই বিষয়টি মেনে চলবে।
১৫ মিনিট রুল বলে একটি কথা আছে। ঘুমাতে গিয়ে যদি ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে, বিছানায় না শুয়ে থেকে বই পত্র পড়তে হবে বা রিলেক্সেশন করতে হবে। এগুলো করে যখন পর্যাপ্ত ক্লান্ত হবে তখন বিছানায় এসে শোবে।
আরেকটি বিষয় হলো যাদের ঘুমের সমস্যা থাকে তারা অনেক সময় দিনের বেলা ঘুমায়। যাদের ইনসোমনিয়ার সমস্যা, তাদের আমরা বলি দিনের বেলা ১৫ মিনিটের জন্যও আপনি ঘুমাবেন না। ঘুমালে রাতে ঘুমের সমস্যা হয়ে যাবে।
এরপর আছে কগনেটিভ থেরাপি। ঘুম না হওয়ার কারণ উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা। এই উদ্বিগ্ন অবস্থার কারণগুলো আমরা বের করি। কী কী চিন্তার কারণে উদ্বিগ্ন হচ্ছে, কী কী কারণ কাজ করছে এর পেছন তার উৎস ও কারণগুলো বের করি। পরিস্থিতি তো বিভিন্ন রকম থাকতে পারে, তবে এই পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে কী চিন্তা আমার মাথায় আসছে। এগুলো কগনেটিভ থেরাপি দিয়ে আমরা ব্যবস্থাপনা করার চেষ্টা করি। কগনেটিভ থেরাপির ক্ষেত্রে একটি ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হোম ওয়ার্ক দেই।
প্রশ্ন : কী ধরনের হোমওয়ার্ক দিয়ে থাকেন?
উত্তর : ধরেন কগনেটিভ থেরাপির জন্য দুশ্চিন্তার কারণগুলো বের করলাম। বের করার জন্য আমরা কলাম করে খাতায় লিখে দিলাম। পরে এগুলো লিখে নিয়ে এলো। তখন কথা বলে সমস্যাটিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সেটি শিখিয়ে দিলাম।
প্রশ্ন : দীর্ঘদিনের অনিদ্রার সমস্যা হলে একজন মানুষ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
উত্তর : অনিদ্রা থাকলে অনেক ক্লান্ত লাগে। কাজ কর্মে মনোযোগ কমে যায়। অনিদ্রার কারণে অনেকে বিষণ্ণতায় পড়ে যায়। আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটে। এর পর দৈনন্দিন কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারে না।