খাবারে ফরমালিন ও কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি কী
বর্তমানে খাবারে ফরমালিন ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এগুলো কী। এগুলোর কি স্বাস্থ্যঝুঁকি? এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭০৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শক্তি রঞ্জন পাল। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হসপিটালের ইন্টারনাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। এ ছাড়া তিনি লাইফ অ্যান্ড হেলথ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে বেশ কিছু বছর ব্যাপকভাবে আলোচনায় আছে খাদ্যে ভেজাল। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান নামটি আসে ফরমালিন। সেই সঙ্গে আলোচনায় কীটনাশকের নামও আসে। এতে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আমরা পড়ি। এই সমালোচনা আমরা দেখতে পাই। কীটনাশক হিসেবে কোন কোন জিনিসগুলো বাংলাদেশে প্রচলিতভাবে ব্যবহৃত হয়? সেগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকি কী। ফরমালিন জিনিসটি কী।
উত্তর : কীটনাশক অনেক যুগ ধরেই চলছে। এখন উন্নয়নশীল দেশে ব্যবহৃত হয়। এর কারণ যখন আমরা চাষ করি, তখন সেখানে অনেক পোকামাকড় আসে। এতে আমাদের ফসল, আমাদের যে সবজি, ফল- এগুলো নষ্ট হয়। এগুলো দিয়ে আমাদের পোকামাকড় তাড়াতে হবে। কিন্তু ব্যবহার করতে গিয়ে যখন সেটি অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করে অথবা সেটি ব্যবহার করার যে পদ্ধতি আছে, ঠিকমতো অনুসরণ করে না তখন শাক-সবজি বা ফলের মধ্যে জিনিসগুলো থেকে যায়। এগুলোকে বিক্রি করার আগে পরিষ্কার করা হয় না। এতে আমাদের ঝুঁকি হয়।
প্রশ্ন : সাধারণত কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে।
উত্তর : তার আগে আমি একটু বলি কী কী কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। অরগানো ক্লোরিন বলে একটি দল ছিল, সেটি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। যদিও এখনো পাবেন কিছু ছোটখাটো দোকানের ভেতর লুকিয়ে রাখে। কারণ এর মধ্যে বিষ রয়েছে। এরপর যেটি ব্যবহৃত হয় অরগানো ফসফরাস। এটি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এটা দিলে পোকামাকড় মোটামুটি সব চলে যায়। এরপর আরেকটি দল এসে গেছে, সেটি হলো কার্বামিট। এগুলো মোটামুটি ব্যবহৃত হয়। তবে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয় না। আর শেষে যেটি এসছে এটি হলো পাইরেথ্রিন দল। এই চারটি দল হলো প্রধান কীটনাশক। ফরমালিন বেশির ভাগ ব্যবহৃত হয় প্রিজারভেটিভ হিসেবে, যাতে খাবার অনেকদিন ধরে সতেজ থাকে, নষ্ট না হয়।
যদি অরগানো ফসফরাস আমরা খাবারের সঙ্গে খেয়ে ফেলি অথবা এটি পানির সঙ্গে খেয়ে ফেলি, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের নাক মুখ অ্যালার্জির মতো লাগবে, অথবা হার্টবিট বাড়বে। এটি যদি আমরা অনেক দিন ধরে বিভিন্ন সময়ে খেতে থাকি, তখন সেটি শরীরে জমতে থাকে। জমে আমাদের হৃদরোগ হতে পারে। এ ছাড়া লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্কের বিষয়ে এখনো আলোচনা হচ্ছে না, তবে সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর পরবর্তী দল হলো কার্বামেট। কার্বামেটের আরেকটি প্রভাব এখন প্রচণ্ডভাবে লিভারের ওপর পড়ছে। এটি প্রজননক্ষমতা, স্পার্ম নষ্ট করে। এই ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব কার্বামেটে আছে।
এরপর যখন পাইরেথ্রিন দল দেহে যাচ্ছে, সেটি লিভার, কিডনির ওপর প্রভাব ফেলছে। এটি প্রজননের ওপর প্রভাব ফেলে, সেক্সুয়াল ফাংশনের ক্ষতি করে। পাইরাথ্রিনের প্রভাবে অনেক ক্যানসার বাড়ে। যেমন পাকস্থলী ক্যানসার, জি আই ক্যানসার, লিভার ক্যানসার। এমনকি ইসোফেগাস ক্যানসার বেশি হয়। সংক্ষেপে এগুলো হলো বাজে প্রভাব।
প্রশ্ন : খাবার সংরক্ষণের জন্য আমরা ফরমালিন ব্যবহার করছি। প্রিজারভেটিভ তো সারা পৃথিবীতেই ব্যবহৃত হয়। কিংবা ফল পাকানোর জন্যও কিছু জিনিস ব্যবহৃত হয়। সেই ক্ষেত্রে সারা পৃথিবী যদি করে, আমরা করছি- এটি নিয়ে এত সমালোচনা কেন? বেশি ঝুঁকির কারণ কী।
উত্তর : ব্যবহার করা যায়, তবে সীমিত। এই জন্য বলা হয় গ্রহণযোগ্য একটি মাত্রা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে একটি মাত্রা দেওয়া আছে। এর নিচে যদি থাকে সেটা ঝুঁকিমুক্ত। তবে আমাদের দেশে বেশির ভাগ লোক কোনো পদ্ধতি ভালোভাবে অনুসরণ করে না। অথবা তাদের যন্ত্র নেই যে কত খাবারে কতটুকু দেবে। এর কারণে পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। পরিমাণ যখন বেশি হয়ে যায়, তখনই আমাদের শরীরে ক্ষতি করে। তাই এটা সরাসরি ক্ষতিকর নয়, যদি এটা সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করে। আবার একটি জিনিস মনে রাখবেন, অনেক ফলে, বিশেষ করে পাকা ফলে সামান্য ফরমালিন এমনিতেই থাকে। আপনি কোনো ফরমালিন দেননি। তবে আপনি ফরমালিন পরীক্ষা করলে ইতিবাচক বিষয় পাবেন। তবে সেটি সহ্য করার মতো। আমি বলব এর প্রধান কারণ হলো পরিমাণ এবং পদ্ধতি কীভাবে আমরা ব্যবহার করি।