‘আমি স্বর্গে যাচ্ছি মা’ বলতে বলতেই আগুনে গেল প্রাণ
চারদিকে আগুনের লেলিহান শিখা। ছারখার হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। কিছুক্ষণ পর সে আগুন হয়তো তাকেও গ্রাস করবে। ভস্ম করে দেবে চিরতরে। ঠিক সে সময় চোখের সামনে ভেসে উঠছিল পরিবারের প্রিয় মুখগুলো। ইচ্ছে হলো শেষবারের মতো তাদের কণ্ঠ শোনার। তাই ফোন করলেন। মাকে বললেন, ‘আমি স্বর্গে যাচ্ছি মা। হয়তো সেখানে গিয়ে তোমাদের জন্য কিছু একটা করতে পারব।’
বলছিলাম যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ইতালির নাগরিক গ্লোরিয়া ত্রেভিসানের কথা। বাবা-মার আর্থিক দুদর্শা ঘুচাতে মাত্র তিন মাস আগেই তিনি ইতালি থেকে কাজের প্রত্যাশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন লন্ডনে। কিন্তু মা-বাবার দুঃখ ঘোঁচাতে পারেননি গ্লোরিয়া। উল্টো নিজেই হয়ে গেলেন দীর্ঘস্থায়ী দুঃখের মানসচিত্র।
গ্লোরিয়ার পরিবারিক আইনজীবী মারিয়া ক্রিশ্চিনা সানদারিন সিএনএনকে বলেন, ‘গ্লোরিয়া তার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই মারা যান।’
সানদারিন জানান, আর্থিক সংকট থেকে পরিবারকে মুক্তি দিতে ২৬ বছর বয়সী গ্লোরিয়া ইতালি থেকে স্থাপত্যবিষয়ক কাজের সন্ধানে লন্ডনে যান। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তিনি তাঁর মা ম্যানুয়েলা ও বাবা লরিস ত্রেভিসানের সঙ্গে কথা বলেন।
বাবা লরিস গ্লোরিয়ার ছোট ভাইকে শোনানোর জন্য ফোনকলটি রেকর্ড করে রাখেন। যদিও আদালতের অনুমতি না থাকায় গ্লোরিয়ার পরিবার রেকর্ডটি প্রকাশ করতে পারছে না।
গ্লোরিয়া গত এপ্রিলে ইন্সটাগ্রামে তাঁর নতুন অ্যাপার্টমেন্টের ছবি দিয়েছিলেন।
ইতালির সংবাদমাধ্যম কোরিয়ার দেলা সেরা তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্লোরিয়ার ছেলেবন্ধু এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তিনিও ওই ভবনেই ছিলেন।
গ্রেনফেল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে লন্ডন পুলিশ। নিখোঁজ রয়েছে আরো ৭০ জন। এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখা কাজ করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ জানা হয়তো সম্ভব নয়। তবে জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, লন্ডনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তারা আর কোনো ইতালির নাগরিকের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেনি।