মৃত্তিকা মায়া
আবহমান গ্রামীণ জীবনের কাব্য
নদীর বুকে চলছে নৌকা। গাঁয়ের বধূ জল আনতে যাচ্ছেন নদীর ঘাটে। রান্নার কাজে ব্যস্ত গৃহিণী। গৃহপালিত পশুপাখিকে খাবার দিচ্ছেন আরেক গৃহিণী। কাঁধে জোয়াল, গ্রামীণ মেঠোপথ দিয়ে গরু নিয়ে ফিরছেন কৃষক। সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ-মমতাও ফুটে উঠেছে সুনিপুণভাবে। ভালোবাসা, অনুরাগ, অনুভূতি ও প্রতিবাদ সবই ‘মৃত্তিকা মায়া’র ক্যানভাসের মূল প্রতিপাদ্য। আবহমান গ্রামবাংলার জীবন-জীবিকা ও চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এসব উপকরণ নিয়ে নিজের চিত্র প্রদর্শনীর ক্যানভাস সাজিয়েছেন শিল্পী সমর মজুমদার। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমণ্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে শিল্পীর ৩০টি চিত্রকর্ম নিয়ে একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘মৃত্তিকা মায়া’। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প-সমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস।
অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ বলেন, ‘বাংলার রূপ-রস আর গন্ধে মোহিত শিল্পী সমর মজুমদার মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতায় ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলার লৌকিক ঐতিহ্য-ইতিহাস আর সামাজিক পটপরিবর্তনের গল্প। তাঁর ক্যানভাসে উঠে এসেছে আবহমান গ্রামবাংলার মানুষ, লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান, জীবনযাত্রার গল্প।’
ব্রুনো প্লাস বলেন, ‘সমর মজুমদার একজন প্রতিভাবান শিল্পী। ৩০ বছর ধরে শিল্পকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শিল্পী তাঁর চিত্রকর্মে যেন রচনা করেছেন গ্রামীণ জীবনের চিত্রল কাব্য। লোককলার শৈলী তাঁর কাজে পেয়েছে নতুন ব্যাখ্যা। মৃত্তিকার মায়া, বৃক্ষছায়া, বৃষ্টি, নৌকা ভ্রমণ, সাঁকো, নিসর্গ—এমন সব শিরোনামের শিল্পকর্মের মধ্যে দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায় শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গি।’
শিল্পী সমর মজুমদার বলেন, ‘আমি আমার নিজেকে চিত্রকর্মে প্রকাশ করার মাধ্যমে প্রকৃত সুখ খুঁজে পাই। ক্যানভাসে আমি আমার ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলতে পারায় সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা অনুভব করি। আমার দেশ, আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ আমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্তাকর্ষক।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এই দেশ এবং এই মাটির সন্তান। এ মাটি আমাকে শক্তি দেয় যে শক্তির ওপর ভর করে আমি আমার চারপাশে দেখা সৌন্দর্যকে আমার ক্যানভাসে তুলে আনতে চেষ্টা করি। আমার অনুভবে থাকা স্নেহ, অনুরাগ, প্রতিবাদ বা দুঃখের অনুভূতি—সবই বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই চিত্রপটে উঠে আসা অন্তঃসম্পর্ক একই সঙ্গে সাধারণ এবং জীবন্ত যেটা আমি বিশ্বাস করি দর্শকবৃন্দ বুঝতে পারেন।’
ক্যানভাসে গ্রামবাংলা বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে সমর মজুমদার বলেন, ‘আমার স্নেহ, অনুরাগ, প্রতিবাদ বা দুঃখের অনুভূতি—সবই বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। আমার অন্তঃসম্পর্ক অনেক সাধারণ ও জীবন্ত, যেটা আমি আমার ক্যানভাসে ধারণ করি এবং বিশ্বাস করি এটি দর্শকদের জন্য বোধগম্য হবে।’
প্রদর্শনীটি চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।