ডি-৮ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/10/21/photo-1508581610.jpg)
ডি-৮ সদস্যভুক্ত দেশগুলো রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এই সমস্যা বাংলাদেশে মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
গতকাল শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সভাপতিত্বে ডি-৮ নবম সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো এই আশ্বাস দেয়।
ডি-৮ (উন্নয়নশীল আটটি দেশের গ্রুপ) সদস্যরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঘটনাকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং জোরপূর্বক মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করে মর্যাদাপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য হৃদয় ও সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং সমস্যার সমাধানে নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। তিনি অন্তত তিনবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আবেগপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। প্রতিবারই বাংলাদেশের প্রশংসনীয় ভূমিকা এবং তাদের আশ্রয় প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান রোহিঙ্গাদের জন্য এবং তাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশ বিশেষ করে ওআইসি এবং ইউএনকে সর্বোত্তম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বাংলাদেশের এই বিশাল ভার বহনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান এবং রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল ও হেলথ ক্যাম্পসহ আবাসন নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সম্প্রতি তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন এবং এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন আরো জোরদারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
অন্যান্যের মধ্যে ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। ডি-৮ সদস্যরা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ডি-৮ সম্মেলনে ছয় সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বর্তমান রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের ক্ষেত্রে সক্রিয় সমর্থনের জন্য ডি-৮ সদস্যদের প্রশংসা করেন।
শাহরিয়ার আলম বাস্তুচ্যুত অধিকারবঞ্চিত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের উদারনীতি সম্পর্কে ডি-৮ সদস্যদের অবহিত করেন এবং রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গত অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থাপিত পাঁচ দফা ফর্মুলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ডি-৮ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে সমস্যার আশু সমাধানের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সদস্য দেশগুলোর অব্যাহত সমর্থন চেয়েছেন।
ডি-৮ নবম সম্মেলনের থিম ছিল ‘এক্সপান্ডিং অপরচুনিটিস থ্রো কো-অপারেশন।’
১০০ কোটি মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত ডি-৮ ভুক্ত আটটি দেশের উন্নয়নের ধীরগতির কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম ডি-৮ দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের বাস্তব ফলাফল নিয়ে আসতে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ও প্রকল্প গ্রহণের নতুন যুগে প্রবেশের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ডি-৮ প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
সম্মেলনে ডি-৮ ইস্তাম্বুল ঘোষণা ২০১৭ এবং ডি-৮ ইস্তাম্বুল প্লান অব অ্যাকশন ২০১৭ গৃহীত হয়।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আস্থা প্রকাশ করে বলেন, এই দুটি ডকুমেন্ট বাস্তব ফলাফলভিত্তিক প্রকল্প ও নীতিপদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।
প্রতিমন্ত্রী দুটি টিভি ও রেডিওতে সাক্ষাৎকার দেন, এতে তিনি আনাদুলু এজেন্সি ও টিআরটি ওয়ার্ল্ডে রোহিঙ্গা সমস্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্ক এবং ডি-৮ সহযোগিতা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন।
সম্মেলনে তুরস্ক, নাইজেরিয়া, আজারবাইজান ও গিনির প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট, মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী, ইরানের ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বেশির ভাগ সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্মেলনে যোগ দেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের অটোমান প্রসাদে মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মেলন শেষ হয়।