সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় করণীয়
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/10/24/photo-1508848954.jpg)
জটিল মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়া। এই রোগে রোগীর মধ্যে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়, যেটি সাধারণত ব্যাখ্যা করা যায় না। সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৮৬তম পর্বে কথা বলেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে যখন রোগীরা আসে তখন কী সমস্যা নিয়ে আসে?
উত্তর : সিজোফ্রেনিয়া একটি রোগ যেখানে মানুষের অন্তর্দৃষ্টি থাকে না। বাস্তবতাবোধ থাকে না। সুতরাং প্রায় সব ক্ষেত্রেই রোগীদের তার নিকটাত্মীয়রা নিয়ে আসে। যখন আসে রোগী কিন্তু স্বীকার করতে চায় না, আমার কোনো অসুস্থতা রয়েছে। সেজন্য এখানে চিকিৎসকের একটি চোখ থাকতে হবে। চিকিৎসকের অন্তর্দৃষ্টি এখানে প্রকট হতে হবে। তাকে খুঁজে বের করতে হবে তার সিজোফ্রেনিয়া বা অন্য কোনো রোগ রয়েছে কি না। সুতরাং ইন্টারভিউটা হবে সেই রকম।
সিজোফ্রেনিয়াতে অনেক সময় রোগী আপনার দিকে তাকাবেই না। আপনার সঙ্গে কথাই বলতে চাইবে না। আপনাকে তখন সেই দৃষ্টিটা খুঁজে বের করতে হবে। আর কোনো কোনো সময় পরিবারে যারা সঙ্গে থাকে, তাদের কাছ থেকে ইতিহাসটা নিয়ে নিশ্চিত হই।
প্রশ্ন : এরপর যখন নিশ্চিত হন যে রোগীর সিজোফ্রেনিয়া হয়েছে পরবর্তী পদক্ষেপ কী থাকে?
উত্তর : প্রথম আমরা বলি সিজোফ্রেনিয়া বা যেকোনো মানসিক রোগের তিনটি চিকিৎসার পদ্ধতি। একটি বায়োলজিক্যাল চিকিৎসা। এটি আমরা ওষুধ দিয়ে করি। সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা এবং সোশ্যাল রিহেবিলিটেশন। এখানে বায়োলজিক্যাল চিকিৎসার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ওষুধের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
যেহেতু রোগীর অন্তর্দৃষ্টি থাকে না,বাস্তবতাবোধ থাকে না রোগী আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে না, তখন সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের ভূমিকা আসে না। এই রোগীর এসব লক্ষণ যখন দূর হয়ে যাবে, তখন আপনি সেটি করতে পারেন। তবে বায়োলজিক্যাল চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে।
১৯৫২ সালে প্রথমে কোরপ্রমাজিন আবিষ্কার হয়। সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার জন্য এখন অনেক নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এটা দিয়ে অনেক সুন্দর চিকিৎসা করা যাবে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি নেই। আগে যখন আমরা লারগিটিল দিয়ে চিকিৎসা করতাম, প্যারিডল দিয়ে চিকিৎসা করতাম, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য কেউ ওষুধ খেতে চাইত না।
প্রশ্ন : কতদিন ধরে এই ওষুধ খেতে হয়?
উত্তর : একেবারে ফ্ল্যাট বলা যাবে না যে এতদিন ধরে চিকিৎসা করতে হবে। যত দিন লক্ষণ থাকে তত দিন চিকিৎসা করতে হবে। তবে সাধারণত বলা হয় যদি লক্ষণমুক্ত হয়ে যায়, এক বছর চিকিৎসা করার পর, আস্তে আস্তে ডোজ রিডাকশন করতে হবে। একেবারে ওষুধ যেন না কমানো হয় বা না ছেড়ে দেওয়া হয়। তাহলে কিন্তু আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তার মানে এই প্রক্রিয়াটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যত দিন পর্যন্ত ডাক্তার চিকিৎসা চলার কথা বলবে, তত দিন পর্যন্ত চালাতে হবে। সেটিই বোধ হয় ভালো হবে। পাশাপাশি একটি কথা বলি, পরিবারকে অবশ্যই সহানুভূতিশীল হতে হবে। দেখা যায়, যেসব পরিবারে আবেগ বেশি বা অনুভূতি কম তাদের কিন্তু ফলাফল ভালো নয়। পরিবারে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রয়েছে। যেহেতু সে বোঝে না যে ওষুধ খেতে হবে। সুতরাং ওষুধ তাকে খাইয়ে দিতে হবে। এই ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকা যেহেতু অনেক, তাই ওষুধটা বন্ধ করা যাবে না।