বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস : সবার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হোক
আজ ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছরই দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। যেমন- জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার আয়োজন, স্যুভেনিওর প্রকাশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদর্শনী, জাতীয় প্রত্রিকার ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটির ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচি।
১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ অর্থনীতি ও সমাজ পরিষদ আন্তজার্তিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং একই বছরের জুন ও জুলাই মাসে স্বাস্থ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংগঠনিক আইন গৃহীত হয়। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল এই সাংগঠনিক আইন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। পাশপাশি এই দিন স্বাস্থ্য দিবস বলে নির্ধারিত হয়। প্রতি বছর সংস্থাটি এমন একটি স্বাস্থ্য ইস্যু বেছে নেয়, যা সারা পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য অনুযায়ী সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি বিষয়ের ওপর লক্ষ রাখতে হবে।
যেমন
* অসুস্থতায় চিকিৎসা পাওয়া প্রতিটি মানুষের একটি মৌলিক অধিকার এই বিষয়টি সবার মনে রাখতে হবে।
* কীভাবে স্বাস্থ্য সেবা সবার দৌড়গোড়ায় পৌঁছানো যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
* সমাজে যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল তাদের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন- বিনা মূল্যে কিংবা সল্পমূল্যে ভালো চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা অন্য দিকে তাদের আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।
* স্বাস্থ্য সেবায় যারা অবদান রাখছে তাদের উৎসাহিত করতে হবে, বিশেষ করে যারা অসামান্য অবদান রাখছে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে।
* ‘সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ বিষয়টি তুলে ধরে বছরে একদিন নয় প্রত্যেকটি দিনই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে অনেক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে যেমন- সংক্রামক রোগ, পোলিও নির্মূল হয়েছে, হাম, বসন্ত ও কলেরা ইত্যাদি রোগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আরো সফলতা এসেছে মা ও শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে, আগের তুলনায় মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে এসেছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্তের হার বাড়ছে যেমন - ডায়বেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোকজনিত পক্ষঘাতগ্রস্থতা, কিডনি রোগ, অটিজম, মানসিক রোগ, বয়সজনিত রোগ যেমন -– অষ্টিওআথ্রাইটিস, স্পনডাইলোসিস, ডিজেনারেটিভ ডিস্ক ডিজিজ ইত্যাদি। তাই স্বাস্থ্য সেবায় এগোতে হলে এখন প্রয়োজন এই অসংক্রামক ব্যাধিগুলো থেকে জনসাধারণকে সুস্থ্য, সবল ও কর্মক্ষম রাখা। এটি করতে গেলে যেমনটি প্রয়োজন এই রোগগুলো সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, যা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে, তেমনিভাবে প্রয়োজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে সমন্বিত চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা আর সমন্বিত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম, এতে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিটির সঠিক চিকিৎসাটি নিশ্চিত হবে। সর্বোপোরি বাংলাদেশে ‘সবার জন্য সুস্বাস্থ্য’ নিশ্চিত হোক এই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক , চেয়ারম্যান, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা