খাসোগিকে ভুলে খুন করা হয়েছে : সৌদি আরব
সৌদি আরব দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করল। প্রথমে গত শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে নিহত হন খাসোগি। এবার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেন, খাসোগিকে ভুলে হত্যা করা হয়েছে।
রোববার সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর ফক্স নিউজকে বলেন, “খাসোগির হত্যার ব্যাপারটি আসলে একটি ‘মস্তবড় ভুল’ এবং এই অভিযানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা তাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এটি ঘটিয়েছেন। যেকোনো সরকারেই এমন ঘটনা অগ্রহণযোগ্য।”
জুবেইর বলেছেন, ‘খাসোগিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা জানতে সৌদি সরকার তদন্ত করছে এবং জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।’
অন্যদিকে সৌদি আরবের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, খাসোগি কনস্যুলেটের ভেতরে সৌদি কর্মকর্তা মাহের মুতরেবের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। চিৎকার বন্ধে তাঁর মুখে কাপড় পুরে দেন সৌদি কর্মকর্তারা। এর পর তাঁকে হত্যা করা হয় এবং খাসোগির পোশাক পরে এক কর্মকর্তা কনস্যুলেট ত্যাগ করেন, যাতে প্রমাণিত হয়, খাসোগি কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে গেছেন।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং গোয়েন্দা বাহিনীর উচ্চপদস্থদের কেউ এ অভিযানের ব্যাপারে সরাসরি জানতেন না বলে দাবি করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকের আবু গারিব কারাগারে মার্কিন সেনাদের বন্দি নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল-জুবেইর বলেন, ‘শিগগির একটি উপসংহারে পৌঁছানো উচিত হবে না; বরং খাসোগি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, তিনি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যায় ‘নগ্নসত্য’ উদঘাটন করেই ছাড়বেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য খাসোগি হত্যায় সৌদি সরকারের দেওয়া ব্যাখ্যাকে অসম্পূর্ণ বলেছেন। তিনি বলেছেন, এই ব্যাখ্যায় মিথ্যার উপাদান রয়েছে। এ সময় ট্রাম্প অবশ্য সৌদি যুবরাজকে ‘শক্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন’ বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প বরাবরের মতো এ যাত্রায়ও সৌদি রাজপরিবারে পাশে দাঁড়িয়েছেন। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রশংসা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যকার সুসম্পর্কের অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স এ হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট ও পরিষ্কার তথ্য প্রকাশ করতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বিয়ে-সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে যান খাসোগি। বাগদত্তা তুর্কি নারী হেতিজ জেঙ্গিসকে বাইরে রেখে কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর ফেরেননি খাসোগি।
এ নিয়ে তুরস্ক ও সৌদি সরকার একে অপরকে দোষারোপ করে আসছিল। সৌদি আরব বলে আসছিল, কনস্যুলেট বেরিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন খাসোগি।
অন্যদিকে তুরস্কের গোয়েন্দারা এ নিয়ে নানাবিধ তৎপরতা দেখিয়ে আসছেন। তুরস্ক শুরু থেকে দাবি করে আসছে, সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি দল খাসোগি হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে তুরস্কে যায়। সেই দলে একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞও ছিলেন। এর দায়িত্বে ছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ এক উচ্চপদস্থ সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
সৌদি রাজতন্ত্রের সাম্প্রতিক ক্ষমতার পালাবদলে রাজপরিবারের বিরাগভাজন হন খাসোগি। এর আগে দীর্ঘদিন রাজপরিবারের লোকজনের ঘনিষ্ঠ একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন গত বছর স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়া এই সাংবাদিক।