ঢাকায় আবারও শুরু হচ্ছে লিট ফেস্ট
সাহিত্য উৎসব ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’-এর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৮ নভেম্বর বাংলা একাডেমি চত্বরে শুরু হতে যাচ্ছে এই উৎসব। তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন শেষ হবে ১০ নভেম্বর। ৮ নভেম্বর বেলা ১০টায় এই আয়োজনের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আজ সোমবার বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে এই ঘোষণা দেন আয়োজকরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক, কথাসাহিত্যিক এবং বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবর। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির প্রশাসনিক পরিচালক ড. মুজাহিদ, টাইটেল স্পন্সর বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ও ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জারা মাহবুব খান উপস্থিত ছিলেন।
সবাইকে স্বাগত জানিয়ে পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে হে ফেস্টিভ্যাল নাম দিয়ে এই আয়োজন যাত্রা শুরু করে। ২০১৫ সাল থেকে এটি ঢাকা লিট ফেস্ট নামে যাত্রা শুরু করে। এটি অষ্টম আয়োজন। গত আট বছরে আমরা চেষ্টা করেছি এগিয়ে যাওয়ার এবং আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পেরেছি বলেই আমার বিশ্বাস। এবার এই আয়োজনে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মোহাম্মদ হানিফ আসছেন। পুলিৎজার ও অন্দাজ্জে, বুকারের মতো সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী লেখকরা আসছেন। পাকিস্তানি লেখক সাদাত মান্টোকে নিয়ে ভারতে নির্মিত ছবি মান্টোর প্রথম প্রিমিয়ার হবে বাংলাদেশে। শুধু প্রিমিয়ার নয় নন্দিতা দাশ তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।’
ড. কাজী আরো বলেন, ‘ঢাকা লিট ফেস্টের মঞ্চ এখন বিশ্বের কাছে সুপরিচিত। তারই পথ ধরে ক্যামব্রিজ শর্ট স্টোরি প্রাইজ কর্তৃপক্ষ এই মঞ্চকে বেছে নিয়েছেন এই পুরস্কার লঞ্চ করার। এখানেই প্রথমবারের মতো পুরস্কারের ঘোষণা দেবেন তারা। আন্তর্জাতিক সাহিত্য পত্রিকা গ্রান্টা ম্যাগাজিন একমাত্র বাংলাদেশের এই আয়োজনেই পার্টনার হিসেবে যুক্ত থাকছে দ্বিতীয়বারের মতো। তাদের চারজন প্রতিনিধি আসছেন বিশ্ব সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করার জন্য।’
সংবাদ সম্মেলনে ড. কাজী আরো উল্লেখ করেন, ‘নানা পরিসরে নানা ধরনের অনুবাদের কাজ চলছে। বাংলাদেশের সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার যে প্রয়াস আমরা নিয়েছি সেটির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতেই সারা বছর ধরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। এক কথায় ঢাকা লিট ফেস্ট বাংলা ঐতিহ্য ও বিশ্ব সংস্কৃতির সম্ভারের অনন্য মিলনমেলা। তিনি সবাইকে এই আয়োজনে আমন্ত্রণ জানান। এটি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত।’
সাদাফ সায্ সিদ্দিকী বলেন, ‘এই উৎসবের তিনদিনে ৯০টির বেশি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে শুধু সাহিত্য নয় আর্ট, ফটোগ্রাফি, ফিল্ম সব কিছুরই প্রদর্শনী থাকছে। গত ৮ বছরে ৫০টি দেশের ৩৩০ জন অতিথি এসেছেন ঢাকা লিট ফেস্ট। এবার আমরা নারীকে তুলে ধরার পরিকল্পনা করছি। নন্দিতা দাশের ছবি, ছয় নারী কবি, রোহিঙ্গা নারীদের কথা, নারী বাউল শিল্পীসহ নারীদের সরব উপস্থিতি থাকবে। আমাদের ঐতিহ্য ‘গল্প বলা’, সেই ঐতিহ্যকে সামনে রেখে শিশুদের জন্য নানা আয়োজন করা হয়েছে- এর মধ্যে মিতালি পারকিন্সের রিকশা গার্ল অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কার নিয়ে আছে গল্পবলা। কবি কামাল চৌধুরী একটি ভাষা নিয়ে ২০ ভলিউমের কাজ করছেন। সেটির একাংশ নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।’
আহসান আকবর বলেন, ‘লিট ফেস্টে আমাদের মূল আগ্রহ থাকে বাংলা সাহিত্যকে প্রচার ও প্রসারের। সেটিকে এগিয়ে নিতে আমরা বাংলা সাহিত্যের লেখকদের বই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সিগাল বলে একটি ভারতীয় প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃপক্ষ। লিট ফেস্টে একবার আমাদের দেখতে পেলেও সারাবছর বাংলা সাহিত্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন আবার আসছেন বাংলাদেশে। তিনি বাংলাদেশের বয়স্ক শিক্ষাকে তার একটি চলচ্চিত্রে যুক্ত করছেন। তার শুটিং করবেন বাংলাদেশে।’
টাইটেল স্পন্সর ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষে সবাইকে স্বাগত জানান ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান। তিনি বলেন, ‘এই আয়োজনের পক্ষে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। এটা আমাদের বিশাল পাওয়া আমরা বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এত বড় আয়োজনে কাজ করছি এটি সত্যিকার অর্থেই গণমাধ্যমের অর্জন বলব আমি।’
বরাবরের মতো দেশ-বিদেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক, অভিনেতা, রাজনীতিক, গবেষক, সাংবাদিক এ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এ বছরের অংশগ্রহণকারীদের তালিকা ইতিমধ্যে লিট ফেস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে এবার অংশ নেবেন পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অ্যাডাম জনসন, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও কলামিস্ট মোহাম্মদ হানিফ, ব্রিটিশ উপন্যাসিক ফিলিপ হেনশের, বুকার বিজয়ী ব্রিটিশ উপন্যাসিক জেমস মিক, ভারতীয় জনপ্রিয় লেখিকা জয়শ্রী মিসরা, লন্ডন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব রাইটিংয়ের পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক রিচার্ড বিয়ার্ড, ভারতীয় লেখিকা হিমাঞ্জলি শংকর, শিশুতোষ লেখিকা মিতালি বোস পারকিন্স, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার প্রধান হুগো রেস্টল, মার্কিন সাংবাদিক প্যাট্রিক উইন, লেখক ও সাংবাদিক নিশিদ হাজারি।
বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে থাকছেন ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা অতুলনীয়। ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে যোগ দেবেন এই আয়োজনে। কথা বলবেন বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের সঙ্গে।
দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা লিট ফেস্টে আসছেন অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টন। এবারও আসছেন নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলতে। তারকাদের তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছেন বলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী মণীষা কৈরালা। লিটফেস্টে আসছেন নিজের আত্মজীবনী নিয়ে কথা বলতে। আসছেন অভিনেত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট নন্দিতা দাস। কথা বলবেন নারী অধিকার, অভিনয় জীবন ও বহুল আলোচিত হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন নিয়ে।
বাংলাদেশ থেকে প্রায় দেড়শ লেখক, অনুবাদক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অংশ নিচ্ছেন এই আয়োজনে। থাকছেন আফসান চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কামাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, ফকরুল আলম, ইমদাদুল হক মিলন, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান, আনিসুল হক, কায়জার হক, খাদেমুল ইসলাম, অমিতাভ রেজা, মুন্নী সাহা, শাহনাজ মুন্নী, নবনীতা চৌধুরীসহ দেড় শতাধিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
বিশ্বের ২৫ দেশের দুই শতাধিকের বেশি সাহিত্যিক, বক্তা, পারফর্মার এবং চিন্তাবিদ এই তিন দিনের আয়োজনে অংশ নেবেন। এবারের লিট ফেস্টে আলোচনা, পারফরম্যান্স চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজনে শতাধিক সেশন থাকছে। আরো আছে আনপ্লাগড মিউজিক কনসার্ট। সম্ভাব্য সেশনের আনুষ্ঠানিক তালিকা ইতিমধ্যেই লিট ফেস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সাহিত্য জগতে স্বনামধন্য ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে ঘোষণা করা হবে। একইদিনে লঞ্চ করা হবে ক্যাম্ব্রিজ সর্ট স্টোরি প্রাইজ।
ঢাকা লিট ফেস্টে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন চলছে এই ঠিকানায় https://www.dhakalitfest.com/register
উৎসবের শেষদিন পর্যন্ত চলবে রেজিস্ট্রেশন।