তারহীন বিদ্যুৎপ্রবাহে বড় সাফল্য
বিশ্বে এই প্রথম তার ছাড়াই তুলনামূলক বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়েছে। এ সফলতা পেয়েছেন জাপানের গবেষকরা। ভবিষ্যতে মহাকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা পৃথিবীতে নিয়ে আসা সুদূর পরিকল্পনার পথে এটি বড় সাফল্য।
জাপানের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে ৫৫ মিটার দূরত্বে (১৭০ ফুট) একটি নির্দিষ্ট স্থানে ১ দশমিক ৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করেছেন। এই বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়েছে মাইক্রোওয়েভের (ক্ষুদ্র তরঙ্গ) মাধ্যমে।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার ছাড়া বিদ্যুৎপ্রবাহের গবেষণায় সহযোগিতা করেছে দেশটির শিল্প মন্ত্রণালয় ও মহাকাশ সংস্থা দ্য জাপান অ্যারোস্পেস এজেন্সির (জেএএক্সএ)। সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেন, বিদ্যুৎপ্রবাহের পরিমাণ ও দূরত্ব ভবিষ্যতে আরো উন্নত হবে। এমন সময় আসবে যখন মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে পৃথিবীতে পাঠানো যাবে। এতে পৃথিবীর ওপর বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাপ কমবে। সংস্থাটি কয়েক বছর ধরে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের গবেষণা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রথম ১ দশমিক ৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হলো। এই বিদ্যুৎ দিয়ে একটি ওয়াটার হিটার (পানি উষ্ণ করার যন্ত্র) চালানো সম্ভব।
মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে পৃথিবীতে আনার বড় কয়েকটি ইতিবাচক দিক আছে। এর বড় সুবিধাটি হলো এর ফলে সৌরশক্তির মাধ্যমে দিন-রাত সব সময়ই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। পৃথিবীর দিন-রাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহাকাশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে না।
পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) মানুষের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ। শুধু সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে এটি টিকে আছে। এমন কোনো সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনা থেকে পৃথিবীতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করার বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মতো শোনায়। তবে জাপানে বড় পরিমাণ বিদ্যুৎ তার ছাড়াই দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎপ্রবাহে সফলতা এ কল্পনাকে বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
জেএএক্সএর মুখপাত্র বলেন, ভবিষ্যতে ভূমি থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইট পাঠানো হবে। ওই স্যাটেলাইটে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। তবে এ ব্যবস্থা চালু হতে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে। গবেষকরা বলছেন, ২০৪০-এর দশক বা এর পরে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি সম্ভব হবে।
তবে মহাকাশে বিদ্যুৎ স্থাপনা করার পথে কয়েকটি বড় বাধা আছে। প্রথমত, মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বড় স্থাপনা কীভাবে পাঠানো হবে। দ্বিতীয়ত, কীভাবে এই স্থাপনার পরিচর্যা করা হবে, তা নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন আছে।
১৯৬০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের গবেষকরা প্রথম মহাকাশভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ধারণা দেন। তবে জাপানের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০০৯ সালে এ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
২০১১ সালে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনায় দুর্ঘটনার পর দেশটির সব পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খনিজ সম্পদবিহীন দেশটিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বর্তমানে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করতে হবে।