ডারউইন থেকে মঙ্গল গ্রহ: যে কারণে বিতর্কিত প্রাণের উৎস
কীভাবে প্রাণের সূত্রপাত ঘটে পৃথিবীতে, তা নিয়ে বিজ্ঞানের অন্যতম দীর্ঘ বিতর্ক রয়েছে। পৃথিবীতে প্রাণের উৎসের গবেষণার সঙ্গে জড়িত মঙ্গল বা চাঁদে প্রাণ খোঁজার প্রকল্পও ৷
যত দূর জানা যায়, পৃথিবীতে প্রথম জীবন্ত প্রাণী এক সায়ানো-ব্যাকটেরিয়ার, যার জন্ম প্রায় চার বিলিয়ন বা চারশ কোটি বছর আগে। এই তথ্য জানা যায় অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া এক ফসিল বা জীবাশ্ম থেকে। কার্বনভিত্তিক কোষ থেকেই এখানে প্রাণের সূত্রপাত ঘটে।
ডারউইনের থিওরি যা বলছে
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন ভাবতেন, একটি উষ্ণ পুকুরে অজৈব রাসায়নিকের জৈব রাসায়নিক হয়ে ওঠা থেকেই প্রাণের শুরু। এই পুকুরেই কোষ গড়তে শুরু হয় ও সেটাই সায়ানো-ব্যাকটেরিয়ার উৎস।
তবে এসবই থিওরি, পুরো প্রমাণিত সত্য নয়৷ ইটালির ট্রেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী সিলভিয়া হলার বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে সেই সময়ের অনেক কিছুই এখনও রহস্যময়৷ কোন ঘটনার পর কী হয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ যেমন হাইড্রোথারমাল ভেন্ট থেকে উষ্ণ পুকুর হয়ে অন্যান্য জায়গায় কীভাবে হলো সব, তা এখনও অস্পষ্ট৷''
হাইড্রোথারমাল ভেন্ট থেকে জীবন?
পানির নিচে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে যে উষ্ণ জলপ্রপাত জন্মায়, তাকেই বলে হাইড্রোথারমাল ভেন্ট৷ সিলভিয়া হলার এমন ভেন্টের প্রতিরূপ পরীক্ষাগারে বানিয়েছেন৷ এই ধরনের ‘রাসায়নিক বাগান' পৃথিবীর পরিবেশের নকল করতে সাহায্য করে, যাতে করে কীভাবে প্রাণের সৃষ্টি হলো, তা জানা যায়৷
পিএনএএস জার্নালে এবিষয়ে তার গবেষণার কাজ প্রকাশিত হয়েছে৷ তিনি জানান যে এই ভেন্টগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ অজৈব রাসায়নিকের জৈব হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে। এই ভেন্টগুলির অজৈব দেওয়ালে আটকা পড়ে চর্বিযুক্ত জৈব কণা, যা তারপর ছোট ছোট ভেসিকল বা ব্যাগের মতো আকার ধারণ করে। এই ভেসিকলই কোষ গঠনের প্রথম ধাপ।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ নিক লেন এই গবেষণার সাথে যুক্ত না থাকলেও, তিনি এই গবেষণার ফলাফলকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। তাঁর মতে, কীভাবে প্রোটো সেল থেকে প্রাণীর জন্ম হয়, তা জানতে এই গবেষণা খুবই সাহায্য করবে।
এত গবেষণা, তবুও কেন রহস্য?
হলারের ল্যাবে যে ভেসিকলগুলি তৈরি করা হয় তাকে এখনই ‘প্রাণের উৎস' বলতে চান না অনেকে৷ কারণ প্রাণীর সাথে সম্পর্কিত বহু মৌলিক কাজ এই ভেসিকল করতে পারেনা, যেমন নড়াচড়া, প্রজনন, অনুভূতি, পুষ্টি, শ্বাস-প্রশ্বাস বা আকৃতির বেড়ে ওঠা।
এমন ভেসিকল থেকে আজকের মানুষ বা জন্তু হবার জন্য কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, বলেন লেন। ডিএনএ থেকে প্রোটিন তৈরি হওয়াটাই আসল। এই পর্যায়কে ঘিরেই যত অস্পষ্টতা।
এ ছাড়া পৃথিবীর বাইরে মহাকাশেও লুকিয়ে রয়েছে প্রাণের উৎসের নানা দিক, যা এখনও আমাদের অজানা। এখনও হাইড্রোথারমাল ভেন্টের ভেসিকলের মতো কিছু মহাকাশে পাওয়া যায়নি। অথচ মহাকাশজুড়ে জৈব কণার ছড়াছড়ি।
এক পক্ষের বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার হয় মহাকাশ থেকে আসা উল্কা পিণ্ডের গায়ে লেগে থাকা কোনো অতিক্ষুদ্র প্রাণীর মাধ্যমে। এই চিন্তার নাম প্যানস্পার্মিয়া, যার পক্ষে আছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। পৃথিবীতে প্রাণের জন্ম কীভাবে তা এখনও স্পষ্ট না হলেও পৃথিবীর বাইরেও যে থাকতে পারে প্রাণ, তা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।