আফগান রীতি ভাঙলেন নারীরা
আফগানিস্তানের রীতি অনুযায়ী কোনো মরদেহ পুরুষরা বহন করে। দাফন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও করে পুরুষরা। এই প্রথম কাবুলের একদল নারী এই রীতি ভাঙল। গণপিটুনিতে নিহত ফারখুন্দা (২৭) নামের এক আফগান নারীকে গত শনিবার দাফন করা হয়। এ সময় মরদেহ বহন করেছে কাবুলের কিছু নারী।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে কোরআন পোড়ানোর অভিযোগে সম্প্রতি ফারখুন্দাকে পিটিয়ে হত্যা এবং তাঁর মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা। পরে সরকারি তদন্তে জানা যায় ওই নারীকে ভুলক্রমে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
ফারখুন্দাকে পিটিয়ে হত্যা ও তাঁর মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দৃশ্য ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।
ভিডিওতে দেখা যায়, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের শাদ-দু-শামশারিয়া মসজিদ ও মাজারের কাছে একদল ক্ষুব্ধ মানুষ লাঠি, পাথর হাতে ফারখুন্দার ওপর হামলা চালায়। তাঁকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, লাথি মেরে হত্যার সময় সেখানে থাকা আফগান পুলিশ কর্মকর্তারা ছিল নীরব দর্শক। পুলিশের এই দায়িত্বহীনতারও ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
অফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ফারখুন্দাকে হত্যার ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে ঘটনার তদন্তকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মাদ জহির বলেন, ফারখুন্দা কোরআন পুড়িয়েছেন এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় আট পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৩ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত শনিবার ফারখুন্দার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আসা নারী অধিকারকর্মীরা তাঁর মরদেহের কফিন বহন করে। তাঁর লাশ দাফনের আগে কবরে শুয়ে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন এক নারী। ওই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আরো উপস্থিত ছিল কয়েক শ নারী-পুরুষ। তারা ফারখুন্দার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
নিহত ফারখুন্দার ভাই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তিনি ধর্মীয় শিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
আফগান নারীদের শিক্ষিত এবং অধিকার সচেতন করতে কয়েক লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে কর্মসূচি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখনো দেশটির নারীরা প্রচণ্ড বৈষ্যমের শিকার হয়। আর নারী নির্যাতনকারীদের অনেকেই পার পেয়ে যায়।